Advertisement
E-Paper

রোজ ভ্যালি তদন্ত: কাকে কবে কত, সূত্র গৌতম কুণ্ডুর ডায়েরিতে

সিবিআই অফিসারেরা রাজারহাটের ডিএলএফ বিল্ডিং-এ রোজ ভ্যালির অফিসের সিন্দুক থেকে উদ্ধার করেছিলেন সংস্থার চেয়ারম্যান গৌতম কুণ্ডুর নিজের হাতে লেখা সেই ডায়েরি। সিবিআই সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত তদন্তে বেশ ‘কাজে’ দিচ্ছে কয়েক মাস আগে উদ্ধার হওয়া সেই ডায়েরি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৮
ব্যাঙ্কশাল কোর্টে গৌতম কুণ্ডু। শুক্রবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে গৌতম কুণ্ডু। শুক্রবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

হিসেবের বাইরে কাকে কবে কত টাকা দিয়েছেন, তা রীতিমতো সন-তারিখ দিয়ে লিখে রেখেছিলেন ডায়েরিতে!

সিবিআই অফিসারেরা রাজারহাটের ডিএলএফ বিল্ডিং-এ রোজ ভ্যালির অফিসের সিন্দুক থেকে উদ্ধার করেছিলেন সংস্থার চেয়ারম্যান গৌতম কুণ্ডুর নিজের হাতে লেখা সেই ডায়েরি। সিবিআই সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত তদন্তে বেশ ‘কাজে’ দিচ্ছে কয়েক মাস আগে উদ্ধার হওয়া সেই ডায়েরি। তার বিভিন্ন পাতা থেকে যে সব নাম উঠে এসেছে, তার মধ্যে এক সময়ের ডাকসাইটে সিপিএম নেতা, রাজ্যের মন্ত্রী, সাংবাদিক, সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তি, টলিউড এমনকী বলিউ়ডের অভিনেতা-অভিনেত্রীও রয়েছেন। রোজ ভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূলের দুই সাংসদ তাপস পাল এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও ওই ডায়েরি থেকেই পাওয়া গিয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু ডায়েরিতে নাম থাকলেই কি তিনি অভিযুক্ত হতে পারেন? গোয়েন্দাদের যুক্তি, গৌতম যখন ডায়েরি লিখেছেন, তখন তিনি নিশ্চয় ভাবেননি যে কোনও এক দিন তাঁর এই হাল হবে এবং এই ডায়েরি সিবিআইয়ের হাতে পড়বে। ফলে কাউকে ফাঁসানোর জন্য তিনি নাম লিখে রাখবেন, এমনটা সম্ভবত নয়। তা ছাড়া, অনেকেই এ ভাবে প্রতিদিনের হিসেব লিখে রাখেন।

যে নামগুলি ডায়েরিতে ছিল, সত্যিই তাঁরা টাকা নিয়েছিলেন কি না, তা যাচাই করার জন্য এক অভিনব পন্থা নেন তদন্তকারীরা। কী রকম? উদাহরণ দিতে গিয়ে তদন্তকারী এক অফিসার জানিয়েছেন, ধরা যাক, গৌতম কুণ্ডুর ডায়েরিতে কোনও নির্দিষ্ট দিনে কোনও এক নেতার নামের পাশে ১ কোটি টাকা লেখা ছিল। ওই টাকা যে নগদেই দেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত তদন্তকারীরা। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘ওই পরিমাণ নগদ টাকা গৌতমের ঘরে বা অফিসে রাখা ছিল, এমন কিন্তু নয়।’’ তা হলে? তদন্তকারীরা ধরে নেন, যে দিনে নেতাকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে বলে ডায়েরিতে লেখা আছে, সেই দিন বা তার আগের দিন দুয়েকের মধ্যে ওই টাকা সংস্থার রোজগার থেকে সরানো হয়েছিল। এ বার ওই তিন দিনে সংস্থার যাবতীয় হিসেব খুলে বসা হয়।

তদন্তকারীরা জানান, ওই তিন দিনে যাঁরা বিভিন্ন খাতে টাকা পেয়েছেন বলে রোজ ভ্যালির হিসেবের খাতায় দেখানো ছিল, একে একে তাঁদের সবাইকে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁদের সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, এর মধ্যে কয়েক জন ওই ক’দিনে রোজ ভ্যালি থেকে কোনও টাকাই পাননি! সিবিআই হিসেব করে দেখে, যে ক’জন টাকা পাননি, তাঁদের মিলিত হিসেব ১ কোটি টাকা! এ ভাবেই দুই আর দুইয়ে চার কষছেন তদন্তকারীরা।

কিন্তু তাতেও কি প্রমাণ হয় যে, ওই টাকা ওই নেতাই নিয়েছেন?

অফিসারেরা জানিয়েছেন, এ ভাবে তথ্য জোগড় করার পাশাপাশি রোজ ভ্যালি কর্মীদেরও জেরা করে তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করা হচ্ছে। বয়ান রয়েছে খোদ গৌতম কুণ্ডুর। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হয়ে দক্ষিণ কলকাতায় গৌতম যে বহুতলে থাকতেন, সেখানে গিয়ে দারোয়ান-সহ কয়েক জনকে জেরা করা হচ্ছে। গৌতমের আবাসনের দারোয়ানকে একাধিক বার জেরা করে জেনে নেওয়া হয়েছে, ডায়েরিতে নাম থাকা প্রভাবশালীদের মধ্যে কারা গৌতমের ফ্ল্যাটে আসতেন। আবার নাম পাওয়া প্রভাবশালীদের প্রতিবেশীদের থেকেও জানার চেষ্টা হয়েছে, সেখানে গৌতমের যাতায়াত ছিল কি না। কিন্তু প্রতিবেশীরা গৌতম কুণ্ডুকে চেনেন? তদন্তকারীরা বলছেন, রোজ ভ্যালি কর্ণধার মার্সিডিজ, রোলস রয়েসের মতো চোখধাঁধানো বিলাসবহুল গাড়ি চড়ে ঘোরাফেরা করতেন। এবং ওই ধরনের গাড়ি চড়ে আসা কাউকে মনে রাখাও সহজ। এই অঙ্কেই প্রতিবেশী এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তথ্য জোগাড় করছেন তদন্তকারীরা। কথা বলা হয়েছে রাজারহাটে গৌতমের হোটেলের কর্মীদের সঙ্গেও। কারণ সিবিআইয়ের মতে, বেশ কিছু লেনদেন ওই হোটেলে বসেই হয়েছে। ডায়েরির পাতায় নাম রয়েছে, এমন সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খতিয়ে দেখছে সিবিআই।

Gautam Kundu Rose Valley Rose Valley investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy