Advertisement
E-Paper

শতবর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে বাঙালির জন্য নিয়ম শিথিল সঙ্ঘের, নীলবাড়ির জন্যই মহালয়ায় মহাজমায়েত?

পশ্চিমবঙ্গে অনেকেই সঙ্ঘের এই সিদ্ধান্তের মধ্যে ‘রাজনৈতিক কৌশল’ দেখছেন। ২০২৬ সালে বঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি সম্পর্কে সঙ্ঘের যে ‘নিজস্ব উদ্বেগ’, তার প্রেক্ষিতে এ বারের নির্বাচনে বিজেপির পথ সুগম করতে আরএসএস সর্বশক্তি প্রয়োগ করার রাস্তায় হাঁটবে বলেই খবর।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৫ ০৮:৫৬
Share
Save

বাঙালির জন্য নিয়ম শিথিল করছে আরএসএস! শতবর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জমায়েত গোটা দেশে যে দিন আয়োজিত হবে, ‘উৎসবরত’ পশ্চিমবঙ্গকে সে দিন ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ)। বাংলায় এসেই আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন বলে বাংলার প্রতি সঙ্ঘের ‘শ্রদ্ধা’ সব সময়েই ‘বিশেষ’ বলে সঙ্ঘ পদাধিকারীদের দাবি। কিন্তু ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এ বছর বাঙালির বর্ষপঞ্জির বিষয়ে সঙ্ঘ নেতৃত্ব বিশেষ ‘যত্নশীল’ কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

বিজয়া দশমীতে সরসঙ্ঘচালকের ভাষণ চিরকালই আরএসএস-এর কাছে বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। বিগত বছরের সঙ্ঘীয় গতিবিধির বিশ্লেষণ থাকে সে ভাষণে। আসন্ন সময়ে সঙ্ঘের নীতিগত দিশা কী হতে চলেছে, তারও স্পষ্ট বিবৃতি থাকে। সঙ্ঘপ্রধানের এই বাৎসরিক ভাষণকে কেন্দ্র করে গোটা দেশেই স্বয়ংসেবকদের সংগঠিত জমায়েত হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বরাবরই বিজয়া দশমীতে ওই আয়োজন করা কিছুটা কঠিন হত। কারণ, স্বয়ংসেবকরাও সে সময়ে নিজের নিজের এলাকার পুজো এবং বিজয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

তবে অন্য বছরের সঙ্গে এ বছরের তফাত রয়েছে। কারণ, গত বছর আরএসএস শতবর্ষে পদার্পণ করেছে। এ বছরই সঙ্ঘের শতবর্ষ পূর্তি হচ্ছে। এই মাইলফলকে পৌঁছে বিজয়া দশমীতে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের ভাষণ ভিন্ন তাৎপর্যের হবে বলে আরএসএস সূত্রের দাবি। কারণ, আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার নিজেই চাননি যে, আরএসএস-কে শতবর্ষ উদ্‌যাপন করতে হোক। তার আগেই সঙ্ঘ তার উদ্দেশ্য সাধন করুক, এই ছিল হেডগেওয়ারের ইচ্ছা। দেশজোড়া ‘সাংস্কৃতিক একাত্মতা’ প্রতিষ্ঠার সেই লক্ষ্যে এখনও পৌঁছোনো যায়নি বলেই সঙ্ঘ নেতৃত্ব মনে করেন। কিন্তু শতবর্ষে পৌঁছেও যেহেতু তা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি, সেহেতু সঙ্ঘ তার কর্মপদ্ধতিতে কিছু বদল আনছে। সামাজিক গতিবিধি অনেকখানি বাড়িয়ে সংগঠনকে পুরোপুরি সমাজে মিশিয়ে দিতে চাইছে। ২০২৫ সালের ‘বিজয়া দশমী প্রবোধন’ থেকে ভাগবত সেই কর্মকাণ্ডের রূপরেখা গোটা দেশের স্বয়ংসেবকদের সামনে স্পষ্ট করবেন বলে খবর। তাই অন্যান্য বছরে পশ্চিমবঙ্গে সঙ্ঘের বিজয়া দশমী কর্মসূচি নমো-নমো করে সারা গেলেও এ বার সেই ছাড় পাওয়া কঠিন ছিল।

কিন্তু তবু ছাড় মিলছে! আরএসএস সূত্রে জানা যাচ্ছে, সরসঙ্ঘচালকের ভাষণ সে দিন সকলকেই শুনতে হবে। কিন্তু সেই ঘণ্টাখানেক সময় দিলেই চলবে। বিজয়া দশমীতে গোটা সঙ্ঘ পরিবারকে একত্রিত করে জমায়েত বা আনুষঙ্গিক কর্মসূচি পশ্চিমবঙ্গের স্বয়ংসেবকদের করতে হবে না বলে কেশব ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ‘বিকল্প’ দিন হিসেবে ধার্য হয়েছে মহালয়া। বঙ্গ আরএসএস তিনটি প্রাদেশিক (প্রান্ত) কমিটিতে বিভক্ত— উত্তরবঙ্গ, মধ্যবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ। তিনটি প্রদেশেই সঙ্ঘের জমায়েত হবে মহালয়ায়। সঙ্ঘের অন্তত ৫২টি সর্বভারতীয় স্তরের সহযোগী সংগঠন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তার সঙ্গে রয়েছে কয়েকটি আঞ্চলিক স্তরের সহযোগী সংগঠনও। শতবর্ষের জমায়েতে সেই সব সংগঠনকেও একসঙ্গে ডাকা হচ্ছে। অর্থাৎ বিএমএস, সংস্কার ভারতী, শিক্ষণ মণ্ডল, সহকার ভারতী, শৈক্ষিক মহাসঙ্ঘ, সীমান্ত চেতনার মতো সংগঠনগুলিকে এ বছর আর আলাদা আলাদা কর্মসূচি, জমায়েত বা পথ সঞ্চলনের আয়োজন করতে বলা হচ্ছে না। গোটা সঙ্ঘ পরিবারের অভিন্ন জমায়েতের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেই আরএসএস সূত্রের খবর। বিজেপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে যাঁরা স্বয়ংসেবক, তাঁরাও রাজ্যের নানা প্রান্তে আয়োজিত সেই সব কর্মসূচিতেই মহালয়ার দিন যোগ দেবেন।

শতবর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতেও বাংলার জন্য এই ‘ছাড়’ কেন? আরএসএসের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত প্রচার প্রমুখ বিপ্লব রায় বলছেন, ‘‘বাংলার বিষয়ে সঙ্ঘ নেতৃত্ব চিরকালই বিশেষ শ্রদ্ধাশীল। কারণ, ডাক্তারজি (হেডগেওয়ার) কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পড়তে এসেই স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় হয়েছিলেন। অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পুলিনবিহারী দাসের আখড়ায় প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেছিলেন।’’ বিপ্লবের কথায়, ‘‘ওই আখড়াতেই ডাক্তারজি লাঠিখেলা শেখেন। সেই লাঠিই তিনি নাগপুরে নিয়ে যান। সংঙ্ঘের স্বয়ংসেবকদের হাতে গোটা দেশে যে লাঠি দেখা যায়, সেটা বাংলা থেকে ডাক্তারজির হাতে নেওয়া ওই লাঠিরই প্রতীক।’’ সেই কারণেই বাঙালির ভাবাবেগ বা বাংলার সংস্কৃতির প্রতি সঙ্ঘ বরাবর ‘বিশেষ যত্নশীল’ বলে আরএসএস মুখপাত্রের দাবি।

পশ্চিমবঙ্গে অনেকে অবশ্য সঙ্ঘের এই সিদ্ধান্তের মধ্যে ‘রাজনৈতিক কৌশল’ দেখছেন। ২০২৬ সালে বঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি সম্পর্কে সঙ্ঘের যে ‘নিজস্ব উদ্বেগ’, তার প্রেক্ষিতে এ বারের নির্বাচনে বিজেপির পথ সুগম করতে আরএসএস সর্বশক্তি প্রয়োগ করার রাস্তায় হাঁটবে বলেই খবর। আপাতত তাই বঙ্গে সঙ্ঘের প্রতিটি কর্মসূচির রূপরেখাই সে কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে বলে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। শতবর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জমায়েতটির ক্ষেত্রেও তাই বাঙালিকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। বাঙালির ভাবাবেগ, উৎসব এবং সংস্কৃতিকে সঙ্ঘ পরিবার কতটা গুরুত্ব দেয়, সেই বার্তা যাতে কিছুটা চারিয়ে যায়, এটি তারই চেষ্টা বলে অনেকে মনে করছেন।

মহালয়ার দিন পশ্চিমবঙ্গে সঙ্ঘ পরিবার একত্রিত হয়ে কী ধরনের কর্মসূচি পালন করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সঙ্ঘ সূত্রে জানা যাচ্ছে, জুন মাসের শেষ দিকে আরএসএস-এর প্রাদেশিক কমিটিগুলি বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাইয়ে সর্বভারতীয় স্তরের বৈঠক হবে। সেখানেই কর্মসূচি তথা অনুষ্ঠানের রূপরেখায় চূড়ান্ত সিলমোহর পড়বে।

RSS BJP centenary celebration Mohan Bhagwat Mohan Bhagwat Speech Vijaya Dashami Mahalaya West Bengal Politics

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।