Advertisement
E-Paper

মেদিনীপুরের পর ঠাকুরনগরেও চরম বিশৃঙ্খলা, মোদীর সভায় আহত কয়েক জন

শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরেরযে মাঠে মোদীর সভার আয়োজন করেছিল অখিল ভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘ, তা একেবারে কানায় কানায় ভরে উঠেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:৪৬
চলছে হুড়োহুড়ি। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

চলছে হুড়োহুড়ি। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

সিঁদুরে মেঘ দেখতে পেয়েছিলেন। তাই, ভাষণ দীর্ঘায়িত না করেই ঠাকুরনগরের মঞ্চ ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

ভাষণের সুর তখন সবে চড়ায় তুলেছেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধছেন। তখনই মোদীর নজরে আসে, সামনের ভিড়ে ভরা মাঠ কেমন যেন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ছে। শান্ত করার চেষ্টা করলেন। খুব একটা কাজ হল না। ফের ভাষণ শুরু করলেন তিনি। কিন্তু, মাঠ জুড়ে বিশৃঙ্খলতা বাড়তেই থাকে। আবারও শান্ত করার চেষ্টা। কিন্তু,শেষমেশ অশান্ত সেই ভিড়ের কারণেই মাত্র ১৮ মিনিটের মাথায় তাড়াহুড়ো করে ভাষণ শেষ করে দিলেন মোদী।

শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে যে মাঠে মোদীর সভার আয়োজন করেছিল অখিল ভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘ, তা একেবারে কানায় কানায় ভরে উঠেছিল। কার্যত তিলধারণের জায়গা ছিল না। মোদী ভাষণ শুরু করার পরেও মাঠে লোক ঢোকার চেষ্টা হতে থাকে। ফলে,বাড়তেই থাকে চাপ। একটা সময় দেখা যায়,ভিড়ের চাপে মাঠের ভিতরে চোঙা লাগানো শালবল্লার খুঁটি উপড়ে হেলে পড়েছে জনতার গায়ে। মোদীকে বার বার বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনারা এ রকম করবেন না।’’

বেসামাল জনতা।

আরও পড়ুন: ঠাকুরনগরে দিদিকে বিঁধলেন মোদী, চরম বিশৃঙ্খলায় দ্রুত শেষ করলেন বক্তৃতা​

চূড়ান্ত ধাক্কাধাক্কিও হুড়োহুড়ির মধ্যেই মোদীজি ভাষণ শুরু করেন। তার মধ্যেই ভিড়টা মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ভিড়ের চাপে মঞ্চের বাঁ দিকে বসে থাকা জনতার একটা অংশচেয়ার সরাতে শুরু করে। কেউ কেউ চেয়ার ছুড়তেও থাকেন। মঞ্চ থেকে ভিড়ের এমন বেসামাল অবস্থা দেখে উদ্বীগ্ন হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ফের ভাষণ থামিয়ে জনতাকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। সঙ্গে মমতাকে খোঁচা দিতে জুড়ে দেন, ‘‘এই ভিড় দেখে বুঝতে পারছি, দিদি কেন হিংসার রাস্তা নিচ্ছেন।’’ কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি।এর পর কার্যত বাধ্য হয়েই একেবারে তাড়াহুড়ো করে ভাষণ শেষ করেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য গোটা মাঠটিকে পাঁচটি ভাগেভাগ করে জনতাকে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মাঠের সামনের দিকে পাতা ছিল চেয়ার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার পর থেকে পিছন থেকে ভিড়ের চাপ বাড়তে থাকায় তা এগোতে থাকে সামনের দিকে। তখনই মঞ্চের সামনের দিকে পাতা চেয়ার উঠিয়েফেলতে থাকে জনতা। শুরু হয় হুড়োহুড়ি এবং চেয়ার ছোড়া। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে ওঠে। তখনও মাঠের বাইরের রাস্তায় প্রবল ভিড়। সেই ভিড় মাঠের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে।

অভিযোগ উঠছে, মাঠের ভিতরে ভিড় সামলানোর মতো পর্যাপ্ত পুলিশ কর্মী ছিলেন না। হাতে গোনা কয়েক জন কনস্টেবল ছাড়া মাঠে কোনও অফিসার পদমর্যাদার পুলিশ কর্মীকেও দেখা যায়নি। মোদী মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার পরে উচ্ছৃঙ্খল জনতা ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে মঞ্চের সামনে নিরাপত্তা বলয়ের ‘ডি জোন’-এ। তখনই মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী প্রস্থান করেছেন। ভাষণ এখনও চলবে। আপনারা শান্ত হয়ে বসে পড়ুন।’’

আরও পড়ুন: পুলিশি পেশায় শ্রদ্ধা হারিয়েই কি চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন ওঁরা!​

পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে এ দিন মাঠের দায়িত্বে থাকা রাজ্য পুলিশের এক কর্তার দাবি, গোটাটাই আয়োজকদের ত্রুটি।তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপি-র সভার আগে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসপিজি, আয়োজকদের প্রতিনিধি দল এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে বৈঠক হওয়াটা দস্তুর। এই সভার আগেও তেমন বৈঠক হয়েছে। সেখানে আয়োজকদের তরফে সভায় যত লোক হবে বলে জানানো হয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি ভিড় হয়েছে এ দিন। শুধু তাই নয়, আয়োজকদের তরফে স্বেচ্ছাসেবকরাও ভিড় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে কোনও সমন্বয় রাখেননি বলে তাঁর অভিযোগ।

এর আগে গত বছরের ১৬ জুলাই মেদিনীপুর শহরে ‘কৃষক কল্যাণ সমাবেশে’ ভাষণ দিতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বর্ষার দিনে জনতার মাথা আড়়াল দেওয়ার জন্য পুরো মাঠ সে দিন মুড়়ে ফেলা হয়েছিল সামিয়ানা খাটিয়ে। লোহার কাঠামোর উপরে প্লাস্টিকের চাদর ছিল। কিন্তু আচমকাই বিশৃঙ্খল ভিড়ের কারণে সেই ছাউনিরই একাংশ ভেঙে পড়়ে। ওই লোহার কাঠামোর আঘাতে এবং হুড়়োহুড়়ির চোটে আহত হন ২৪ জন মহিলা-সহ ৯০ জন। সে দিন আতঙ্কিত মানুষ যখন প্রাণের ভয়ে কাদা মাঠে দৌড়়চ্ছেন, মাত্র এক মিনিট বিরতি নিয়ে আগাগোড়়া বক্তৃতা চালিয়ে গিয়েছিলেন মোদী। এ দিন সেই পথে হাঁটেননি আর তিনি। পরিস্থিতি বেসামাল দেখে তিনি ভাষণ থামিয়ে মঞ্চ থেকে নেমেযান।

এ দিনের সভা শেষে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চটি-জুতো-চেয়ার। সভায় আসা অনেকেই অনেককে খুঁজে পাচ্ছেন না তখন। মাইকে বারে বারে ঘোষণা করা হচ্ছে। মোদী তত ক্ষণে হেলিকপ্টারে উড়ে গিয়েছেন দুর্গাপুরের উদ্দেশে।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

PM Modi's Rally Thakurnagar West Bengal Ruckus BJP TMC Mamata Banerjee Matua Mahasangha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy