E-Paper

সব চেষ্টাই জলে, ইদে বাড়ি ফিরতেই গ্রেফতার অভিযুক্ত

সিম কার্ড ব্যবহার না করলেও কার নামে ওই মোবাইল নম্বরটি রয়েছে, তা দেখে অভিযুক্তের খোঁজ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সেখানেও দেখা দেয় বিপত্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪৯
গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত মূল অভিযুক্ত সাদ্দাম আলম।

গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত মূল অভিযুক্ত সাদ্দাম আলম। —প্রতীকী চিত্র।

বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ালেও শেষমেশ সব চেষ্টাই বিফলে গেল। ইদে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে আসাই কাল হল তার। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল চারু মার্কেট থানা এলাকার একটি আবাসনে পরিচারককে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সাদ্দাম আলম। লালবাজার জানিয়েছে, খুনের পরে নিজের মোবাইলের সিম কার্ড ফেলে দিয়েছিল সে। এমনকি, পুলিশ যাতে খোঁজ না পায়, তার জন্য নিহতের মোবাইলটিও চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়েছিল ঝোপের মধ্যে। এর পাশাপাশি, পরিবারের কারও সঙ্গেই যোগাযোগ রাখেনি সাদ্দাম। ফলে, তদন্তে নেমে কার্যত শূন্য থেকে শুরু করতে হয় পুলিশকে।

তদন্তকারীরা জানান, এমন ক্ষেত্রে সিম কার্ড ব্যবহার না করলেও কার নামে ওই মোবাইল নম্বরটি রয়েছে, তা দেখে অভিযুক্তের খোঁজ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সেখানেও দেখা দেয় বিপত্তি। জানা যায়, সাদ্দাম ভুয়ো নথি দিয়ে সিম কার্ড নিয়েছিল। ফলে, মোবাইলের সূত্রে অভিযুক্তের খোঁজ প্রথমে না মিললেও ওই নম্বর থেকে পাওয়া যায় সাদ্দামের স্ত্রীর ফোন নম্বর। সেই সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে বারুইপুর থানা এলাকার মল্লিকপুরের ঠিকানা পান গোয়েন্দারা। কিন্তু এর পরেও সাদ্দামের সন্ধান পেতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয় পুলিশকে। এক অফিসার বলেন, ‘‘মল্লিকপুরের ঠিকানার খোঁজ পেলেও সাদ্দামকে ধরা যাচ্ছিল না। তবে আমাদের মনে হয়েছিল, ইদের দিন সে বাড়িতে আসতে পারে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে। আর ঠিক সেটাই হয়েছে।’’

ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, নির্দিষ্ট কোনও কাজ নয়, সাদ্দাম বিভিন্ন কেটারিং সংস্থায় কাজ করত। কিন্তু ইদের আগে তার হাতে কাজ ছিল না। এ দিকে, সপরিবার ইদ পালন করতে হলে টাকার দরকার। সেই টাকা উপার্জনের জন্য এক আত্মীয়ের কথা মতো এলজিবিটিকিউ-দের একটি ডেটিং অ্যাপের সদস্য হয় সাদ্দাম। সে দাবি করেছে, এর পরে শনিবারই ছিল তার প্রথম ‘কাজ’। অবিনাশ বাউড়ি নামে ওই পরিচারক সাদ্দামকে চারু মার্কেট এলাকার ওই আবাসনে ডেকে পাঠান। সেখানে দু’জনের মধ্যে পাঁচ হাজার টাকায় রফা হয়।

তদন্তকারীরা জানান, পরে অবিনাশ টাকা দিতে অস্বীকার করায় তার ও সাদ্দামের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর পরে ঘরের আলমারি খুলে তল্লাশি করতে শুরু করে সাদ্দাম। তখন অবিনাশ জানান, ওই আলমারিটি গৃহকর্তার। সাদ্দাম যেন হাত না দেয়। জেরায় সাদ্দাম দাবি করেছে, এর পরেই অবিনাশ একটি ছুরি নিয়ে তার উপরে চড়াও হন। পাল্টা সে ওই ছুরি নিয়ে হামলা চালায় অবিনাশের উপরে। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।

সাদ্দাম আরও দাবি করেছে, অবিনাশকে খুনের পরে সে ওই আলমারি বা ঘর থেকে কিছু পায়নি। তবে, অবিনাশের কাছে থাকা ৭০০ টাকা হাতিয়ে নেয় সে। এর পরে সাদ্দাম প্রথমে ট্যাক্সিতে পার্ক সার্কাস স্টেশনে আসে। সেখান থেকে ট্রেনে রওনা দেয় মল্লিকপুরের দিকে। পুলিশ জেনেছে, ট্রেনে যাওয়ার পথেই সে নিজের মোবাইলের সিম কার্ড এবং অবিনাশের মোবাইলটি ফেলে দেয়। তবে, ওই রাতে মল্লিকপুরে থাকেনি অভিযুক্ত। পুলিশ আসতে পারে আঁচ করে সে আবার পার্ক সার্কাসে ফিরে সেখানেই রাত কাটায়। পরদিন, অর্থাৎ রবিবার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু, সোমবার ইদের দিন ফের সাদ্দাম মল্লিকপুরে আসে। আর তখনই ধরা পড়ে যায়।

মঙ্গলবার সাদ্দামকে আলিপুর আদালত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। এক পুলিশকর্তা জানান, ধৃতকে আরও জেরা করে তার দাবির সত্যতা খতিয়ে দেখা হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Charu Market police investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy