মমতার হাত ধরে তৃণমূলে গিয়ে ফের টিকিট পেয়েছিলেন সাহিনা মমতাজের শ্বশুর।— ফাইল টিত্র।
তাঁর ফিকে হয়ে আসা অতীত হুডখোলা জিপে আচমকা বর্তমান হয়ে উঠেছে। তিনি রোদে পুড়ছেন, ঝোড়ো হাওয়ায় হেলে পড়ছেন, সন্ধ্যার স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজেও যাচ্ছেন কখনও। তাঁর বৌমা সাহিনা মমতাজ, প্রাণপাত চেষ্টা করছেন, ‘‘চিনতে পারছেন না, ইনি আমার আব্বা, আমার শ্বশুর গো!’’ তাতে কী হল?
সাহিনা অতীতে ফিরে যাচ্ছেন। যুক্তফ্রন্টের আমলে সাতাশি দিনের কৃষিমন্ত্রী গো! কপালের বলিরেখা ভেদ করে লোলচর্ম বৃদ্ধ তাঁকে চিনে বেবাক অবাক হচ্ছেন। বাকিদের কপালে তবু অস্পষ্ট ভাঁজ। জিপ-ম্যাটাডোর নিদেনপক্ষে পায়ে হাঁটা মিছিলের ফ্যাকাসে প্ল্যাকার্ডে পথে পথে তবুও ঘুরছেন তিনি, যদি কেউ চিনে ফেলে!
সে কি আজকের কথা, অজয় মুখোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার কৃষিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। মুসলিম লীগের টিকিটে জয়ী সেই মানুষটা, নওদার আবাদি জমিতে তাঁর স্বপ্ন রোপন করে স্থানীয় ছেলেপুলেদের মাঝারি মানের খান কয়েক চাকরি দিয়ে বেশ একটা স্বপ্নের আবহ গড়ে দিয়েছিলেন, চিনতে পারছেন না?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
যাঁরা বিস্মৃত প্রায় সেই ১৯৬৯’এ ফিরে যেতে পারছেন, তাঁদের সামনে আবছা ভেসে উঠছে মুখটা। বাকিরা ফিরে আসছেন ‘৯১’র বিধানসভা নির্বাচনে, কংগ্রেসের টিকিটে জেতা বিধায়ক। নতুন দল গড়ার পরে যিনি মমতার হাত ধরে তৃণমূলে গিয়ে ফের টিকিট পেয়েছিলেন ২০০১-র নির্বাচনে। আর সে বারই তাঁকে হারিয়ে দিয়ে নওদার প্রায় পাকাপাকি বিধায়ক হয়ে উঠেছিলেন আবু তাহের খান। যাঁর দলবদলের জেরে ফের ভেসে উঠেছেন তিনি। সেই হারানো মানুষটাই এখন সাহিনার বুক ভরা ভরসা, ‘‘আমার শ্বশুরের চেনা পরিচিতি কি কম, এলাকায় সক্ক্লে চেনে গো!’’
দলের অন্দরে তবু প্রশ্নটা বিনবিন করছে, এমন জোর করে চিনিয়ে দিতে হচ্ছে যাঁকে তাঁকে নিয়ে প্রচারের কি দরকার ছিল? জেলা তৃণমূলের এক তাবড় নেতা বলছেন— ‘‘উত্তরটা বেশ কঠিণ বুঝলেন। আসলে সাহিনাকে প্রার্তী হিসেবে আবু তাহেরের তেমন পছন্দ ছিল না। তাঁর নিজের লোক দিতে না পারায় তাহের-পন্থীরা প্রশ্নটা তুলছেন।’’
কিন্তু আর যাই হোক, তিনি ‘সাত্তারের ব্যাটা (আবু হেনা)’ কিংবা ‘প্রণববাবুর পুত্র’ বলার মতো সক্কলের স্মরণযোগ্য কি? জেলা কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার পাল্টা টিপ্পনী, ‘‘আসলে তৃণমূলে এত কোন্দল, দলের অনেকেই তাঁর পাশে নেই, তাই তাঁর বিস্মৃত প্রায় শ্বশুরকে টেনে হিঁচড়ে পথে নামাতে হয়েছে সাহিনাকে!’’
এখনও মনে পড়ল না তাঁকে? আরে, তিনি নাসিরুদ্দিন খান, মুর্শিদাবাদ যাঁকে মন্টু খান নামেই চেনে গো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy