১৭ বছর কেটে গিয়েছে। ‘কথা রাখেনি’ জিন্দল গোষ্ঠী! ইস্পাত কারখানা শেষমেশ হলই না শালবনিতে। বছর দুয়েক আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি ঘোষণাতেও ফের ইস্পাত কারখানার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা-ও কত দূর এগিয়েছে, কেউই জানেন না। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে জিন্দল গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরির ঘোষণায় নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন শালবনিবাসী। তবে তাঁদের একটাই বক্তব্য, ‘‘অনেক প্রতিশ্রুতি হয়েছে। এ বারে কাজের কাজ হোক!’’
বুধবার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে শালবনিতে ৮০০ মেগাওয়াটের দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির ঘোষণা করেছে জিন্দল গোষ্ঠী। ওই গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দল জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পের জন্য ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। জিন্দলদের নতুন ঘোষণায় আশা ফিরেছে জমিদাতাদের মনেও। তবে এ বার তাঁরা খানিক সতর্কই। তাঁদের বক্তব্য, শীঘ্রই কাজ শুরু হোক।
‘ল্যান্ড লুজ়ার ওয়েলফেয়ার’ কমিটির সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতো বলেন, ‘‘এর আগেও অনেক বার বিনিয়োগের ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। আশা করি, এ বারের ঘোষণা নিশ্চয়ই বাস্তবায়িত হবে। বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার যে ঘোষণা করেছেন সজ্জন জিন্দল, তা অবিলম্বে বাস্তবায়িত করা হোক।’’
আরও পড়ুন:
২০০৮ সালের ২ নভেম্বর। শালবনির গাইঘাটার অদূরে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার শিলান্যাস করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ৪,৩০০ একর জমি নিয়েছিল জিন্দল গোষ্ঠী। প্রচুর কর্মসংস্থানের আশায় বুক বেঁধেছিলেন জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা। কিন্তু ওই দিনই শালবনি থেকে মেদিনীপুরে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটে। একই কনভয়ে ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানও। ভাদুতলার অদূরে কলাইচন্ডী খালের উপর মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের কবলে পড়ে। মাইন পেতেছিল মাওবাদীরা। বুদ্ধদেব বা রামবিলাস রক্ষা পেয়েছিলেন। ওই ঘটনার সূত্রেই তেতে উঠেছিল গোটা জঙ্গলমহল। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে জড়িতদের খোঁজে লালগড়ে হানা দিতে শুরু করে পুলিশ। মাওবাদী সন্দেহে ধরপাকড় শুরু হয়। এর প্রতিবাদেই গড়ে ওঠে ‘পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটি’। লালগড় আন্দোলনের সেই শুরু। তার পর রাজনীতির জল বহু দূর গড়িয়েছে। রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। তবে ইস্পাত কারখানা আর পায়নি শালবনি।
দীর্ঘ দিন জমি পড়েছিল। প্রায় এক দশক পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ১৩৫ একর জমির উপর একটি সিমেন্ট কারখানা তৈরি করে জিন্দল গোষ্ঠী। কিন্তু তা ইস্পাত-বঞ্চনার ক্ষত মেরামত করতে পারেনি। এর পর ২০২৩ সালে স্পেনের মাদ্রিদ শহর থেকে মেদিনীপুরে একটি ইস্পাত কারখানা তৈরির ঘোষণা করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ। তখন মনে করা হয়েছিল, সৌরভ শালবনিতেই ইস্পাত কারখানা গড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, এখনও পর্যন্ত কোনও কারখানাই গড়ে ওঠেনি সেখানে।
আরও পড়ুন:
জিন্দলদের ঘোষণায় এ বার কর্মসংস্থানের আশায় দিন গুনছেন শালবনির মানুষ। আশনাশুলির দীপক মাহাতো বলেন, ‘‘আর প্রতিশ্রুতি নয়, এ বার বাস্তবায়িত হোক। যে ভাবেই হোক, বিনিয়োগ হোক। বিনিয়োগ হলেই কর্মসংস্থান হবে।’’ কুলফেনির বাসিন্দা বিমল চলকরা বলেন, ‘‘আমাদের শুধু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। জমি দিয়েছিলাম ইস্পাত কারখানার জন্য। সেখানে হয়েছে সিমেন্ট কারখানা। হাজার হাজার কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। আশা রাখব, বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে জমিদাতাদের উপকারই হবে।’’
শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহ বলেন, ‘‘আমরাও তো আশাবাদী। বিপুল পরিমাণ জমি পড়ে রয়েছে। শালবনিতে কোনও অশান্তি নেই। শ্রমিক আন্দোলনও নেই।’’