Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সারদায় নয়া বাঁক, ব্যবসায়ী রমেশ গাঁধী ধৃত

বেশ ক’দিন বিরতি দিয়ে সারদা-কাণ্ডে ফের চমক! সোমবার দিনভর জেরার পরে রাতে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হলেন মিডিয়া-ব্যবসায়ী রমেশ গাঁধী। সিবিআইয়ের দাবি: সারদা থেকে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে ‘খাস খবর’ এবং ‘এনই বাংলা’ চ্যানেলের কর্তা রমেশকে ধরা হয়েছে।

সিজিও কমপ্লেক্সে রমেশ গাঁধী। সোমবার স্নেহাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

সিজিও কমপ্লেক্সে রমেশ গাঁধী। সোমবার স্নেহাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

বেশ ক’দিন বিরতি দিয়ে সারদা-কাণ্ডে ফের চমক! সোমবার দিনভর জেরার পরে রাতে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হলেন মিডিয়া-ব্যবসায়ী রমেশ গাঁধী।

সিবিআইয়ের দাবি: সারদা থেকে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে ‘খাস খবর’ এবং ‘এনই বাংলা’ চ্যানেলের কর্তা রমেশকে ধরা হয়েছে। আগে একই ধরনের অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন কুণাল ঘোষ ও সৃঞ্জয় বসু। মিডিয়া-কর্ণধার সৃঞ্জয় জামিন পেয়ে তৃণমূলের সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়েছেন। তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল অবশ্য এখনও জেলে।

এবং ঘটনাচক্রে এ দিনই কুণালের জামিন-আর্জি খারিজ করতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই-তদন্ত সম্পর্কে কড়া মন্তব্য করেছে। হাইকোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও শঙ্কর আচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, সিবিআইয়ের উচিত সারদা-তদন্ত শেষ করে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা। এর আগে আলিপুর আদালতও সিবিআইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিল, তদন্ত কতটা এগিয়েছে? অন্য দিকে সিবিআই-তদন্ত দ্রুত শেষ করার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সারদা-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়।

এমতাবস্থায় আইনজীবীদের একাংশের ধারণা, উপর্যুপরি চাপে পড়েই তদন্তকারীরা ফের নড়েচড়ে বসেছেন। যার পরিণতি রমেশ গাঁধীর গ্রেফতারি। যদিও এই ধারণা নস্যাৎ করে সিবিআই অফিসারদের দাবি, তদন্ত চলছে নিজস্ব গতিতে। প্রসঙ্গত, রমেশকে নিয়ে সারদা-কাণ্ডে এ পর্যন্ত মোট ১৫ জনকে গ্রেফতার করল সিবিআই।

আজ, মঙ্গলবার রমেশকে আদালতে পেশ করার কথা। তাঁর সঙ্গে সারদা-কাণ্ডের যোগাযোগ কোথায়?

সিবিআই-সূত্রের খবর: সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন ২০১৩-য় গা ঢাকা দেওয়ার আগে সিবিআই-কে লেখা চিঠিতে যাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, ষড়যন্ত্র, টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ এনেছিলেন, তাঁদের মধ্যে রমেশ গাঁধী অন্যতম। ২০১৪-র মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই সারদা-তদন্ত শুরু করে। ‘প্রভাবশালীদের’ সন্ধানে নেমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা যে নামগুলো হাতে পান, তার মধ্যেও ছিলেন রমেশ গাঁধী। ওই ব্যবসায়ী ছিলেন একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলের কর্তা। সিবিআইয়ের দাবি: ২০১১-১২ সালে চ্যানেলটি সুদীপ্ত সেনকে বিক্রি করায় মধ্যস্থতা করেছিলেন রমেশ। তখন প্রায় ১৫ কোটি টাকা সারদা থেকে নেওয়া হয়েছিল। যদিও সুদীপ্তর অভিযোগ, তিনি চুক্তি মতো টাকা দিলেও চ্যানেলটির মালিকানা কোনও দিন হাতে পাননি।

এখানেই শেষ নয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সারদা রিয়েলটির সঙ্গে কোটি কোটি টাকার আর্থিক চুক্তি করেছিলেন রমেশ, যার প্রমাণ মজুত রয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, সারদা-কর্তাকে অন্য রাজ্যে জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি কিনে দেওয়ার নামে রমেশ কয়েক কোটি টাকা নিয়েছিলেন। এমনকী, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সেবি’র সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করিয়ে দেওয়ার নাম করেও রমেশ গাঁধী তাঁর থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়েছিলেন বলে সম্প্রতি সিবিআই-কে নালিশ করেন সুদীপ্ত সেন।

সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তা জানান, এমন নানা অভিযোগ যাচাই করার পরে রমেশকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ওঁর বয়ানে বিস্তর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, সুদীপ্ত সব টাকা চেক মারফত দিয়েছিলেন রমেশকে, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঢাকুরিয়া শাখার অ্যাকাউন্ট থেকে। সুদীপ্তের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্টও খতিয়ে দেখা হয়।

আর তার পরেই রমেশ পড়েন সিবিআইয়ের জেরার মুখে। শুধু সিবিআই নয়। ইডি-ও রমেশকে বার কয়েক জেরা করেছে। শ্যামল সেন কমিশনেও ওঁর ডাক পড়েছিল একাধিক বার। তখন তাঁর কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সংশ্লিষ্ট সব নথি জমা দিতে পারেননি বলে সূত্রের খবর।

রমেশ গাঁধীকে ঘিরে বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। ১৯৯৪-১৯৯৬ সালের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে সিবিআই একাধিক মামলা রুজু করেছিল। ওই সময়ে তিনি এক বার গ্রেফতারও হয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE