Advertisement
E-Paper

চাপেই কোর্টে, দাবি সাক্ষীর

সাত্তোরের নির্যাতিতা বধূকে পুলিশের উপরে বোমা মারতে দেখার সাক্ষী হিসেবে মঙ্গলবার হাজির হতে হয়েছিল আদালতে। বুধবার তেমনই এক সাক্ষী দাবি করলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে, শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের চাপাচাপিতে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩১
নির্যাতিতার মুক্তির দাবিতে সিউড়িতে জেলাশাসকের দফতরের সামনে কংগ্রেসের অবস্থান। তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

নির্যাতিতার মুক্তির দাবিতে সিউড়িতে জেলাশাসকের দফতরের সামনে কংগ্রেসের অবস্থান। তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

সাত্তোরের নির্যাতিতা বধূকে পুলিশের উপরে বোমা মারতে দেখার সাক্ষী হিসেবে মঙ্গলবার হাজির হতে হয়েছিল আদালতে। বুধবার তেমনই এক সাক্ষী দাবি করলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে, শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের চাপাচাপিতে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হয়েছেন। নিজে ঘটনাস্থলে ছিলেন না। মহিলাকেও বোমা মারতে দেখেননি। ‘এবিপি আনন্দ’ এবং ‘আনন্দবাজার’-এর কাছে বীরভূমের সাত্তোরের ওই বাসিন্দার দাবি জানাজানি হতেই ‘সাক্ষী সাজানোয়’ তৃণমূল এবং পুলিশের দিকে তোপ দাগতে শুরু করেছেন বিরোধীরা।

তৃণমূলের অন্যতম জাতীয় সম্পাদক তথা বীরভূম জেলা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘না জেনে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা উচিত হবে না।’’ দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ফোন ধরেননি। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসের।

শনিবার তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল অফিসে বেশ কিছু বোমা মেলে। বিকেল পর্যন্ত তা উদ্ধার করেনি পুলিশ। সেই ক্ষোভে বিকেলে সাত্তোর বাসস্টপ এলাকায় সিউড়ি-বোলপুর রাস্তা অবরোধ শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। তাতেই ছিলেন নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবার। এর পরেই একাধিক জামিন-অযোগ্য ধারায় বিজেপি সমর্থক পরিবারের ওই বধূ, তাঁর স্বামী ও শাশুড়ি-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করে পাড়ুই থানার পুলিশ। পুলিশকে লক্ষ করে নির্যাতিতা বোমা ছুড়েছিলেন বলে অভিযোগ। রবিবার সিউড়ি আদালত ধৃতদের জেল-হাজতের নির্দেশ দেয়। মঙ্গলবার সাত্তোর এলাকার দুই বাসিন্দাকে পুলিশের উপরে বোমা মারার সাক্ষী হিসাবে হাজির করে সিউড়ি আদালতের তৃতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুরজিৎ মণ্ডলের কাছে গোপন জবানবন্দি দেওয়ায় পুলিশ।

পেশায় রাজমিস্ত্রি ওই সাক্ষী, সম্পর্কে নির্যাতিতার আত্মীয়। তাঁর দাবি, সোমবার রাতে তাঁর বাড়ি যান তৃণমূলের জনা চারেক মুখচেনা নেতা। তাদের সঙ্গে ছিল পাড়ুই থানার পুলিশ। ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘ওরা বলল, ‘পুলিশ এসেছে। তোমাকে একটা কাগজে সই করতে হবে। চলো’। আমি বললাম, ‘রাতে যাব না’। তখন চলে গেলেও কয়েক ঘণ্টা বাদে ফের পুলিশ নিয়ে ফিরে এল ওরা। সাদা কাগজে সই করানোর জন্য চাপাচাপি করল। সরকারি টাকায় বাড়ি-ঘর দেবে বলে লোভ দেখাল। তাতেও রাজি হইনি।’’ তাঁর দাবি, তাঁর স্ত্রী এক রকম গালাগালি দিয়ে ওই নেতাদের বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন।

মঙ্গলবার সকালে নিজের কাজেসাত্তোর বাসস্টপে গিয়েছিলেন ওই রাজমিস্ত্রি। তাঁর দাবি, তৃণমূলের দু’জন তাঁকে সিউড়িতে গাড়ি রং করার কাজ রয়েছে বলে সঙ্গে নেয়। সেই সময়ও পুলিশ সেখানে হাজির ছিল। ফলে, তিনি সিউড়ি যেতে রাজি হন। মাঝপথে ফের তাঁকে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে চাপাচাপি করা হয়।

তাঁর কথায়, ‘‘ওরা বলল, ‘পুলিশের উপরে বোমা মারার ব্যাপারে ওই মেয়েটার (নির্যাতিতা) নাম দিতে হবে’। চাপের মুখে উপায় না পেয়ে রাজি হই। যদিও হাকিমের কাছে কোনও নামই দিইনি। তাতে ওরা (তৃণমূলের লোকজন) রেগে গিয়েছে।’’ ওই সাক্ষীর স্ত্রী-র দাবি, ‘‘এই চাপাচাপির পিছনে আছে এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ মুস্তফা (সাগর ঘোষ হত্যা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত)। মুস্তফার এক ছেলে শেখ আকবর আর মুস্তাফার চেলা-রাই সব করেছে। ওদের ও পুলিশের ভয়ে আমাদের কিছু করার ছিল না।’’

তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, চাপাচাপি বা ভয়ের চোটে সাক্ষ্য দিতে রাজি হলে এ দিন ওই দম্পতি আচমকা মুখ খুললেন কার ভরসায়? ওই দম্পতি এ প্রশ্নের জবাব দেননি। তবে শেখ আকবর দাবি করেন, ‘‘বিজেপি-র গুন্ডারা ভয় দেখিয়ে ওই দম্পতিকে দিয়ে এ ধরনের কথা বলাচ্ছে।’’ তৃণমূলের পাড়ুই থানা কমিটির চেয়ারম্যান মুস্তাক হোসেনের বক্তব্য, ‘‘ওই এলাকায় তৃণমূলের কেউ নেই। কারা ওই দম্পতিকে চাপাচাপি করল? এতেই স্পষ্ট কারা ওঁদের দিয়ে কথাগুলো বলাচ্ছে।’’

এ দিন ওই সাক্ষীর দাবি জানাজানি হওয়ার পরেই হইচই শুরু করেন বিরোধীরা। রাজ্যের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বিজেপির অন্যতম নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহের কটাক্ষ, ‘‘বীরভূমে যা ঘটে চলেছে, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি সিবিআই বা এনআইএ-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে তদন্তের জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ করবেন?’’ বিমান বসুর অভিযোগ, ‘‘নির্যাতিতা যাতে হাইকোর্টে সাক্ষী দিতে না পারেন, সে জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’’ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘ছোট্ট একটা বাচ্চা-সহ সংখ্যালঘু পরিবারের সাধারণ এক জন গৃহবধূকে জেলে আটকে রেখে যেন পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করছেন মুখ্যমন্ত্রী! মিথ্যা সাক্ষী সাজিয়ে কী রাজনৈতিক লাভ হবে ওঁর, জানি না।’’

sattor witness sattor hearing suri court false statement sattor false statement sattor false witness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy