Advertisement
E-Paper

ক্যামেরা তো চাই, টাকা কই স্কুলের?

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারে বারেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কোনও স্কুল পড়ুয়াদের কাছে থেকে বছরে ২৪০ টাকার বেশি নিলে সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে। তাই বাড়তি অর্থের ব্যবস্থা না-করে সিসি ক্যামেরা বসানোর যে-নির্দেশ সরকার দিয়েছে, সেটাকে তাদের স্ববিরোধিতা হিসেবেই দেখছে স্কুলগুলি।

মধুমিতা দত্ত ও সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩১
স্কুলে নজরদারি। —নিজস্ব চিত্র।

স্কুলে নজরদারি। —নিজস্ব চিত্র।

উন্নয়ন ফি হিসেবে বছরে ২৪০ টাকার বেশি নিলেই সরকারের কোপে পড়তে হবে। অথচ ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য নিজেদের খরচে বসাতে হবে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা।

এই দুই পরস্পরবিরোধী নির্দেশে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকার-পোষিত মাধ্যমিক স্কুলগুলি আতান্তরে পড়েছে। রাজ্যে এই ধরনের স্কুলের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।

পড়ুয়াদের নিরাপত্তা বাড়াতে অক্টোবরে প্রতিটি স্কুলকে ‘সেফটি অ্যান্ড সিকিওরিটি মনিটরিং কমিটি’ গড়ার নির্দেশ দিয়েছিল স্কুলশিক্ষা দফতর। স্কুল-চত্বরে সিসি ক্যামেরা বসাতে বলা হয়েছিল সেই নির্দেশিকাতেই। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও সরকার-পোষিত স্কুলগুলি হিসেব করে দেখেছে, সিসি ক্যামেরা বসাতে তাদের খরচ হবে প্রায় এক লক্ষ টাকা। সেই ব্যয়ভার বহন করতে হবে সংশ্লিষ্ট স্কুলকেই।

কলকাতার এক সরকার-পোষিত স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মন্তব্য, ‘‘এই নির্দেশে আমাদেরই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে চলেছে।’’ কী ভাবে? ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য অবিভাবকেরা চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা তো উন্নয়ন খাতে অভিভাবকদের কাছ থেকে বছরে ২৪০ টাকার বেশি নিতেই পারব না। সেটাই অনেকে বুঝতে চাইছেন না।’’

ব্যারাকপুরের শান্তিনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কনককুমার সর্বজ্ঞ জানান, জিডি বিড়লা স্কুলের গোলমেলে ঘটনার পরেই তিনি সংশ্লিষ্ট ব্লক উন্নয়ন আধিকারিককে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে, তাঁর স্কুলে ১৬৪০ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৪০০ জনই ছাত্রী। রয়েছেন ২০ জন শিক্ষিকা। এই পরিস্থিতিতে সিসি ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা করার জন্য আর্জি জানান তিনি। ‘‘বছরে পড়ুয়া-পিছু ২৪০ টাকা নিয়ে স্কুল চালানো কঠিন। দারোয়ান ও ঝাড়ুদারদের বেতন এবং বিদ্যুতের বিল মেটাতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়। সিসি ক্যামেরা বসানো হবে কী করে,’’ প্রশ্ন কনকবাবুর।

নন্দীগ্রামের সুবদি সীতানাথ বিদ্যাপীঠের প্রধান শি‌ক্ষক জন্মেজয় দিন্দা জানান, তাঁর স্কুলে সহশিক্ষা চালু রয়েছে। সিসি ক্যামেরা দরকার। কিন্তু সরকার টাকা না-দিলে তা বসানো সম্ভব নয়। একই বক্তব্য মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা-বাহাদুরপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ শাহজাহান আলির। তিনি জানাচ্ছেন, তাঁর স্কুলে পড়ুয়াদের ৬৫ শতাংশই ছাত্রী। রয়েছেন বেশ কয়েক জন শিক্ষিকাও। তিনি বলেন, ‘‘সরকার টাকা দিলে তবেই সিসি ক্যামেরা বসানো সম্ভব।’’ গড়িয়া বরদাপ্রসাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃণালকান্তি মণ্ডলও বলেন, ‘‘সরকার টাকা না-পাঠালে আমাদের মতো স্কুলে সিসি ক্যামেরা বসানো এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব নয়।’’

কলকাতার জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনে এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠার পরে অভিভাবকদের চাপ বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন উত্তর ২৪ পরগনার সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই সমস্যা থেকে উদ্ধার কী ভাবে পাব, শিক্ষা দফতরের কাছে তা জানতে চেয়েও সদুত্তর পাচ্ছি না।’’

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারে বারেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কোনও স্কুল পড়ুয়াদের কাছে থেকে বছরে ২৪০ টাকার বেশি নিলে সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে। তাই বাড়তি অর্থের ব্যবস্থা না-করে সিসি ক্যামেরা বসানোর যে-নির্দেশ সরকার দিয়েছে, সেটাকে তাদের স্ববিরোধিতা হিসেবেই দেখছে স্কুলগুলি।

স্কুল-কর্তৃপক্ষের সুরেই কথা বলছেন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরা খুবই জরুরি। তবে তার জন্য সরকারেরই অর্থ বরাদ্দ করা উচিত। স্কুলের পক্ষে এটা সম্ভব নয়।’’

টাকা নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই কলকাতার বেশ কয়েকটি স্কুল অবশ্য সিসি ক্যামেরা বসিয়ে ফেলেছে। সেই তালিকায় রয়েছে যাদবপুর বিদ্যাপীঠ যোধপুর পার্ক বয়েজ হাইস্কুলের মতো বিদ্যালয়। তবে এ ক্ষেত্রে প্রাক্তনীদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া গিয়েছে বলে জানান যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য।

CCTV surveillance CCTV Private Schools Safety and Security Monitoring Committee ক্লোজ সার্কিট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy