E-Paper

শিক্ষক-শূন্য বহু বিষয়, খাতাই বা দেখবে কে!

জেলায় জেলায় বহু স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক-সঙ্কট তীব্র হয়েছে। কোথাও জীববিদ্যা পড়ানোর লোক নেই, কোথাও অঙ্ক, কোথাও ইংরেজি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪০
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা রয়েছেন পথে-প্রতিবাদে। অধিকাংশই আর স্কুলমুখো হচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার ছুটির পরে, শুক্রবার স্কুল খুলতেই ফের সামনে এল সঙ্কট। ‘ইউনিট টেস্ট’ প্রায় শেষ। এ বার পুরোদস্তুর ক্লাস শুরু হবে। পরীক্ষার খাতাও দেখতে হবে। কিন্তু কী ভাবে হবে, সেটাই প্রশ্ন।

জেলায় জেলায় বহু স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক-সঙ্কট তীব্র হয়েছে। কোথাও জীববিদ্যা পড়ানোর লোক নেই, কোথাও অঙ্ক, কোথাও ইংরেজি। কোচবিহারের মরিচবাড়ি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব সরকার বলেন, ‘‘আমাদের পাঁচ শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। তার মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক বেশি। খুব অসুবিধা হচ্ছে।’’ উত্তর ২৪ পরগনার নহাটা সারদা সুন্দরী বালিকা বিদ্যামন্দিরের আট জনের চাকরি গিয়েছে। রসায়নের শিক্ষিকা নেই। ফলে, রসায়নের ক্লাস বন্ধ। বনগাঁ কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়েও একাদশ-দ্বাদশে রসায়নের ক্লাস বন্ধ। হাওড়ার সাঁকরাইল গার্লস হাই স্কুলের চার শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দু’জন জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা। নবম-দশমে ওই বিষয়ের শিক্ষিকা আর নেই। বীরভূমের লাভপুরের দ্বারকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১,১০০ ছাত্রছাত্রীর জন্য তিন জন অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন। আগে এক জন বদলি হয়েছেন। এখন চাকরি গিয়েছে বাকি দু’জনেরও। প্রধান শিক্ষক বাণীব্রত মণ্ডল বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের অঙ্ক শেখাবে কে?’’ ভাঙড় গার্লস হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নূপুর শিকদার বলেন, ‘‘পরীক্ষার খাতা কে দেখবে!’’

কর্মবিরতি শেষে পার্শ্ব-শিক্ষকেরা অবশ্য এ দিন স্কুলে এসেছিলেন। পূর্ব মেদিনীপুরের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কৃষ্ণগঞ্জ কৃষি-শিল্প বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরুণকুমার দাস বলেন, ‘‘আমাদের চার পার্শ্ব-শিক্ষকই শুক্রবার এসেছিলেন। পরীক্ষা নেওয়ায় সাহায্য করেছেন।’’ ‘পার্শ্ব-শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ’-এর তরফে রমেশ ডিন্ডা বলেন, ‘‘কর্মবিরতির মধ্যেও অনেক হাই স্কুলে পরীক্ষা চলায় পার্শ্ব-শিক্ষকদের একাংশ সাহায্য করেছেন। আর এ দিন সবাই স্কুলে গিয়েছেন।’’

কসবায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপরে পুলিশি অত্যাচারের পরে স্কুলে চাকরিহারা শিক্ষকদের উপস্থিতি আরও কমেছে। অধিকাংশই জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট নির্দেশ ছাড়া, স্কুলে আসবেন না। ক্ষুব্ধ অন্য শিক্ষকেরাও। বাঁকুড়ার সোনামুখীর এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘(পুলিশের) ওই লাথি গোটা শিক্ষক সমাজের উপরে আঘাত। অপমান মানা অসম্ভব। এত দিন পড়ুয়াদের স্বার্থে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়েছি। বাংলার শিক্ষক হয়েও নিচু ক্লাসে অঙ্ক করিয়েছি। আর তা হবে না।” নদিয়ার করিমপুরের কেচুয়াডাঙা বিধানচন্দ্র বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ ঘোষের কথায়, “আমাদের পাঁচ শিক্ষক চলে যাওয়ায় বাকিদের প্রত্যেককে সপ্তাহে আটটি করে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হবে। পড়ানো, খাতা দেখা, কী করে সব সামলানো যাবে, বুঝতেই পারছি না।”

মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ধুলাউড়ি পাইকমারি সূর্য সেন বিদ্যাপীঠে ছাত্রছাত্রী ৭০০ ছুঁই ছুঁই। মাত্র তিন জন শিক্ষককে এখন পড়ুয়াদের পঠনপাঠন সামলাতে হবে। পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের সুটরা মুক্তেশ্বর বিদ্যানিকেতনে সাত জন শিক্ষকের উপরে ৬৫০ জন ছাত্রছাত্রীর ভার। এক শিক্ষকের কথায়, “পড়াব, না পড়ুয়াদের পাহারা দেব, বুঝতে
পারছি না!”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Supreme Court of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy