Advertisement
E-Paper

গ্রীষ্মের মর্জি বদলাবে কি স্কুলের ছুটিও

শিক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, ঋতুচক্রের বদলকে মাথায় রেখে গ্রীষ্মের ছুটির সময়টা বদলানো জরুরি। তবে উল্টো মতও রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৮ ০২:৫৩
আশ্রয়: তীব্র গরমে রোদ থেকে বাঁচতে মায়ের আঁচলই ভরসা খুদের। সোমবার, দক্ষিণ কলকাতায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

আশ্রয়: তীব্র গরমে রোদ থেকে বাঁচতে মায়ের আঁচলই ভরসা খুদের। সোমবার, দক্ষিণ কলকাতায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

গ্রীষ্মের ছুটিতে তেমন গরম মেলেনি। এ দিকে, স্কুল খুলতেই শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ! ক্লাসে বসে হাঁসফাঁস অবস্থা পড়ুয়াদের। যার ফলে সরকারি স্কুলে আরও দশ দিন গরমের ছুটি ঘোষণা হল।

বর্ষাকালে তাপপ্রবাহ নতুন নয়। গত কয়েক বছরে বর্ষার মরসুমে এমন হাঁসফাঁস আবহাওয়ার নিদর্শন বেশ কয়েক বার দেখা গিয়েছে। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, এ বারও গরমের এমন দাপট কবে শেষ হবে, তা বলা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতির কথা ভেবে আরও একটু বাড়িয়ে দেওয়া হবে কি গরমের ছুটি, না কি প্রতি বছরের গরমের ছুটির সময়টাই পিছিয়ে দেওয়া হবে, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তা নিয়ে। ক্যালেন্ডার মাথায় রেখেই প্রতি বছর মে মাস থেকে গ্রীষ্মের ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু ঋতুচক্র যে ভাবে বদলাচ্ছে, তাতে ছুটির নির্ঘণ্টেও বদল প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে।

শিক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, ঋতুচক্রের বদলকে মাথায় রেখে গ্রীষ্মের ছুটির সময়টা বদলানো জরুরি। তবে উল্টো মতও রয়েছে। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্যের যেমন প্রশ্ন, ‘‘আগামী বছর যে ফের মে মাসে চাঁদিফাটা গরম পড়বে না, তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?’’ একই সুর আবহবিদদের কথাতেও। তাঁদের বক্তব্য, আবহাওয়া যেমন খামখেয়ালি হয়ে উঠছে, তাতে প্রতি বছর যে গরমের চরিত্র একই সময়ে একই রকম হবে, তা এখনই বলা যায় না। ফলে ‘‘পরিস্থিতি বিবেচনা করেই প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত,’’ মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর।

রামমোহন মিশন স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস জানাচ্ছেন, গরমের ছুটি শেষে ১৩ জুন তাঁদের স্কুল খুলেছে। সোমবার তীব্র গরমের জেরে ক্লাসে পড়ুয়ারা বসে থাকতে পারছিল না। এই পরিস্থিতিতে ‘হাফ ছুটি’ কী ভাবে দেওয়া যায়, ভাবছিলেন তাঁরা। সরকার ছুটি ঘোষণা করায় স্বস্তি মিলেছে। তিনি বলছেন, ‘‘দুপুরে বাড়িতে ঠান্ডায় বিশ্রাম নিতে পারবে পড়ুয়ারা। এখানে গরমে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।’’ যাদবপুর বিদ্যাপীঠেও পড়ুয়ারা নাকাল হয়ে উঠছে। স্কুলবাড়ির চারতলায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের ল্যাবরেটরি রয়েছে। সেখানে তো অসহনীয় অবস্থা। প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘জীববিদ্যার ল্যাবরেটরিতে জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ল্যাবরেটরিতে অন্তত এসি বসাতে হবে। টিফিনের সময়ে ক্লাস থেকে প়ড়ুয়াদের রোদে বেরোতেও নিষেধ করা হয়েছে।’’ একই পরিস্থিতি শহর ও শহরতলির বিভিন্ন স্কুলে। এরই মধ্যে কোনও কোনও স্কুলে লোডশেডিং হয়েছে। উত্তর শহরতলির একটি স্কুলের শিক্ষক বলছেন, ‘‘এত গরমে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে অনেক পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে খবর পাচ্ছি।’’ গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী মিত্র বলছেন, ‘‘গরমের হাত থেকে বাঁচতে মেয়েদের বারবার চোখমুখে জলের ঝাপ্টা দিতে বলেছি।’’

অভিভাবকদের অনেকেই বলছেন, আপৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ বারের মতো আগেও বিশেষ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু গরমের ছুটির সময়টা এ বার থেকে আবহাওয়া বুঝেই ঘোষণা করার কথা কেন ভাবছে না সরকার, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। স্কুলশিক্ষা দফতরের একটি সূত্র বলছে, তাতে পড়াশোনায় ক্ষতি হতে পারে বলে চিন্তা করছেন কর্তাদের একাংশ। কারণ ছুটির নির্ঘণ্ট আগে থেকে ঠিক না থাকলে বাকি সব কাজ নিয়ম মেনে শেষ করা
সমস্যার হতে পারে। তা ছাড়া এমন অনেক সময়েই ঘটে যে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি না হলেও উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ছুটি ঘোষণা করা হবে কীসের ভিত্তিতে, পাল্টা প্রশ্ন তাদের। আর প্রতি বছর ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে হলে পড়াশোনায় ক্ষতিও হতে পারে বলেও মনে করছেন কর্তাদের একাংশ। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি দেখছি। আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

summer vacation School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy