নিয়তি ষণ্ড।
এক সপ্তাহ আগে মৃত্যু হয়েছে অসুস্থ স্বামীর। তার পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন স্ত্রী। রবিবার ভোরে স্বামীর চিতার স্থলে মিলল তাঁর দগ্ধ দেহ। ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি থানার দর্পশিলা গ্রামের ঘটনা। মৃতের নাম নিয়তি ষণ্ড (৩৭)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, স্বামীর মৃত্যুর শোকে মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করেছেন নিঃসন্তানওই মহিলা।
নিয়তির স্বামী বছর পঞ্চাশের পরমেশ্বর ছিলেন কাঠের আসবাবপত্রের মিস্ত্রি। প্রায়ই জ্বরে ভুগতেন পরমেশ্বর। হাতুড়েকে দেখিয়ে ওষুধ খেতেন। ৩০ জুলাই অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরিজনেরা পরমেশ্বরকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। পরদিন ৩১ জুলাই রাতে হাসপাতালে মৃত্যু হয় পরমেশ্বরের। চিকিৎসক জানান, মৃত্যুর কারণ সেপ্টিসেমিয়া। ১ অগস্ট দর্পশিলা গ্রামের শ্মশানে পরমেশ্বরের শেষকৃত্য হয়।
পরিজনেরা জানাচ্ছেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই উদভ্রান্তের মতো আচরণ করতেন নিয়তি। নিজের মনে কথা বলতেন। কয়েক দিন ধরে রাতে নিয়তির সঙ্গে ঘুমোতেন তাঁর বড় ননদ অলকা ষণ্ড ও মামিশাশুড়ি লক্ষ্মী পৈড়া। শনিবার রাতেও তিনজন এক ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত দু’টো নাগাদ ঘুম ভেঙে যায় লক্ষ্মীর। নিয়তিকে দেখতে না পেয়ে হইচই শুরু হয়। দেখা যায়, বাড়ির সদর দরজা খোলা। রাস্তায় ও জমির আলপথে নিয়তির দগ্ধ শাড়ির টুকরো দেখতে পাওয়া যায়। পরে খোঁজাখুঁজি করে শ্মশানে পৌঁছে পরিজনেরা দেখেন, যেখানে পরমেশ্বরের শেষকৃত্য হয়েছিল, সেই চিতার উপরেই পড়ে রয়েছে নিয়তির দগ্ধ দেহ। পাশে একটি কেরোসিনের জেরিকেন।
পরিজন ও গ্রামবাসীরা নিয়তিকে উদ্ধার করে চিল্কিগড় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। ওই হাসপাতালে মেয়েকে দেখতে আসেন নিয়তির বাবা নির্মল দণ্ডপাট। রবিবার সকালে পুলিশের উদ্যোগে দেহটি ঝাড়গ্রাম পুলিশ মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। নিয়তির ছোট দেওর বনমালী ষণ্ড বলেন, ‘‘দাদার মৃত্যুর পরে বৌদি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েছিল। শনিবার গভীর রাতে কখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল কেউ টের পাইনি।’’ পড়শি শমিত নায়েক, সুজিত কুঙর বলছেন, ‘‘জমির আলপথে পোড়া কাপড়ের টুকরো পড়েছিল। তার পরে পরমেশ্বরের চিতার স্থলে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখে আমরা শিউরে উঠি।’’
ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট মনোবিদ দীপঙ্কর পাল বলছেন, ‘‘স্বামীর মৃত্যুজনিত অনিশ্চিয়তা এবং একাকীত্ব হয়তো তাঁকে এই ভাবে আত্মহননের পথে চালিত করেছে। এটা মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার।’’ পুলিশেরও প্রাথমিক সন্দেহ, বাড়ি থেকে বেরিয়েই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে নিয়তি স্বামীর চিতাস্থলের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। ঝাড়গ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) উত্তম ঘোষ বলেন, ‘‘একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy