Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

করোনা রোগী অপরাধী নন, বলছেন ভুক্তভোগী

১৩ মার্চ লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতায় ফেরেন ওই তরুণ। দিল্লি ও কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁর কোনও উপসর্গ ছিল না।

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০ ০২:১৮
Share: Save:

কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলের ডাক দিলেন বাংলার দ্বিতীয় করোনা-রোগী। ২২ বছরের ওই তরুণ বলছেন, ‘‘করোনায় আক্রান্ত হয়েছে মানে অপরাধী বানিয়ে দেবেন না! সমাজের মানসিকতা না-বদলালে রোগ লুকোনোর প্রবণতা বাড়বে। সেটা খুবই ভয়ের।’’

বালিগঞ্জের বাসিন্দা ওই যুবক লন্ডন বিজনেস স্কুলের ম্যানেজমেন্টের ছাত্র। তিনি ছাড়াও তাঁর বাবা, মা এবং বাড়ির পরিচারক করোনার শিকার হয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর বাবা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ৩১ মার্চ। শনিবার ছুটি হয় তরুণ এবং তাঁদের গৃহকর্মীর। দ্বিতীয় দফায় লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে বুধবার মায়েরও ছুটি হয়েছে। তাঁদের সকলেই আপাতত ১৪ দিনের জন্য গৃহ-নিভৃতবাসে রয়েছেন। এ দিন এগরা-যোগে চিকিৎসাধীন দুই মহিলাকে ছুটি দিয়েছে হাসপাতাল।

বালিগঞ্জের তরুণ এ দিন বলেন, ‘‘আমি আক্রান্ত হওয়ায় আমার পরিবারকে কার্যত অপরাধী বানানো হয়েছে। এটা ঠিক নয়। আমি তো জেনেবুঝে আক্রান্ত হইনি। উপসর্গ দেখা না-দিলে বুঝব কী করে যে, আমি আক্রান্ত! বন্ধুদের গ্রুপের আলোচনা থেকে বুঝেছি, এই মানসিকতার জন্য অনেকে ভয়ে পরীক্ষার জন্য এগিয়ে আসছেন না। পরীক্ষা করাতে গেলে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হবে ভেবে অনেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। করোনার সঙ্গে লড়াই করতে হলে এই মানসিকতার বদল ঘটাতে হবে।’’ হাসপাতালে থাকলেও দেশে-বিদেশে কী ঘটছে, নেট-দুনিয়ার মাধ্যমে সেই বিষয়ে অবহিত ছিলেন ওই তরুণ। ইনদওরে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে যে পাথর ছোড়া হয়েছে, সেটা তাঁর অজানা নয়। এ রাজ্যে আইডি-সহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশও সামাজিক ফতোয়ার মুখে পড়েছেন। ‘‘চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে পাথর ছোড়া হচ্ছে। তাঁদের ঘরে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। এ-সব কী,’’ প্রশ্ন তরুণের।

১৩ মার্চ লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতায় ফেরেন ওই তরুণ। দিল্লি ও কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁর কোনও উপসর্গ ছিল না। হালকা জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ১৭ মার্চ তিনি আইডি হাসপাতালে যান। সে-দিন তাঁকে ভর্তি করা হয়নি। আইডি থেকে ফেরার পরে তরুণ জানতে পারেন, ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দা, তাঁর দুই বন্ধুর করোনা ধরা পড়েছে। পরের দিন তরুণকে ভর্তি করে নেয় আইডি। তরুণ জানান, তাঁর জ্বর কখনও একশোর উপরে ওঠেনি। বহির্জগৎ এই ভাইরাস নিয়ে কতটা আতঙ্কিত, হাসপাতালে থাকাকালীন সেটা ভালই টের পেয়েছেন তিনি। ওই তরুণ জানান, ইনফ্লুয়েঞ্জার মরসুমে সামান্য জ্বর হলেও পরিচিতেরা ফোন করে জানতে চাইতেন, করোনা হয়নি তো! তরুণের কথায়, ‘‘করোনা রোগ নিয়ে এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এর মোকাবিলা করার প্রতিরোধক্ষমতা কমবয়সিদের মধ্যে রয়েছে।’’

একই সঙ্গে ওই তরুণ জানাচ্ছেন, এক জন কমবয়সির জন্য একটি বয়স্ক মানুষ যাতে সংক্রমিত না-হন, সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। যে-সব প্রবীণের অন্য অসুখ রয়েছে, তাঁদের এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে হবে। আতঙ্ক নয়, দরকার সতর্কতা।

ছেলের বক্তব্য সমর্থন করে বাবা জানান, স্ত্রীর একাধিক নমুনা পজ়িটিভ হওয়ায় তিনি কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। তবে এখন সে-সব অতীত। বছর আটচল্লিশের ওই প্রৌঢ় ডায়াবিটিসের রোগী। ইনসুলিন নেন। তাঁর কথায়, ‘‘করোনাকে ভয় পাবেন না। আমাদের রাজ্যে যে-চিকিৎসা হচ্ছে, তা বিদেশের সঙ্গে তুলনীয়। ছোট ছোট জিনিসও খেয়াল রাখা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে এত ভাল পরিষেবা পাব, আশা করিনি। আতঙ্কিত না-হয়ে পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলুন। সেটাই সব নাগরিকের কর্তব্য হওয়া উচিত।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE