গরমের ছুটি পড়তে চলেছে আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা এখনও তাদের পাঠ্য বাংলা বই হাতে পায়নি। এ দিকে, সেপ্টেম্বরেই দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের তৃতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা। এ বার তৃতীয় ও চতুর্থ সিমেস্টারের ফল নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়ন হবে। এই পরিস্থিতিতে কবে বাংলা বই হাতে আসবে, সে দিকে তাকিয়ে আছে কয়েক লক্ষ পড়ুয়া।
বিভিন্ন স্কুলের বাংলার শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের যে ওয়েবসাইট আছে, সেখানে বাংলা বই আপলোড করা আছে। সেখান থেকে বইয়ের এক- একটি অনুচ্ছেদ ডাউনলোড করে তাঁরা পড়াচ্ছেন। বেলগাছিয়ার মনোহর অ্যাকাডেমির বাংলার শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘একটি করে অনুচ্ছেদ ডাউনলোড করে সেই অংশটুকু আমি আমার সেকশনের পড়ুয়াদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিয়ে দিচ্ছি। ওরা বাড়ি গিয়ে মোবাইলে দেখে ওই অংশটুকু পড়ছে। কিন্তু এ ভাবে কি দিনের পর দিন পড়ানো সম্ভব? বাংলা ও ইংরেজি বই শিক্ষা দফতর থেকে পড়ুয়াদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এই বই বাইরে বাজারে পাওয়া যায় না। সরকারি বই পেতে এত দেরি হবে কেন?’’ দ্বাদশের পড়ুয়াদের প্রশ্ন, গরমের ছুটি পড়ার মধ্যে বই পাবে তো তারা?
আবার কিছু পড়ুয়ার অভিযোগ, শুধু বাংলাই নয়, বেসরকারি প্রকাশকেরা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অনুমোদিত যে বিজ্ঞানের বই প্রকাশ করলেন, সেই বইও বাজারে
সব সময়ে পাওয়া যাচ্ছে না। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ বার দ্বাদশের ক্লাস একটু আগে শুরু হয়েছে। তাই সমস্যা হয়েছে। বাংলা বই এ মাসের মধ্যেই পড়ুয়ারা
পেয়ে যাবে।’’
এ দিকে, গরমের ছুটি পড়ছে আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে। সেই ছুটিতে বিভিন্ন ক্লাসের পড়ুয়ারা শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে কী কী সামার প্রজেক্ট করবে, তা বিস্তারিত জানিয়েছে সমগ্র শিক্ষা মিশন। স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ায় স্কুলে পঠনপাঠন কী ভাবে হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে এই সামার প্রজেক্ট আদৌ কোনও স্কুলে হবে তো? প্রশ্ন উঠেছে, এখনকার পরিস্থিতিতে এই সামার প্রজেক্ট করাতে গাইড-শিক্ষক কে হবেন?
সমগ্র শিক্ষা মিশনের ওই সামার প্রজেক্টে শ্রেণিভিত্তিক আলাদা আলাদা প্রজেক্টের কথা বলা হয়েছে। যেমন, শিক্ষকদের সঙ্গে স্কুল সংলগ্ন কোনও এলাকার ঐতিহাসিক
স্থান, পোস্ট অফিস, ব্যাঙ্ক ইত্যাদি জায়গায় যেতে হবে। ঐতিহাসিক জায়গায় গিয়ে সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা, পোস্ট অফিস, ব্যাঙ্কের মতো সরকারি অফিসে গিয়ে কী ভাবে কাজ হয়, সে সব জানতে হবে। এ ছাড়া, বাড়িতে বসেও ছবি আঁকা থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজ করতে হবে। গরমের ছুটি শেষ হলে এই প্রজেক্ট রিপোর্ট শ্রেণি-শিক্ষকের কাছে জমা করতে হবে।
‘অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সেক্রেটারি চন্দন গড়াই বলেন, ‘‘আগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ করুক রাজ্য সরকার। না-হলে শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই সামার প্রজেক্ট হবে। এটা একটা দিশাহীন প্রজেক্ট।’’ ‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স
অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘সবার আগে অপরিকল্পিত ভাবে গরমের ছুটি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। অপরিকল্পিত ভাবে গরমের ছুটি পড়ে যাওয়ায় এই সামার প্রজেক্ট করার কোনও রুটিনই তৈরি করতে
পারেনি স্কুলগুলি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)