Advertisement
E-Paper

যোগাসন শিকেয়, আচমকা মত বদলে শুধুই আলোচনা

যোগের জায়গা নেই। শনিবার নেতাজি ইন্ডোরে শুধুই চেয়ার। কী হবে আর কী হবে না, কেউ জানে না। অন্তত শনিবার রাত পর্যন্ত যোগ দিবস পালন নিয়ে রাজ্য প্রশাসনে এমনই অবস্থা। কোনও মন্ত্রী, আমলা বা অফিসারই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০৩:৪৬
—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

যোগের জায়গা নেই। শনিবার নেতাজি ইন্ডোরে শুধুই চেয়ার।

কী হবে আর কী হবে না, কেউ জানে না।

অন্তত শনিবার রাত পর্যন্ত যোগ দিবস পালন নিয়ে রাজ্য প্রশাসনে এমনই অবস্থা। কোনও মন্ত্রী, আমলা বা অফিসারই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না। বরং রাজ্যের তরফে কেন্দ্রীয় ভাবে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে যে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা, তা-ও শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে ‘মুখেন মারিতং যোগ’! এখন পর্যন্ত যা খবর, তাতে ওই অনুষ্ঠানটি কার্যত আলোচনাসভা মাত্র। সেখানে যোগের জায়গা নেই। ইন্ডোর স্টেডিয়ামের প্রস্তুতির যা চেহারা এ দিন দেখা গিয়েছে, তাতে এই সংশয় তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। অন্য দিকে, কয়েক জন জেলাশাসক জানিয়েছেন, তাঁরা নিজ উদ্যোগে দিনটি পালন করবেন। তবে সেটা পুরনো নির্দেশ মতো, নাকি নতুন কোনও বার্তা কলকাতা থেকে পাঠানো হয়েছে, তা-ও স্পষ্ট নয়।

শুধু কলকাতার অনুষ্ঠানের অন্যতম সংগঠক তুষার শীল জানিয়েছেন, ‘‘সকালে যোগাসন অভ্যাসের প্রয়োজন নেই। স্বামী বিবেকানন্দের হাত ধরে বাংলা থেকে যোগের বিশ্বায়ন হয়েছে। সে কথা তুলে ধরার জন্য সভায় আলোচনা হবে।’’

প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই ধন্দ এবং ধোঁয়াশা? সরকারি সূত্রেই বলা হচ্ছে, যোগ দিবস নিয়ে হঠাৎই যে ভাবে সুরে বদল হল, তাতে মনে হচ্ছে, এই অনুষ্ঠান থেকে দূরত্ব তৈরি করতে চাইছে রাজ্য সরকার। বিশেষ করে কলকাতার অনুষ্ঠানটি কার্যত আলোচনাসভা হয়ে যাওয়ায় সংশয় আরও ঘন হয়েছে। তাকে বাড়িয়েছেন অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২৮ মে এক চিঠিতে ক্রীড়া দফতর জেলাশাসকদের নির্দেশ দেয়— আজ, রবিবার সকাল ৭টা থেকে ৭টা ৩৫ পর্যন্ত সারা দেশের সঙ্গে প্রতিটি জেলাতেও সাড়ম্বরে যোগ দিবস পালন করতে হবে। তার পর গত ১২ জুন মুখ্যমন্ত্রী জানান, যোগ দিবস পালনের জন্য অরূপ ও আশিসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ এ দিন বারবার দুই মন্ত্রীরই মুখে কুলুপ। যুব কল্যাণমন্ত্রী অরূপবাবু জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। যা করার ক্রীড়াসচিব করছেন। নেতাজি ইন্ডোরের অনুষ্ঠানে তিনি থাকবেন কি না, রাত পর্যন্ত তা-ও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি অরূপবাবু। ক্রীড়াসচিব রাজেশ পাণ্ডেকে অসংখ্যবার টেলিফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। সারাদিনে এক বারের জন্যও কথা বলা যায়নি স্বাস্থ্য দফতরের আয়ূষ বিভাগের মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও।

শুধু এই দুই মন্ত্রীই নন, শাসক দলের অন্য নেতামন্ত্রীরাও পুরো বিষয়টিকে এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করেছেন। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সকালে একটি যোগ অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। পার্থর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অনুষ্ঠানে তাঁর যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। বাকিরাও রবিবার কেউ কোথাও যাচ্ছেন— এমন খবর নেই। এমনকী, ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানেও কোনও মন্ত্রী বা শীর্ষ আমলা থাকবেন কি না, শনিবার রাত পর্যন্ত তা স্পষ্ট নয়।

তা হলে কি ‘যোগ দিবসে আমরা নেই’, এমনই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে রাজ্য প্রশাসন তথা শাসক দলের তরফে? এমন প্রশ্ন ওঠার পিছনে রাজনৈতিক ব্যাখ্যাও দিয়েছে প্রশাসনের একটি মহল। নবান্নের এক কর্তা জানান, যে হেতু কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিটি রাজ্যকে যোগ দিবস পালনের জন্য বলেছেন, তাই সেটা মেনে চলতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। সেখানে পিছিয়ে আসার উপায় নেই। এর মধ্যেই অনুষ্ঠানটিকে কেন্দ্র করে মোদী-মমতা ঘনিষ্ঠতার কথা উঠেছে। বলা হয়েছে, সম্পর্কে সু‘যোগ’ বলেই দিল্লির যোগ-ডাকে সাড়া দিয়েছে রাজ্য। জেলায় থেকে কলকাতা— সর্বত্র ধুমধাম করে যোগ পালনের উদ্যোগ সেটাই স্পষ্ট করে দিচ্ছে।

এমন আলোচনাতেই সরকারি প্রতিনিধিরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। আর সেই অস্বস্তি ঢাকতেই সম্ভবত আচমকা প্রশাসনিক স্তরে হাওয়াবদল। মন্ত্রী-আমলারা অনুষ্ঠানটি থেকে দূরত্ব বাড়াতে ব্যস্ত। ধোঁয়াশার উদ্ভবও সেখান থেকেই। সকলে মিলে একটাই কথা যেন শোনাতে চাইছে— যোগ দিবসের অনুষ্ঠানকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজ্য।

প্রশাসনের কেউ কেউ বলছেন, তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো সকালের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনাগ্রহী। যে কারণে পঁচিশে বৈশাখ রবীন্দ্রসদনের অনুষ্ঠান রীতি পাল্টে দুপুরে হচ্ছে এখন। তাই কলকাতায় অনুষ্ঠানটি যে সকালে হবে না, সেটা বোঝা খুব কঠিন নয়।

abpnewsletters Stadium Yoga Netaji Seminar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy