দুর্গাপুজো থেকে ভাইফোঁটা— এ বারের উৎসব-পর্বে দলকে ‘নিস্তরঙ্গ’ দেখে ভোটের মুখে নিশ্চিন্ত বোধ করছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের মতে, নির্বাচনী প্রস্তুতির মধ্যে এই পরিবেশে শীর্ষ নেতৃত্বে বোঝাপড়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বোঝাপড়ায় ‘ছন্দপতন’ না-হলে নির্বাচনী লড়াইয়ে ঘাটতি থাকবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।
এ বারের দুর্গাপুজোর আগে-পরেই সংগঠনে বড় রকমের রদবদল সেরে ফেলেছে তৃণমূল। একযোগে এত বড় রদবদলে বিক্ষোভ আর বিদ্রোহের শঙ্কা থাকলেও তা খুব বেশি সামনে না-আসায় সন্তুষ্ট দলীয় নেতৃত্ব। প্রথমে জেলা ও পরে ব্লক স্তরের এই রদবদলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ একেবারে নেই, তা নয়। কয়েকটি জায়গায় সেই বিরোধ সামলাতে সরাসরি নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কিছু জায়গায় ‘ভুল’ শোধরাতে বিকল্প ব্যবস্থার কথাও ভাবা হয়েছে। তবে সামগ্রিক ভাবে সমস্যা বেশি নয় বলেই দাবি করছে তৃণমূল। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘পদ হারিয়ে কেউ-ই খুশি হন না। তাই ক্ষোভ আছে। কিন্তু এই রদবদল ‘পারফরম্যান্স’-এর ভিত্তিতে হওয়ায় তা বৃহত্তর অংশের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’’
সংগঠনের মতোই পূর্বঘোষণা মতো এ বার পুর-প্রশাসনে রদবদল করতে চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব। সে ক্ষেত্রেও ‘পারফরম্যান্স’-ই ভিত্তি বলে দাবি করা হয়েছে। তৃণমূলের মতো দলে প্রশাসনিক পদে রদবদল সংগঠনের তুলনায় বেশি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হতে পারে বলে মনে করেন শাসক দলেরই বড় অংশ। তাই পুর-প্রধান, উপ-পুরপ্রধানের মতো পদে মুখ বদলে ক্ষোভ-বিক্ষোভের শঙ্কা কিছুটা বেশিই। আবার গত লোকসভা ভোটের ফলের ভিত্তিতে শহরাঞ্চলে দলের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ পুনরুদ্ধারে এই পথ ছাড়তে নারাজ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। নীতিগত ভাবে তাতে ‘সিলমোহর’ দিয়েছেন মমতাও।
দলীয় নেতৃত্বের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, রদবদলের ক্ষেত্রে যৌথ ভাবে গৃহীত সিদ্ধান্তই কার্যকর হচ্ছে। এই নিয়ে সর্বোচ্চ স্তরে মতৈক্য থাকায় সমস্যা হবে না বলেই দাবি তাঁদের। এই প্রসঙ্গেই এ বার পুজো-পর্বে মমতা ও অভিষেকের দৃশ্যমান সহাবস্থানের কথা উল্লেখ করেছেন অনেকেই। এমনকি, সাম্প্রতিক অতীতের তুলনায় বাড়ির কালীপুজোয় এ বার দু’জনের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণেও কিছু বদল ধরা পড়েছে তাঁদের চোখে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘এ বার পারিবারিক ছবিই বলে দিয়েছে, রাজনীতিতেও দূরত্ব নেই।’’
‘দিদির বাড়ি’র ভাইফোঁটাও এ বার কিছুটা নিরুত্তাপই ছিল। অন্য বছরের মতো এ বারও ভাইফোঁটা নিয়েছেন সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ (ববি) হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, ডেরেক ও’ব্রায়েন, জাভেদ খান, সমীর চক্রবর্তী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়রা। পরে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে আসেন সদ্য নিউ টাউন-কলকাতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনকেডিএ) ভারপ্রাপ্ত শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। অন্য দিকে, ভাইবোনেদের নিয়ে বৃহস্পতিবার ভাইফোঁটার আয়োজন ছিল অভিষেকের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)