পেশায় রাজমিস্ত্রি। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজের সময়ে বুথ লেভল এজেন্টের (বিএলএ-২) দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রথম সপ্তাহের পরে তাঁকে আর বিএলএ-র কাজে দেখা যাচ্ছে না। একই হাল খাদ্য সরবরাহের অনলাইন অ্যাপে কর্মরত যুবক থেকে ঠিকাদারের অধীনে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করা বছর ৫০-এর বিএলএ-দেরও। প্রত্যেকেরই বক্তব্য, পেশাগত জীবনের কাজ বন্ধ রেখে এই কাজ দীর্ঘদিন করা সম্ভব নয়। — কলকাতা-সহ সংলগ্ন এলাকায় এমনই ছবি সামনে আসছে। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মতে, এই বিএলএ-দের জন্য দলের তরফেও এখনও পর্যন্ত জল-পানির ব্যবস্থা করা যায়নি। যদিও সমস্যার কথা অস্বীকার করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপি খাতায়-কলমে প্রায় ৬০ হাজার বিএলএ ২-এর তালিকা জমা দিলেও তাঁদের বেশির ভাগই শাসক দলের ‘সন্ত্রাস-বাধা’র আশঙ্কায় মাঠে নামেননি বলে সূত্রের দাবি। আর যে ক’জন মাঠে নেমেছিলেন, তাঁদের অনেকেই রুটি-রুজির তাড়নায় দলীয় দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
রাজ্য বিজেপির একাংশের মতে, পশ্চিমবঙ্গে দলের নিচু তলায় এখনও নিবেদিত সর্বক্ষণের কর্মীর সংখ্যা কম। অন্য দক্ষিণপন্থী দলের মতোই বেশ কিছু ক্ষেত্রে সামান্য হাতখরচ ও টিফিনের বিনিময়ে কর্মী-সমর্থকদের দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু যাঁরা অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের, তাঁদের পক্ষে ন্যূনতম পারিশ্রমিক ছাড়া নিজস্ব রোজগার ফেলে রেখে অনেক ক্ষেত্রেই দলের কাজে নিবেদিত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
রাজ্য বিজেপির এক নেত্রী বলছেন, “দল থেকে আমাদের প্রত্যেককে তিন থেকে পাঁচটি করে বুথের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী বিএলএ নিয়োগ করেছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেকেরই সেই আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই যে, গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে দলের কাজ করবেন। পাশেই তৃণমূল কংগ্রেসের এলাহি আয়োজন। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় স্তরে জানালে বলা হচ্ছে, এই খাতে টাকা আসেনি।” বিজেপির এক জেলা নেতাও বলছেন, “অনেকেই আছেন, যাঁরা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে দলটা ভালবেসে করেন। কিন্তু তাঁদের কী ভাবে বলব যে, পেশা ছেড়ে দু’মাস ধরে শুধু দলের কাজ করুন!”
যদিও ‘সমস্যা’র কথা মানছেন না নেতৃত্বের অনেকেই। বিজেপির এক জেলা সভাপতির বক্তব্য, “টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই, এটা জেনেই যাঁরা কাজটা করার করছেন।” রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “যাঁরা এত দিন তৃণমূলের ছাপ্পা দেখেছেন, তাঁরা এখন সুযোগ পেয়ে নিজেদের তাগিদে রাজ্যের দৈন্যদশা ঘোচাতে মাঠে নেমেছেন। কোথাও বিক্ষিপ্ত সমস্যা হলে, জেলাসভাপতিরা দেখবেন।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)