বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এসএসসি-র পরীক্ষায় এ বার প্রথম বসেছেন কেউ। কেউ আবার চাকরি হারানোর আশঙ্কা বুকে নিয়ে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেছেন এই পরীক্ষাকে। তবে এত কিছুর পরেও ইন্টারভিউ পর্বের আগে নথি যাচাইয়ে কিছু চাকরিপ্রার্থী হাজিরা দিচ্ছেন না। এসএসসি সূত্রের খবর, বাংলা বিষয়ের শিক্ষক পদপ্রার্থীদের নথি যাচাইয়ের দিন ছ’জন অনুপস্থিত ছিলেন। ইংরেজির হবু শিক্ষকদের নথি যাচাইয়ে অনুপস্থিত ছিলেন ১৮ জন। এত লড়াই করে চাকরি পাওয়ার প্রাক্কালে অনুপস্থিতি ধরা পড়ছে কেন? এসএসসি-র বক্তব্য, অনুপস্থিতির কারণ এখনও তারা খতিয়ে দেখেনি। তবে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের মতে, এই নতুন নিয়োগেও আস্থাশীল নন সব চাকরিপ্রার্থী। তাই যাঁদের বিকল্প রুটিরুজি আছে, তাঁরা হয়তো লিখিত পরীক্ষায় উতরে গেলেও শেষমেশ এই চাকরির দিকে আসছেন না।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং এত ছাঁকনির পরেও ইন্টারভিউ তালিকায় ‘দাগি’ শিক্ষকদের নাম ধরা পড়েছে। এসএসসি কার্যত মেনে নিয়েছে, ওই শিক্ষকেরা যে ‘দাগি’ তা জানা ছিল তাদের। পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার যুক্তিও সাজিয়েছে এসএসসি। এই সব তথ্য তুলে ধরেই চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ শিক্ষক নিয়োগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।
চাকরিহারা শিক্ষক সঙ্গীতা বিশ্বাসের নাম একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউ তালিকায় উঠেছে। তিনি বলেন, “আমার বিকল্প চাকরি থাকলে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে গেলেও এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় থাকতাম না। নথি যাচাইয়ে আসতাম না। এ বারও নিয়োগ নিয়ে মামলা হয়েছে। প্রক্রিয়া যতই স্বচ্ছ হোক না কেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আশঙ্কায় আছি।” তাঁর দাবি, এ সব ভেবেই অন্য চাকরি ছেড়ে অনেকে সরকারি শিক্ষকের চাকরিতে আসছে না। আর এক চাকরিহারা শিক্ষকের মতে, “অভিজ্ঞতার ১০ নম্বর নিয়ে মামলা হয়েছে। তাই আশঙ্কা তো থাকছেই।” যদিও প্রথম বার এসএসসি পরীক্ষায় বসা চাকরিপ্রার্থী (ফ্রেশার্স) শিশির দাস বলেন, “ফ্রেশার্সরা লিখিত পরীক্ষা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতায় ৭০ নম্বরের মধ্যে ৭০ নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকায় কাট অফ নম্বর হচ্ছে ৭৫। ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েও চাকরি না পেলে কী করব, তা এসএসসি বলে দিক।”
অনুপস্থিতি নিয়ে এসএসসি কোনও ব্যাখ্যা না দিলেও একটি সূত্রের দাবি, ২০১৬ সালের নিয়োগ বাতিল হলেও সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি পেয়ে কিছু শিক্ষক পুরনো চাকরিতে ফিরে যেতে পেরেছেন। সেই চাকরি ফিরে পেয়েছেন লিখিত পরীক্ষা হওয়ার পরে। তাই এ বার লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেও নথি যাচাইয়ে আসেননি। এমনই এক শিক্ষক বলছেন, “বাড়ির কাছের স্কুলে পোস্টিং পাওয়ার জন্য ২০১৬ সালে এসএসসি দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর যা হল! বাড়ির কাছের স্কুলের চক্করে চাকরি হারিয়ে পথে বসতে বসেছিলাম। তাই পুরনো চাকরিতে ফিরে গিয়ে স্বস্তি পেয়েছি। আর এসএসসি দিতে চাই না!”
কেউ কেউ আবার এ-ও বলছেন, ফর্মে হয়তো কোনও ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। এ বার নথি যাচাইয়ে সেই ভুল ধরা পড়লে এমনিতেই ফর্ম বাতিল হবে। তাই হয়তো আসেননি। অনেকেই মনে করাচ্ছেন, এসএসসি কোর্টে বার বার আশ্বাস দিয়েছে কোনও অযোগ্য প্রার্থী ফাঁক গলে লিখিত পরীক্ষায় বসে গেলেও নথি যাচাইয়ে ধরা পড়বে। তার পরেই ইন্টারভিউ তালিকায় ‘দাগি’ বিতর্ক সামনে এসেছে। এই অনুপস্থিতির পিছনে তেমন কোনও কারণ আছে কি না, তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)