E-Paper

সাহায্যের আশায় নবান্নে উৎকণ্ঠার পরিযায়ী-ফোন

পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু নয়ডায় থাকা উসমান নন, রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য খোলা বিশেষ নম্বরে (হেল্পলাইন) ফোন এসেছিল কাজের সূত্রে ওড়িশার কয়রায় থাকা মহম্মদ কামরুল, হরিয়ানার গুরুগ্রামে থাকা বিশু মোল্লার মতো অনেকেরই।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ০৬:৩৯

—প্রতীকী চিত্র।

ফোন বেজে উঠতেই এ-পারে ‘হ্যালো’ বলেছিলেন নবান্নে কর্মরত এক পুলিশকর্মী। ও-পার থেকে ভেসে এসেছিল উৎকণ্ঠিত কণ্ঠস্বর। “স্যার, আমি উসমান আলি। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে বাড়ি। কাজের জন্য কয়েক বছর ধরে নয়ডায় থাকি। পুলিশের ভয়ে কয়েক দিন ধরে বাড়ির বাইরে কাজে যেতে পারছি না। আপনারা কিছু করুন!”

পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু নয়ডায় থাকা উসমান নন, রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য খোলা বিশেষ নম্বরে (হেল্পলাইন) ফোন এসেছিল কাজের সূত্রে ওড়িশার কয়রায় থাকা মহম্মদ কামরুল, হরিয়ানার গুরুগ্রামে থাকা বিশু মোল্লার মতো অনেকেরই। এঁরা কেউ মুর্শিদাবাদ থেকে বাইরে পাড়ি দিয়েছেন, কেউ দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা। ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে ধরপাকড়, হেনস্থা নিয়ে আতঙ্কিত প্রত্যেকেই। তবে এর বাইরেও প্রচুর ফোন এসেছে। তাঁদের মধ্যে কেউ জানিয়েছেন এলাকায় জল জমে থাকার অভিযোগ। কেউ বা ‘নম্বর’ চালু আছে কি না, পরীক্ষা করেছেন। কারও জিজ্ঞাসা, লক্ষ্মীর ভান্ডারে সরকার টাকার পরিমাণ বাড়াবে কি না। কেউ আবার জানতে চেয়েছেন, ভিন্ রাজ্যে গেলেই বাঙালিরা সমস্যায় পড়ছে কি?

পুলিশ সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় সাতশো ফোন এসেছে ওই হেল্পলাইন নম্বরে। তার সঙ্গেই প্রায় আটশোর বেশি মেসেজ এসেছে ওয়টস্যাপে। পরিযায়ী শ্রমিক ছাড়াও তাঁদের পরিবারের অনেকেও যোগাযোগ করেছেন, সাহায্য চেয়েছেন। কী ভাবে নিজেদের ‘নাগরিকত্বের’ প্রমাণ দেওয়া যাবে, সেই পরামর্শও চেয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিক এবং তাঁদের পরিজনেরা।

প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, সব থেকে বেশি ফোন এসেছে হরিয়ানার গুরুগ্রাম এবং উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় থাকা এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে। তাঁদের কেউ কেউ কোথাও আটকে পড়েছেন, অথবা ভয়ে বাড়িতে বন্দি হয়ে আছেন। অভিযোগ জানিয়েছেন, ওই দুই জায়গায় ঘরের বাইরে বার হলেই স্থানীয় পুলিশ আটক করে মারধর করছে। এক পরিযায়ী শ্রমিক অভিযোগ করেছেন, গুরুগ্রামে স্থানীয় থানা ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট’ চাইছে। সেই শংসাপত্র না দিতে পারলে টাকাও চাওয়া হয়েছে বলে তা‌ঁর অভিযোগ।

পুলিশ জানিয়েছে, যে সব পরিযায়ী শ্রমিক ফোন করে সাহায্য চেয়েছেন তাঁদের বিস্তারিত তথ্য তাঁদের এ রাজ্যের ঠিকানা যে থানার অন্তর্গত সেখানে পাঠানো হয়েছে। ওই থানাগুলিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও বলা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ (পিসিসি) চাইলে দ্রুত তা দিতে বলা হয়েছে বিভিন্ন জেলার পুলিশকে। নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের তরফে তিন জন পুলিশকর্মীকে ওই হেল্পলাইনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ফোন এবং মেসেজের গুরুত্ব বুঝে তা উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সেই কর্তারা সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ অফিসারদের পাঠিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করতে বলছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Migrant Workers West Bengal Police Helpline Number

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy