E-Paper

‘আমি কি খুন করেছি’, প্রশ্ন মমতার, ক্ষোভও

বহরমপুর থেকে কপ্টারে শমসেরগঞ্জে এসে মঙ্গলবার বিডিও দফতরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ধুলিয়ানের হেলিপ্যাড থেকে কিছুটা পথ হেঁটে তিনি বিডিও দফতরে পৌছেছেন তবে সেখানে ‘আক্রান্ত’ এলাকা নেই।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ ০৯:০০
জম্মু-কাশ্মীরে নিহত জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের দুই সন্তানের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী।

জম্মু-কাশ্মীরে নিহত জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের দুই সন্তানের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

আয়োজন ছিল সব রকম। শেষ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক অশান্তি প্রভাবিত এলাকায় এসে ঘেরা চৌহদ্দির বাইরে পা রাখলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হিংসা বন্ধে কড়া বার্তা দিলেন ঠিকই। তবে রয়ে গেল অজস্র প্রশ্নও।

বহরমপুর থেকে কপ্টারে শমসেরগঞ্জে এসে মঙ্গলবার বিডিও দফতরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ধুলিয়ানের হেলিপ্যাড থেকে কিছুটা পথ হেঁটে তিনি বিডিও দফতরে পৌছেছেন তবে সেখানে ‘আক্রান্ত’ এলাকা নেই। মুখ্যমন্ত্রী ভিতরে ঢুকে যাওয়ার পরেই তাঁদের কেন যেতে দেওয়া হচ্ছে না, এই প্রশ্ন তুলে বাইরে ধর্নায় বসেছিলেন ধুলিয়ানের বেতবোনার বেশ কিছু মহিলা। পরে শমসেরগঞ্জ থেকে আকাশ-পথেই সুতির সরকারি সভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৪০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ডাকা হয়েছিল। তার মধ্যে ২৮০টি পরিবারের হাতে তিনি এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যের চেক তুলে দিয়েছেন। সেই সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, ‘‘বিজেপির কথায় প্ররোচিত হবেন না, ভাগাভাগি করবেন না। আমি গোষ্ঠী-সংঘর্ষ দেখতে চাই না, আমি সংঘর্ষের বিরুদ্ধে। কেউ সংঘর্ষ বাধালে দিদি তাদের সঙ্গে থাকবে না।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘যদি ভাগাভাগি করেন, তার চেয়ে আমার গলাটা হৃদয় থেকে ভাগ করে দিন! তাতে আমি খুশি হব।’’

শমসেরগঞ্জের বিডিও দফতরের মাঠে শামিয়ানা বেঁধে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক ছিল কড়া নজরদারিতে মোড়া। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতিনিধিদের মোবাইল জমা নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল। সূত্রের খবর, সেখানে কয়েক জনের

বক্তব্য শুনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর পরিবারগুলির উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘বাবা-ছেলেকে কি আমি খুন করেছি? না আমি কিছু করতে বলেছি? আমার উপরে এত রাগ কেন’?

জাফরাবাদে নিহত বাবা-ছেলের পরিবারের কেউ শমসেরগঞ্জের ওই বৈঠকে ছিলেন না। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘দু’জন হিন্দু এবং এক জন মুসলিম মারা গিয়েছেন। বাবা-ছেলের পরিবারের কেউ আসেননি। ওঁদের চেক রেখে গেলাম।’’ পুলিশের গুলিতে নিহত, সুতির কাশিমনগরের বাসিন্দা যুবকের পরিবারের হাতে সুতির সভায় ১০ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিবারের এক জনকে হোমগার্ডের চাকরির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মঞ্চে ডেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে জম্মুর উধমনগরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নিহত জওয়ান, তেহট্টের ঝন্টু আলি শেখের পরিবারের। তাঁর ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার ভার সরকারি স্তর থেকে নেওয়ার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

শমসেরগঞ্জের বিডিও দফতর চত্বরে অবশ্য এ দিন ছড়িয়ে পড়েছে নানা মাত্রার ক্ষোভ। বেতবোনার তিলকা মণ্ডলদের প্রশ্ন, সরকারি খাতায় নাম থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হল না? হাউসনগরের আনোয়ারা খাতুন ও তাঁর সঙ্গীরা কাঁদছিলেন, গত ১২ এ্প্রিল রাতে পুলিশ তাঁদের বাড়ির পুরুষদের ধরে নিয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁরা ‘বিচার’ চাওয়ার সুযোগ পেলেন না। জাফরাবাদ জিকরির ব্যবসায়ী নারায়ণ পালের বক্তব্য, দোকান ভেঙে ও লুট হয়ে তাঁদের অবস্থা শোচনীয়। সরকার বলছে নির্দিষ্ট মেয়াদের ঋণের ব্যবস্থা হবে কিন্তু ব্যবসা দাঁড় করিয়ে তাঁরা শোধ করবেন কী? হিজলতলার মর্জিনা বেওয়ার দাবি, ক্ষতি যা হয়েছে, তার তুলনায় ক্ষতিপূরণ নেহাতই অল্প। বেতবোনারই বন্দনা মণ্ডলের কেউ কেউ অবশ্য বলে গেলেন, সরকারি সাহায্য যে পাওয়া গিয়েছে,

এটাই অনেক।

মুর্শিদাবাদে গোলমালের সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই দাবি করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন পাল্টা বলেছেন, ‘‘শাসক দলের সমর্থক বেতবোনার ৪০টি পরিবারকে নিয়ে গিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের বড় অংশই সরকারি ক্ষতিপূরণ নিতে যাননি। আক্রান্ত হিন্দুরা নিজেদের বাড়িতে কালো পতাকা তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে ধিক্কার জানিয়েছেন।’’

সুতির সভায় মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ওয়াকফ আইন এখানে হবে না, আমরা অনেক বার বলেছি। মামলায় অংশীদারও হয়েছি। এখন এটা বিচারাধীন। এই নিয়ে বেশি কথা বলা যাবে না। এটা নিয়ে আর গোলাগুলি করবেন না! প্রতিবাদ করলে দিল্লিতে করতে হবে।’’

গোষ্ঠী-সংঘর্ষ আটকানোর জন্য বাড়ির মা-বোন, ছাত্র-যুব, শ্রমিক-কৃষক সকলকে এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সে প্রসঙ্গে কোনও কথা শোনা যায়নি তাঁর মুখে। সভা-ফেরত ধুলিয়ানের বাসিন্দা শিবাশিস মণ্ডলের প্রশ্ন, ‘‘হিংসা আটকাতে গিয়েই তো বাবা-ছেলে খুন হল! সরকার না বাঁচাতে এলে মানুষ করবে কী?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee TMC Murshidabad

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy