নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উঠেছে রেণুকা। গ্রামের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি পাকাও হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে খুব বেশি বদলায়নি আনে গুড়িয়া আর তাঁর মেয়ে রেণুকার জীবন। বিদ্যুতের তার পর্যন্ত তাঁদের বাড়ি থেকে ৭০ মিটার দূরে এসে থমকে গিয়েছে। পাকা রাস্তার মতোই।
তাই সূর্য ডুবলে এখনও অন্ধকার হয়ে যায় আনেদের বাড়ির পথ। বাড়ি? বাঁশ ঝাড়ের ধার ঘেঁষে একচিলতে ঘর।
রেণুকাদের বাড়ির আগেই গ্রামের পাকা রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। তার পরে সরু কাঁচা পথটি আনে গুড়িয়ার বাড়ি ছাড়িয়ে চলে গিয়েছে গ্রামের শেষ প্রান্তে কাশিয়া খাঁড়ির দিকে। ইন্দিরা আবাসের অর্ধসমাপ্ত ঘর থেকে বেরিয়ে আনেদের ওই কাচা পথ ধরে পাকা রাস্তায় উঠতে হয়। তার পর একটি নলকূপ ভরসা করে দূরের পাড়া থেকে খাওয়ার জল আনেন ওঁরা। রোজ স্নানের জন্য মা-মেয়েকে ছুটতে হয় ওই দূরের মধ্য-পাড়ায়। প্রতিবেশিরা জানান, পঞ্চায়েত থেকে আনেদের জন্য ছোট্ট শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আনেরা তা ব্যবহারই করতে পারেন না। জল কোথায়!
বাসিন্দাদের কথায়, হালে পঞ্চায়েত ভোটের সময় পানীয় জল ও বিদ্যুৎ সংযোগের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ফের দোরগোড়ায় লোকসভার ভোট। এখনও ভোট প্রচারে কুয়ারন গ্রামে কোনও রাজনৈতিক কর্মীর পা পড়েনি। নেই দেওয়াল লিখন। তাই নেতা-কর্মীর আশ্বাসও নেই। আদিবাসী অধ্যুষিত ওই গ্রামটিতে তাই স্বাভাবিক ভাবেই ভোট নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে তাপ-উত্তাপও বিশেষ নেই। বরং চিন্তা, গরমে জলের অভাব মিটবে কী করে।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পাটলু, বানিয়াস কুজুরদের কথায়, গরম পড়তেই শুরু হয়েছে জলাভাব। চাষের জমি শুকিয়ে কাঠ। সকালে উঠে জলের চিন্তা তাড়া করে বেড়ায়। ভোট নিয়ে ভাবার সময় কই? বাসিন্দাদের অভিযোগ, সচল নলকূপ থেকে আয়রনযুক্ত দুর্গন্ধ জল উঠছে। মুখে দেওয়া যায় না। কুয়ারনের মধ্য-পাড়ার একটি নলকূপের জলেই তাই চলছে সকলের তৃষ্ণা নিবারণ।
পঞ্চায়েত ভোটে কুয়ারন থেকে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূলের পিটার বারু। তাঁর কথায়, খরার সময় সমস্যা হয়। তবে আনেদের পাড়ায় নলকূপ বসানোর চেষ্টা হচ্ছে। বালুরঘাটের চকভৃগু গ্রামপঞ্চায়েতের অন্য এলাকাগুলি ভোটের তাপে সরগরম। চৈত্র শেষের কুয়ারন সেই সময়ে জলের খোঁজ শুরু করেছে। কলে জল নেই। শুকিয়ে যাচ্ছে ডোবা ও পুকুর। শুধু জল শুকোয়নি আনের চোখে।