E-Paper

হাতে-পায়ে ধরে টাটাকে ফিরিয়ে আনবই, সিঙ্গুরে বললেন শুভেন্দু

শুভেন্দু এ দিন প্রায় এক কিলোমিটার পথ ধরে ‘শোকমিছিল’ করেন। সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, দলের রাজ্য সম্পাদক দীপাঞ্জন গুহ, রাজ্য নেতা স্বপন পাল, হুগলি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তুষার মজুমদার প্রমুখ।

সুদীপ দাস

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:২১
সিঙ্গুরে রতন টাটার ছবি নিয়ে মিছিল।

সিঙ্গুরে রতন টাটার ছবি নিয়ে মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে টাটাদের ‘হাতে-পায়ে ধরে’ ফিরিয়ে আনবেন বলে সিঙ্গুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে জানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শিল্পপতি রতন টাটার স্মরণে শুক্রবার বিকেলে সিঙ্গুরে টাটাদের ছেড়ে যাওয়া প্রকল্প এলাকার দ্বিতীয় গেটে বিজেপির আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে ওই মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু। তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএম অবশ্য এ দিন সিঙ্গুর-আন্দোলনে শুভেন্দুর ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাঁকে বিঁধেছে। পাশাপাশি, তৃণমূলের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গুর আন্দোলন ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে।

টাটার ছবির দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে শুভেন্দু এ দিন বলেছেন, “বাঙালি হিসেবে ওঁর (রতন টাটা) কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে এসেছি। শপথ করতে এসেছি, বিজেপি এলে (রাজ্যে ক্ষমতায়) আপনার অবর্তমানে সিঙ্গুরে টাটাকে নিয়ে আসব। হাতে-পায়ে ধরে টাটাকে ফিরিয়ে আনবই।”

সিঙ্গুর থেকে টাটাদের বিদায়-পর্বে শুভেন্দু তৃণমূলের নেতা ছিলেন। যদিও জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে ধর্মতলায় মমতা যে অনশন-অবস্থান করেছিলেন, তার সঙ্গে দূরত্ব বোঝাতে গিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, “একমাত্র আমিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চকলেট-স্যান্ডউইচ খাওয়া অনশনে যাইনি। কারণ, মন থেকে সিঙ্গুরে টাটার বিরোধিতা করতে পারিনি।” মমতাকে আক্রমণ করতে গিয়ে টাটার ‘অরাজনৈতিক সত্তার’ প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর বক্তব্য, “রতন টাটা কোনও দিন কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেননি। কারও বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। কিন্তু বাংলায় এসে তাঁকেই বলতে হয়েছে, মাথায় ট্রিগার রেখে আমাকে সিঙ্গুর ছাড়তে বাধ্য করা হল!” কর্মীদের উদ্দেশে শুভেন্দু প্রশ্ন করেন, ‘ট্রিগার কে ধরেছিলেন?’ সমম্বরে কর্মীরা জবাব দেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’

তৃণমূল যদিও এ দিন শুভেন্দুকে তাঁর পূর্বাশ্রমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। দলের নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “সিঙ্গুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন ছিল গায়ের জোরে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে। টাটার বিরুদ্ধে নয়। ওই আন্দোলনে শুভেন্দু ছিলেন অন্যতম সৈনিক। এখন দলবদল করে মতবদলের দাবি করলে রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকে না।” সিঙ্গুর-আন্দোলনের শরিক বিধায়ক বেচারাম মান্নারও বক্তব্য, “বাবা শিশির অধিকারীর সঙ্গে সিঙ্গুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি আন্দোলনের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু। মঞ্চ থেকে টাটাকে সিপিএমের দালাল বলেছিলেন। এখন তিনিই টাটাকে শ্রদ্ধা জানাতে সিঙ্গুরে এসেছেন। উনি বিশ্বাসঘাতক!”

শুভেন্দু এ দিন প্রায় এক কিলোমিটার পথ ধরে ‘শোকমিছিল’ করেন। সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, দলের রাজ্য সম্পাদক দীপাঞ্জন গুহ, রাজ্য নেতা স্বপন পাল, হুগলি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তুষার মজুমদার প্রমুখ। মিছিল শেষে মঞ্চে উঠে কাশফুলে ভরা পরিত্যক্ত টাটা প্রকল্পের দিকে তাকিয়ে শুভেন্দু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিনামাইট দিয়ে টাটার কারখানা গুঁড়িয়ে দিলেন! না শিল্প হল, না চাষাবাদ।”

সিঙ্গুরের প্রকল্প না হওয়ার পিছনে সিপিএমকেও দায়ী করেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর দাবি, “১৩ হাজার কৃষকের মধ্যে মাত্র দু’হাজার বর্গাদার ছিলেন। ১১ হাজার কৃষক টাকা নিয়েছিলেন। বর্গাদারেরা মালিকদের প্রদেয় অর্থের ২৫% দাবি করেছিলেন।” অধুনা প্রয়াত কয়েক জন সিপিএম নেতার নাম করে শুভেন্দুর দাবি, “ওঁরা টাকা দিতে দেননি। তাই সেই বর্গাদারদের নিয়ে মমতা আন্দোলনে নেমেছিলেন। আর সিপিএমের পুলিশ তাঁদের উপরে লাঠি চালিয়ে চরম ভুল করেছিল।” সেই সঙ্গে, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে অবস্থানে বসা মমতাকে ‘মেরে না তাড়ানো’ সিপিএমের ‘দ্বিতীয় ভুল’ ছিল বলেও শুভেন্দুর ব্যাখ্যা!

যদিও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “সিঙ্গুরে মিছিল যথার্থ। কিন্তু এটা বলেছেন কি, যে যখন অটো-হাব তাড়িয়ে দেওয়া হল, তখন মমতার নিত্যসঙ্গীর নাম ছিল শুভেন্দু অধিকারী? আর মমতার সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে পরামর্শ করেছিলেন বিজেপি নেতা রাজনাথ সিংহ। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলেছেন? এখন অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করে লাভ নেই।” একই সুরে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য মনোদীপ ঘোষেরও বক্তব্য, “মমতার সঙ্গে একই সুরে উনি আমাদের বিরোধিতা করেছিলেন। এখন রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে এ সব কথা বলছেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suvendu Adhikari BJP Singur Ratan Tata

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy