তাঁর দল বদলের কোনও ঘোষণা হয়নি। তৃণমূল ভবন বা অন্য কোথাও দলে যোগদানের অনুষ্ঠানও হয়নি। এক রকম নীরবেই বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে কংগ্রেস বেঞ্চ ছেড়ে ট্রেজারি বেঞ্চে বসতে শুরু করেছেন বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপা!
বিধানসভা ভোটের পর থেকেই দল বদল নিয়ে গুঞ্জন চললেও এ বার বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন হঠাৎই তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠকে হাজির থাকতে দেখা গিয়েছিল শম্পাকে। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেই বৈঠকের পরে রাজ্যপালের ভাষণের সময় কংগ্রেসের আসনে আর বসতে দেখা যায়নি তাঁকে। রাজ্যপালের ভাষণের পরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখাও করেন শম্পা। তার পর থেকে তৃণমূলের মহিলা বিধায়কদের জন্য নির্দিষ্ট বেঞ্চেই নিয়মিত বসছেন তিনি। দল বদলের ঘোষণা ছাড়াই কী ভাবে তিনি শাসক বেঞ্চে চলে গেলেন, এ প্রশ্নের জবাবে শম্পা অবশ্য বলছেন, ‘‘আমার আসন বদলের জন্য স্পিকারকে লিখিত ভাবে অনুরোধ করেছিলাম।’’
বিধানসভায় কোনও বিধায়কের আসন বদলের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একমাত্র স্পিকারই। যদিও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার বলেন, ‘‘না দেখে বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’’ কিন্তু শম্পা আসন বদলের জন্য স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন বলে দাবি করছেন শুনে বিমানবাবু বলেন, ‘‘উনিই সব বলতে পারবেন! আমার কিছু জানা নেই।’’ তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের টিকিটে বাঁকুড়া থেকে জিতে শম্পা বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়েছিলেন যে, তিনি আর পুরনো দলে ফেরত যাবেন না। অনেক অভিমানে তাঁকে তৃণমূল ছাড়তে হয়েছে বলে ঘনিষ্ঠ মহলে আক্ষেপ করতেন মুকুল রায়ের অনুগামী বলে পরিচিত বাঁকু়ড়া পুরসভার এই প্রাক্তন চেয়ারপার্সন। তবে কখনও বিধানসভায় পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্তে তাঁকে কথা বলতে দেখে জল্পনা বেড়েছিল। গত অধিবেশনে বিরোধীদের আনা অনাস্থা এবং এ বার রাজ্যপালের ভাষণের উপরে সংশোধনী নিয়ে ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণও করেননি শম্পা।
আপাতত শম্পার দলবদল নিয়ে কোনও ঘোষণার পরিকল্পনা তৃণমূলের নেই বলে দলীয় সূত্রের খবর। এমনিতেই ৬ জন বিধায়কের দলবদল নিয়ে স্পিকারের কাছে শুনানি চলছে। মামলা গড়িয়েছে আদালতেও। তার মধ্যেই নিঃশব্দে বেঞ্চ বদলের পরে শম্পা স্বীকার করছেন, ‘‘তৃণমূলে অভিমান কেটে গিয়েছে। মমতাদি’র ভক্ত আমি। তাঁর অনুপ্রেরণায় কাজ করতে চাই।’’
কিন্তু শম্পার এই আচরণকে কটাক্ষ করে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলে যখন ওঁর সমস্যা হচ্ছিল, তখন কংগ্রেস শম্পাকে টিকিট দিয়েছিল। মানুষ তাঁকে ভোট দিয়েছে। নিজের স্বার্থে সকলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন উনি। আর স্পিকারের ভূমিকাতেও আমরা বিস্মিত!’’ যদিও শম্পার দাবি, ‘‘পাঁচ বছর পরে ভোটের সময় মানুষ তো জবাবদিহি চাইত, কেন কাজ করতে পারিনি? কী জবাব দিতাম!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy