জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত হলেন শঙ্খ ঘোষ। কুড়ি বছর আগে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। তার পর বাঙালির ভাগ্যে আর শিকে ছেঁড়েনি।
কয়েক মাস আগেই বেরিয়েছে তাঁর সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ ‘শুনি শুধু নীরব চিৎকার’। দিন চারেক আগে ‘নিরহং শিল্পী’ নামে এক গদ্যগ্রন্থও। চুরাশি বছর বয়সেও সমান তাজা। কবিতা, স্মৃতিকথার পাশাপাশি লিখে যান হরেক প্রবন্ধ। নন্দীগ্রাম বা কামদুনি পর্বে নেমে আসেন বাস্তব রাজনীতির মাটিতেও। মনে পড়ে যায়, বিভিন্ন সাহিত্যবর্গে অবাধ বিচরণ, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ, উন্মত্ত জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করা আর এক বাঙালির কথা।
জ্ঞানপীঠের এই সন্ধ্যায় আর এক বিস্মৃতপ্রায় বাঙালিকে আনা যায়। ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস (আদিপর্ব)’-এর প্রণেতা নীহাররঞ্জন রায়। ভারতীয় ভাষায় প্রকাশিত বইগুলোর মধ্য থেকে বছরের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি বেছে নেওয়ার জন্য ১৯৬২ সালে দিল্লিতে জ্ঞানপীঠ কমিটির যে প্রথম বৈঠক বসেছিল, সেখানে সদস্য ছিলেন নীহাররঞ্জন। সে যাত্রায় কাজি নজরুল ইসলাম সম্মানদৌড়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রথম জ্ঞানপীঠ পেয়েছিলেন মলয়ালম লেখক জে কুরুপ।
বাংলা ভাষা সম্মানিত হল তার পরের বছরই— তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম জ্ঞানপীঠজয়ী মহিলা? তিনিও বাঙালি। আশাপূর্ণা দেবী।
এ বছরটা কি তা হলে সাহিত্য পুরস্কারে বাঙালির উজ্জ্বল উদ্ধার? শঙ্খবাবুর জ্ঞানপীঠ পাওয়ার এক দিন আগে অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন আর এক বাঙালি। ‘মহাভারতের অষ্টাদশী’ বইয়ের লেখক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। নৃসিংহবাবু শঙ্খ ঘোষের মতো কবিতা বা গল্পে হয়তো স্বচ্ছন্দচারী নন। কিন্তু তাঁর মহাভারতচর্চাও তো বাঙালির উজ্জ্বল উত্তরাধিকার। এই শহরেই কালীপ্রসন্ন সিংহ থেকে হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ বাংলায় মহাভারত অনুবাদ করেছিলেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলছিলেন, ‘‘সাহিত্যপ্রেমী বাঙালির কাছে বছরটা উল্লেখ্য। শঙ্খবাবুকে তো আরও আগে দেওয়া উচিত ছিল।’’ গত দু’-তিন বছর ধরেই শঙ্খবাবু জ্ঞানপীঠের জন্য প্রবল আলোচিত নাম। তিনি তো শুধু কবি নন, কবিতা নিয়ে নির্ভার প্রবন্ধও লেখেন। রবীন্দ্রনাথের গানে ‘আমি’ থেকে ‘তুমি’র যাতায়াত দেখাতে দেখাতে চমৎকার বুঝিয়ে দেন ‘এ আমির আবরণ’ বা রক্তকরবী বোঝাতে ‘কালের মাত্রা ও রবীন্দ্রনাটক’।
ছোটদের দুয়ারেও গিয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। কখনও তাঁর হাতে ‘ইচ্ছেপ্রদীপ’, কখনও বা ‘আমন ধানের ছড়া’। আর এক জ্ঞানপীঠ-প্রাপক বাঙালি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও ছোটদের জন্য ছড়া লিখেছেন, মহাশ্বেতা লিখেছেন পাঠ্য বই। ‘সহজ পাঠ’-এর দেশে জ্ঞানপীঠ সম্মানিতদের হাত দিয়ে আজও ছোটদের বই বেরোয়, এখানেই বাঙালির নিজস্ব মহাভারত!
ছবি: সন্দীপন চক্রবর্তী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy