Advertisement
E-Paper

তোলাবাজিতে বাধার মাসুল, বলছে স্বজন

একসময়ে হরিহর আত্মা ছিলেন দু’জনে। মিটিং-মিছিলে যাওয়া থেকে খাওয়া-দাওয়া, একসঙ্গেই কাটত দিনের বেশির ভাগ সময়। কিন্তু তাঁর নাম করে বন্ধুর তোলাবাজি করা মেনে নিতে পারেননি রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ আব্দুল আলিম। আর তার প্রতিবাদ করার জেরেই ঘরের ছেলেকে প্রাণ হারাতে হল বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের। রবিবার রাতে আর পাঁচটা দিনের মতোই ভাগ্নে হালিমের সঙ্গে মোটরবাইকে ফিরছিলেন তিনি।

শোকার্ত আব্দুল আলিমের পরিবারের লোকজন।—নিজস্ব চিত্র।

শোকার্ত আব্দুল আলিমের পরিবারের লোকজন।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০৩:২৩
Share
Save

একসময়ে হরিহর আত্মা ছিলেন দু’জনে। মিটিং-মিছিলে যাওয়া থেকে খাওয়া-দাওয়া, একসঙ্গেই কাটত দিনের বেশির ভাগ সময়। কিন্তু তাঁর নাম করে বন্ধুর তোলাবাজি করা মেনে নিতে পারেননি রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ আব্দুল আলিম। আর তার প্রতিবাদ করার জেরেই ঘরের ছেলেকে প্রাণ হারাতে হল বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের।

রবিবার রাতে আর পাঁচটা দিনের মতোই ভাগ্নে হালিমের সঙ্গে মোটরবাইকে ফিরছিলেন তিনি। পথে ৬-৭ জন দুষ্কৃতী গুলি চালায় তাঁর মাথায়, পেটে। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন আলিম ওরফে বাবলু। পুলিশের দাবি, প্রত্যক্ষদর্শী হালিম জানান, ওই দুষ্কৃতীরা তাঁকেও মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মারধর করে। তারপর পালাতে বলে। তিনি এগোতেই গুলি চালানোর শব্দ শুনতে পান। গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালায় দুষ্কৃতীরাও। রাতেই ছ’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়। সোমবার সন্ধ্যায় তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

ধৃতদের অন্যতম শেখ কলিমুদ্দিন ওরফে বাপ্পা। পাশের বাড়ির এই বাপ্পার সঙ্গেই বন্ধুত্ব ছিল বাবলু ওরফে আলিমের। খুনের ঘটনার পরেও এলাকার লোকজন বিশ্বাস করতে পারছেন না ওদের মধ্যে তিক্ততা ছিল। আলিমের মা নূর বানুর অভিযোগ, মাস দুয়েক আগে জানা যায় বাবলুর নাম করে দামোদর ও দ্বারকেশ্বরের বালিখাদান ও লাগোয়া চালকলগুলি থেকে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা তুলেছিল বাপ্পা ও তার দলবল। অভিযোগ পেয়ে সব পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠকও করেন বাবলু। সেখানে মাধবডিহি থানার ওসি বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও হাজির ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় নেতারাও ছিলেন। সেখানেই সবার সামনে উঠে আসে যে বাপ্পা টাকা তুলেছিল। এরপরেই দু’জনের সম্পর্কে ছেদ পড়ে বলে তাঁ মায়ের দাবি। নিহতের স্ত্রী, রুনাদেবীও জানান, সপ্তাহ খানেক আগে উচালন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উচালন ও একলাখি এলাকার বালি খাদান নিয়েও তাদের মতবিরোধ হয়। আলিম চেয়েছিলেন, টেন্ডার ডেকে বালি কে তুলবে তা ঠিক করা হোক। তাতে বাপ্পারা বাধা দেয় বলে অভিযোগ। এ নিয়ে মারধর, এমনকী এক জন হাসপাতালে ভর্তিও হন বলে দাবি। তিন চার দিন আগেও রায়না ২ বিডিও দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন। তবে সমাধান হয়নি।

বছর ১২ আগে আলিমের বিয়ে হয় রুনা লায়লার সঙ্গে। দুই ছেলের এক জন ছ’বছরের, আর একটি সাত মাসের। স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই একটা কথা বলছেন রুনা— ‘‘বিপদ আঁচ করে বারবার বারণ করেছিলাম বেরোতে। তাড়াতাড়ি ফিরতেও বলেছিলাম। কি যে হল।’’ রুনার অভিযোগ, ‘‘বাপ্পা ও তার দলবল সিপিএমের বিধায়ক বাসুদেব খানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার স্বামীকে খুন করেছে। অন্যায় করতে দেয়নি বলে মরতে হল একে।’’ নিহতের মায়েরও দাবি, ‘‘বারবার আমার ছেলের উপর আক্রমণ হয়েছে। দীর্ঘদিন ঘরছাড়াও ছিল। সিপিএমের লোকেরা বারবার মেরেছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত দু’মাসে তিন বার হামলার মুখে পড়তে হয়েছে বাবলুকে।’’ এলাকার লোকজনেদের দাবি, বাপ্পা প্রায়ই বলত, ‘তোকে খুন করে আমি সভাপতি হব।’

সিপিএমের নাম উঠলেও পুলিশের দাবি, বালিখাদান নিয়ে ঝামেলা আর তৃমমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই খুনের কারণ। রায়নার বাসিন্দা, জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকারও বলেন, ‘‘তৃণমূলের অন্তদ্বর্ন্দ্বের কারণেই সভাপতি খুন হয়েছেন। দ্বারকেশ্বর-দামোদরের বালির খাদান নিয়ে গোলমাল বলে মনে হচ্ছে।’’ খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিপিএমের বাসুদেব খানও। তবে তৃণমূলের জেলা সভপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘আলিম এলাকায় জনপ্রিয় ছিল। সংগঠনও বাড়ছিল। সেই কারণেই সিপিএম পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে।’’

ঘটনার পর থেকেই প্রত্যক্ষদর্শী হালিম অসুস্থ। আর ছ’বছরের ফারহান টানা বলে চলেছে, ‘‘আব্বা বর্ধমানে আছে। ফিরলে একসঙ্গে খানা খাব।’’

police raina gun bike trinamool tmc

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}