Advertisement
E-Paper

জুজুর নাম এনআরসি, একসঙ্গে থাকুন: সিদ্দিকুল্লা

একই সঙ্গে এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৫৩
ভিড় ভেঙেছে জেরক্সের দোকানে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

ভিড় ভেঙেছে জেরক্সের দোকানে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

নাগরিকপঞ্জির ধাক্কা সামলাতে ধর্মীয় বিভেদ ভুলে হাতে হাত ধরাই শ্রেয় মনে করছেন জমিয়তের রাজ্য সভাপতি তথা মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। মঙ্গলবার বহরমপুরে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের একতা সম্মেলনে এমনই জানালেন তিনি— ‘মসজিদের দরজা খুলে দিন। ঐক্য সম্প্রীতি রক্ষার প্রয়োজনে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-সহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে মসজিদে বৈঠক করুন।’

একই সঙ্গে এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি। ১১ জনের কমিটিতে ৫ জন অন্য ধর্মের প্রতিনিধিকে রাখার কথাও বলেন। এ ছাড়া ইমাম-মোয়াজ্জিনদের তাঁর পরামর্শ, ‘‘নমাজের পরে বা খুৎবার পরে দেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন। মানুষের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হোক।’’

সিদ্দিকুল্লা ছাড়াও রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেন, দুই সাংসদ আবু তাহের খান, আহমদ ইমরান হাসান, বৌদ্ধ ধর্মগুরু অরুনজ্যোতি ভিক্ষু, বিশ্বকোষের সম্পাদক পার্থ সেনগুপ্ত, বহরমপুর চার্চের ফাদার অরিজিৎ হালদার উপস্থিত ছিলেন সভায়। নাগরিকপঞ্জির সমালোচনা করে তাঁরা বলেন, ‘‘অসমে যা ঘটেছে তা পূর্ব পরিকল্পিত। এ বারে বাংলাকে কোণঠাসা করতে বিজেপি এগিয়ে আসবে। তবে এখানে সহজে এনআরসি লাগু হবে না। ইট মারলে পাটকেল খেতেই হবে।’’

এ রাজ্যে এনআরসির কোনও নির্দেশিকা এখনও আসেনি। তবে অসমে নাগরিকপঞ্জিকরণে যে কাগজপত্র লেগেছে—

১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগের নীচের দেওয়া তালিকার নিজের বা পূর্বপুরুষের যে কোনও একটি বৈধ কাগজ
দেখাতে হবে।
• ১৯৫১ সালের এনআরসি • ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত প্রকাশিত ভোটার তালিকায় নিজের কিংবা পূর্বপুরুষের নাম • জমি ও ভাড়াটের রেকর্ড • নাগরিকত্বের শংসাপত্র • স্থায়ী বসবাসের শংসাপত্র • উদ্বাস্তু পঞ্জিকরণ শংসাপত্র • পাসপোর্ট • এলআইসি • সরকারের ইস্যু করা যে কোনও লাইসেন্স, শংসাপত্র • সরকারি চাকরি ও কর্মনিযুক্তির শংসাপত্র • ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্ট
• জন্মের শংসাপত্র • বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগত শংসাপত্র • কোর্টের রেকর্ড

তাঁর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি রাজ্যে এনআরসি হতে দেবেন না। এটা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভাবছেন, আন্দোলন করছেন। তাই বলে আমরা নথিপত্র গুছিয়ে রাখব না?’’

এ ছাড়া বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে সার্কেল অফিসার কিংবা পঞ্চায়েত সচিবের শংসাপত্র এবং ১৯৭১ সালের আগের রেশন কার্ড প্রয়োজনীয় কাগজ হিসেবে গ্রহণ করা হবে। তবে সেই সঙ্গে উপরের যে কোনও একটা নথি থাকতে হবে। উপরের কাগজপত্র পূর্বপুরুষের থাকলে, উত্তর পুরুষের ক্ষেত্রে নীচের তথ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যোগসূত্র— • জন্মের শংসাপত্র • জমির কাগজপত্র • বোর্ড কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্র • ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, এলআইসির রেকর্ড • বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে সার্কেল অফিসার বা পঞ্চায়েত সচিবের শংসাপত্র • ভোটার তালিকা • রেশন কার্ড • এ ছাড়া আইনত গ্রহণযোগ্য যে কোনও সরকারি দস্তাবেজ।

বৌদ্ধ পণ্ডিত অরুজ্যোতি ভিক্ষু বলেন, ‘‘বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন এনআরসি করে মুসলিমদের দেশ থেকে বের করে দেবেন।’’

ওঁরা বলছেন

মিজানুর রহমান
হরিহরপাড়ার বাসিন্দা
ভোটার কার্ডে আমার নাম রয়েছে মিজানুর রহমান মণ্ডল, রেশন কার্ডে মিজানুর মণ্ডল এবং বিদ্যালয়ের শংসাপত্রে রয়েছে মিজানুর রহমান। সে সব সংশোধনের জন্য চরকির মতো ঘুরছি। মানসিক অবস্থা ভাল নেই।

প্রিয়ব্রত রাঢ়ী
বিএলআরও, বহরমপুর
গত কয়েক দিন ধরেই দেখছি, জমির রেকর্ড চেয়ে প্রচুর আবেদন জমা পড়েছে। অফিসে ভিড়ও হচ্ছে খুব। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আবেদনকারীদের একটা বড় অংশ ১৯৬০ সালের রেকর্ড চাইছেন। মঙ্গলবার রেকর্ড চেয়ে আটশো জন আবেদন করেছেন।

সুমন্তকুমার সাহা
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

এ রাজ্যেও এনআরসি হতে
পারে ভেবে মানুষের মনের মধ্যে এক অজানা আশঙ্কা, সামাজিক অস্থিরতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নানা রকম মানসিক সমস্যা হতে পারে। এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটতে পারে।

তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রথমে মুসলিমদের উপর বিজেপি এমন অন্যায় করতে চাইছে। পরে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈনদের উপরেও আক্রমণ করবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে।’’

NRC BJP Siddiqullah Chowdhury TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy