Advertisement
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
Partha Chatterjee and Arpita Mukherjee

‘চোখে চোখে কথা বলো’, অর্পিতার ইশারা, পার্থ জিভ ভ্যাঙালেন, ৪০ মিনিটের নির্বাক ‘টুরু লাভ’ কোর্টে

পার্থ আর অর্পিতার ঠিকানা এখন আলাদা আলাদা দুই জেল। মঙ্গলবার সেখান থেকেই ভার্চুয়াল শুনানিতে যোগ দেন দু’জনে। আর সেই সময়েই ইশারায়া টানটান প্রেমালাপ দেখা গেল।

চোখে চোখে কথা।

চোখে চোখে কথা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৩ ১৯:১২
Share: Save:

দুই জেলের বাসিন্দা দু’জনে। এখন সবাই জানেন যে ওঁরা একে অপরের ‘ঘনিষ্ঠ’। কেউ নিজে মুখে স্বীকার না করলেও, সব্বাই জানেন। কিন্তু মঙ্গলবার নগর দায়রা আদালত যা দেখল তাতে ‘ঘনিষ্ঠতা’র দাবি আরও বেশি করে সিলমোহর পেল। ভার্চুয়াল শুনানির মধ্যে দুই ক্যামেরার দুই প্রান্তে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে যে নির্বাক কথোপকথন হল, তাঁকে অনেকেই ‘প্রেমালাপ’ বলে দাবি করছেন। ‘অপা’র কাণ্ড দেখে কারও মনে পড়তে পারে কমল হাসান অভিনীত ‘পুষ্পক’ ছবির নির্বাক প্রেমের কথা।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে এ দিন দুপুরে শুরু হয় নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি। প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ভার্চুয়াল শুনানিতে যোগ দেন পার্থ। আর আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার থেকে যোগ দেন অর্পিতা। তখন দুপুর ঠিক ২টো ৫০ মিনিট। আদালতের স্ক্রিনে দেখা যায় পার্থ ও অর্পিতাকে। অডিয়ো বন্ধই থাকে। যে যখন কথা বলে, তখন তাঁর ক্যামেরার অডিয়ো অন করা হয়। তবে ভিডিয়ো সব সময়েই দেখা যায়। সেই সুযোগে কারও দেখার তোয়াক্কা না করেই চোখে চোখে কথা বললেন পার্থ ও অর্পিতা।

প্রথম দর্শনেই একে অপরকে দেখে মুচকি হাসেন। ইশারা একে অপরকে যেন প্রশ্ন করেন, ‘‘বন্ধু, কী খবর বল?’’ কুশল বিনিময় হয় চোখে চোখেই। দু’জনেই জানান, ভালই আছেন। ২টো ৫৪ মিনিট নাগাদ পার্থ ইশারায় জানতে চান, অর্পিতা খেয়েছে তো! ঘাড় নেড়ে একই প্রশ্ন করেন অর্পিতা। দু’জনেরই ঠোঁটে লেগে হাসি। অনেক দিন পরে দেখা হওয়ার হাসি। এই সময়ে অর্পিতা জানতে চান, পার্থ কিছু শুনতে পাচ্ছেন কি না। একই প্রশ্ন আসে ও দিক থেকেও। দু’জনেই জানান ‘না’। সবটাই কিন্তু চলছে চোখ আর হাতের ইশারায়।

এর পরেই সেই নাটকীয় মুহূর্ত। পার্থ জিভ ভ্যাঙান অর্পিতার দিকে তাকিয়ে। হেসে গড়িয়ে পড়তে পড়তেই অর্পিতার আবার ইঙ্গিতে প্রশ্ন, খাওয়া হয়েছে কি না। এ বার আর আগের মতো জবাব না দিয়ে হাতের মুদ্রায় ‘হার্ট সাইন’ দেখান। আবার হাসিতে গড়িয়ে পড়ার অবস্থা অর্পিতার। তখনই একজন ফিসফিস করে বলেন, ‘‘টুরু লাভ!’’

এ বার নাটকের দ্বিতীয় অঙ্ক। মঙ্গলবার পার্থর পরনে ছিল নীল রঙের ফতুয়া। সেটা কি অর্পিতার দেওয়া উপহার? না কি ‘নীল রং ছিল ভীষণ প্রিয়’ গানটা ওঁদের বড় প্রিয়? পার্থ নিজের পরনের ফতুয়াটা দেখাতেই খুশি খুশি মুখ দেখা যায় অর্পিতার। মাথা নেড়ে সম্মতিও জানান।

এত দূর থেকে কি আর সব কথা বলা যায়! ইশারায় তো সব প্রশ্ন করাও যায় না। কিন্তু খোঁজ নেওয়া যায়। ঘরোয়া মেয়ের মতোই অর্পিতার ইশারায় ফের প্রশ্ন, পার্থর চা খাওয়া হয়েছে কি না। ঘড়িতে তখন ৩টে বেজে ১০ মিনিট। চায়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পার্থ নিজের বুকের বাঁ দিকে আঙুল দিয়ে কী যেন লেখেন। কেউ না বুঝলেও সে ইঙ্গিত কি অর্পিতা বুঝেছিলেন! হাসতে থাকেন দু’জনেই।

আচমকা বার্তালাপে বিঘ্ন। ৩টে ১২ মিনিট নাগাদ পার্থ স্ক্রিনের নেট যোগাযোগ চলে যায়। অর্পিতা তখন দৃশ্যতই অন্ধকার স্ক্রিনে পার্থকে খুঁজছেন। সামনে এগিয়েও আসেন। যে-ই না ফের পার্থকে দেখা গিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে এক মুখ হাসি। সঙ্গে স্বস্তির আভাস।

৩টে ১৭ মিনিট। চুলের গোছা পিঠ থেকে টেনে সামনে নিয়ে এলেন অর্পিতা। পার্থর কি এমনটাই ভাল লাগে! কে জানে! তবে নিজের চুলটা গুছিয়ে রেখেই পার্থের গোঁফটা বেশ সুন্দর হয়েছে বলে ইশারা করেন অর্পিতা। কিন্তু তার পরে ফের নিভে যায় পার্থের স্ক্রিনের আলো। অর্পিতার মুখের আলোও যেন ঝুপ করে নিভে যায়।

পার্থের স্ক্রিন আর অর্পিতার মুখে আলো জ্বলল ৩টে ২২ মিনিটে। কেন এমন হচ্ছে? জানতে চান অর্পিতা। হাসিমুখে পার্থের জবাব, চা খাচ্ছিলাম। এর পরেই ক্লাইম্যাক্স। অর্পিতা নিজের ঠোঁটে হাত রেখে কিছু কি চাইলেন! আর পার্থ কপট রাগ দেখিয়ে নিজের মাথার উপর হাত ঘুরিয়ে ইশারায় যেন বলেন, মাথাটা কি খারাপ হয়ে গিয়েছে?

এর পরে বলতে শুরু করলেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। ঠিক যেন, ‘কাবাব মে হাড্ডি’। থেমে যায় ওঁদের কথা (মানে ইশারা)। দু’জনেই মন দেন শুনানিতে। ৩টে ৩০ মিনিট। ৪০ মিনিট পার করে শুনানি শেষ। দেখা হওয়াও শেষ। যেতে যেতে পার্থ ‘থামস আপ’ দেখান অর্পিতাকে। আর অর্পিতা? ইশারায় কিছু লিখতে বললেন। কী বললেন তিনি? পৌঁছে চিঠি দিও?

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee Arpita Mukherjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy