Advertisement
০৫ মে ২০২৪

চট-ত্রিপল থেকে র‌্যাম্প, বদল দেখছে সিঙ্গুর

দশ বছর আগে ছিল ত্রিপল আর চটের মঞ্চ। তার পিছন দিকে টিনের দেওয়াল। বাজেট বলতে সাকুল্যে কয়েক হাজার টাকা।আর আজ, বুধবার সেই মঞ্চের বাজেট কোটি ছুঁয়েছে। ৮০ ফুট লম্বা, ৬০ ফুট চওড়া। অন্তত আট ফুট উঁচু সেই মঞ্চে পাইন কাঠের র‌্যাম্প বেয়ে তর তর করে সেখানে উঠে যাচ্ছেন মন্ত্রীরা।

২০০৮ সালে এই সিঙ্গুরেই বাঁশ-কাপড়ের মঞ্চে বক্তৃতা করছেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী। —ফাইল চিত্র

২০০৮ সালে এই সিঙ্গুরেই বাঁশ-কাপড়ের মঞ্চে বক্তৃতা করছেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী। —ফাইল চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০১
Share: Save:

দশ বছর আগে ছিল ত্রিপল আর চটের মঞ্চ। তার পিছন দিকে টিনের দেওয়াল। বাজেট বলতে সাকুল্যে কয়েক হাজার টাকা।

আর আজ, বুধবার সেই মঞ্চের বাজেট কোটি ছুঁয়েছে। ৮০ ফুট লম্বা, ৬০ ফুট চওড়া। অন্তত আট ফুট উঁচু সেই মঞ্চে পাইন কাঠের র‌্যাম্প বেয়ে তর তর করে সেখানে উঠে যাচ্ছেন মন্ত্রীরা। পিছনে বন্দুকধারী সান্ত্রী। সম্ভ্রমে ঝলসানো চোখ নিয়ে আম জনতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন সেই মঞ্চের নির্মাণ শৈলী। পেল্লায় সব আলোর ঝলকানি চোখ ঝলসে দিচ্ছে সিঙ্গুরবাসীর।

সিঙ্গুরে জাতীয় সড়কের উপর মাথা তুলে দাঁড়ানো মঞ্চটাই মঙ্গলবার ছিল পথচলতি মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। পথচলতি গাড়ির সওয়ারিরাও মোবাইলে দেদার ছবি তুলেছেন সারাদিন। শেষ পর্যন্ত সেই আগ্রহে রাশ টানতে পুলিশকে হাতও লাগাতে হয়।

গত তিনদিনে একটু একটু করে সিঙ্গুরে উৎসব-মঞ্চ সাজিয়ে তুলেছেন ডেকরেটরের কর্মীরা। অন্তত তিনশো অতিথিকে ঠাঁই করে দিতে হবে সেখানে। সব দিক থেকেই সবাইকে যাতে দর্শকরা দেখতে পান, সেই কথা ভেবেই তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই সেই মঞ্চে যোগ হয়েছে আলো। মাথা খোলা মঞ্চের চারিদিকে অ্যালুমিনিয়াম স্ট্যান্ডের উপর লাগানো হয়েছে আলো। মঞ্চের উপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ বিশাল ব্যানার যত্নে ঝুলিয়েছেন ভক্তেরা।

মঙ্গলবার জোরকদমে চলছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভামঞ্চ তৈরির কাজ।

তৈরি র‌্যাম্প, মঞ্চ ঘিরে লাগানো হয়েছে সারি সারি আলো। ছবি: দীপঙ্কর দে

শুধু মঞ্চ সাজানো নয়, সিঙ্গুরে টাটাদের প্রকল্প এলাকা জুড়েই মোট ১২টা ‘জায়ান্ট স্ক্রিন’ থাকছে। মঞ্চে ঠিক কী হচ্ছে, তা যাতে দূরে বসা দর্শকেরাও পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখতে পান, তার জন্যই এই বিপুল আয়োজন। এক্সপ্রেসওয়েতে মমতার যাত্রাপথে তৈরি করা হয়েছে ওয়েলকাম গেট। সিঙ্গুর উৎসবকে সব অর্থেই রঙিন করে তুলতে চেষ্টার কসুর করছেন না কর্মীরা। মঙ্গলবারও সিঙ্গুরে দিনভর ছিল মন্ত্রীদের আনাগোনা। কখনও পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার কখনও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সন্ধ্যায় সিঙ্গুরে হাজির হন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আয়োজনে যাতে কোনও খামতি না থাকে তার
চেষ্টা চলছে।

তবে ২০১৬-র এই এলাহি আয়োজনের সামনে দাঁড়িয়ে সিঙ্গুরের তৃণমূলের এক পোড়খাওয়া নেতা এ দিন মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন ২০০৮ সালের কথা। এখন জাতীয় সড়ক জুড়ে মঞ্চ হলেও তখন আদৌ মঞ্চ বাঁধারই কোনও অনুমতি ছিল না তাঁদের। মমতা নিজেই নানা জনসভায় বারে বারেই সে কথা বলেছেন। সানাপাড়ায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসের নয়ানজুলির ধারে সেই সময় তৈরি হয়েছিল মমতার সেই মঞ্চ। সেই মঞ্চের একপাশের দেওয়াল ছিল টিনের। আয়োজনে এখনকার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কোনও তুলনা চলে না সেই মঞ্চের। জাতীয় সড়কে মমতার মঞ্চের পাশেই ছোট ছোট আরও বেশ কিছু মঞ্চ বাধা হয়েছিল সে সময়। চট আর পাতলা ত্রিপল সেই সব মঞ্চও ছিল নিতান্তই সাদামাটা। খরচেরও বিস্তর ফারাক। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসন এক সংস্থাকে পুরো মঞ্চ এবং সাউন্ড সিস্টেমের দায়িত্ব দিয়েছে। খরচ কোটি টাকারও বেশি।’’

মঙ্গলবার বিকেলে গাড়ি থেকে নেমে তৃণমূল নেতা বেচারাম মান্না একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন বহুমূল্য এই মঞ্চের দিকে। পাশ থেকে এক জন বললেন, ‘‘বেচাদা, ১০ বছর আগের কথা মনে আছে!’’ বেচাদার সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘‘থাকবে না! ১০ বছরে দেখতে দেখতে সব পাল্টে গেল। কোত্থেকে কী হয়ে গেল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Singur Mamata banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE