Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মুলুকচাঁদের দেখানো জায়গাতেই হাড়গোড়

বর্ধমান ও বাঁকুড়া দুই জেলার পুলিশেরই দাবি, কঙ্কালটি বাঁকুড়ার আশ্রমপাড়ার মেয়ে পুজা সেনের। হাড়গোড়ের সঙ্গে শাঁখা, পলার টুকরোও পাওয়া গিয়েছে। ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য কঙ্কালটি বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুজার মা ম়ঞ্জু বাউড়ি বলেন, ‘‘এত দিন মেয়েকে ফিরে পাওয়ার একটা আশা ছিল। এ বার সব গেল। ওই ছেলের ফাঁসি চাই।’’

পূজা সেন। ফাইল চিত্র

পূজা সেন। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:১০
Share: Save:

তিন বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন তরুণী। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তাঁর স্বামী দাবি করেছিলেন, স্ত্রীকে খুন করে দেহ পুঁতে রেখেছেন বাড়ির কাছেই একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে। কিন্তু খোঁড়াখুঁড়ি করেও দেহ পায়নি পুলিশ। ফের জেরা করার পরে সোমবার ওই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হল কঙ্কাল।

বর্ধমান ও বাঁকুড়া দুই জেলার পুলিশেরই দাবি, কঙ্কালটি বাঁকুড়ার আশ্রমপাড়ার মেয়ে পুজা সেনের। হাড়গোড়ের সঙ্গে শাঁখা, পলার টুকরোও পাওয়া গিয়েছে। ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য কঙ্কালটি বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুজার মা ম়ঞ্জু বাউড়ি বলেন, ‘‘এত দিন মেয়েকে ফিরে পাওয়ার একটা আশা ছিল। এ বার সব গেল। ওই ছেলের ফাঁসি চাই।’’

২০১৫-র ১৪ এপ্রিল বাঁকুড়া মহিলা থানায় জামাই মুলুকচাঁদ সেন ও তাঁর বাবা মায়ের বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণের মামলা করেন পুজার বাবা-মা। পুলিশ মুলুকচাঁদের বাবা-মাকে ধরলেও ফেরার ছিল সে। গত সপ্তাহে বর্ধমান শহর থেকে তাকে ধরে পুলিশ। পুলিশের দাবি, বারবার জেরায় বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে ধৃত। কখনও বলেছে স্ত্রীকে মেরে ডিভিসির খালে ফেলে দিয়েছে, আবার কখনও রায়নার সেহেরাবাজারে খেত জমিতে গলা টিপে খুন করে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে। শেষে জানায়, বেলনা গ্রামেই একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির ভিতর স্ত্রীকে মেরে বালি চাপা দিয়েছিল সে। সেই মতো বাঁকুড়া মহিলা থানা ও বর্ধমান থানার শক্তিগড় ফাঁড়ির পুলিশ যৌথ ভাবে মুলুকচাঁদের দেখানো জায়গা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। কিন্তু দেহ মেলেনি।

পুজার বাড়ির লোকেদের দাবি ছিল, অভিযোগ দায়ের হওয়ার দিন দুয়েক আগেই আশ্রমপাড়ার বাপের বাড়ি থেকে পুজাকে নিয়ে যায় মুলুকচাঁদ। তারপর থেকে মেয়ে কোথায় জিজ্ঞেস করলেই নানা গল্প ফাঁদত। বাঁকুড়া জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “শুক্র ও শনিবার রাতভর জেরা করা হয় তকে। জেরায় সে জানায়, রায়নার সেহেরবাজার থেকে ফেরার সময় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছিল। সেই সুযোগে নির্মীয়মাণ ওই বাড়ির কাছে পুকুর লাগোয়া একটি চায়ের গুমটির পিছনে গলা টিপে পুজাকে মারে সে। তারপর একটি বালির বস্তায় ভরে জানালা টপকে ওই বাড়ির একটি ঘরে বস্তা পুঁতে দেয়।’’ এরপরেই রবিবার বিকেলে বাঁকুড়া মহিলা থানার পুলিশ বর্ধমানের বেলনা গ্রামে ওই বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায়। নির্দিষ্ট জায়গা মেলার পরে চক দিয়ে তা চিহ্নিত করে রাখা হয়। সোমবার দুপুর থেকে পুলিশ ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে।

এখন ওই বাড়িতে যে পরিবার থাকে তাঁদের চৌকি, আলমারি বের করে ঘর ফাঁকা করে দেওয়া হয়। বেলা গড়াতেই মুলুকচাঁদকে নিয়ে হাজির হয়ে যায় বাঁকুড়ার মহিলা থানার পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, পঞ্চায়েতের কর্তারা। শুরু হয় মেঝে খোঁড়া। দু’ফুট খোঁড়ার পরেই পচে যাওয়া একটি বস্তা তুলতেই হাড়গোড় বেড়িয়ে পড়ে। বস্তা থেকে বেরোয় শাঁখা-পলা ও সস্তার গলার হার। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “৮৮টি হাড়, মাথার খুলি উদ্ধার হয়েছে।’’

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘অভিযুক্তের দেখানো জায়গা থেকেই কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে। কঙ্কাল পুজার কি না তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Belna Village Skeleton Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE