স্নাইপার-রাইফেল নিয়ে ঘাপটি মেরে থাকবেন নিখুঁত নিশানাবাজেরা। মূলত উঁচু বাড়ির ছাদের মতো বিভিন্ন সুবিধাজনক জায়গায়। আর এক দল রক্ষী বাইনোকুলার দিয়ে তীক্ষ্ণ নজরদারি চালাবেন আকাশে। হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে এসে পড়া বিপজ্জনক আকাশযানকে তাঁরাই চিহ্নিত করবেন। তৎক্ষণাৎ সঙ্কেত যাবে স্নাইপারদের কাছে। টেলিস্কোপিক রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে সেই বিপদকে আকাশ থেকে মাটিতে নামাবেন তাঁরা।
প্রধানমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপি বা মুখ্যমন্ত্রী-সহ ভিআইপি-দের প্রকাশ্য সভা-অনুষ্ঠানের আশপাশে এ বার স্নাইপার মোতায়েন রাখার পরামর্শ দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের সহ অধিকর্তা যশপাল সিংহ সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যকে এই মর্মে বার্তা পাঠিয়েছেন। বার্তায় বলা হয়েছে, এক বা দু’আসনের ছোট, হাল্কা বিমান (মাইক্রোলাইট এয়ারক্র্যাফ্ট) নিয়ে ভিআইপি-দের উপরে আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা। সেই সম্ভাব্য বিপদ নির্মূল করতেই স্নাইপার বহালের সিদ্ধান্ত।
বস্তুত মাঝ আকাশে আস্ত যাত্রীবাহী বিমানের দখল নিয়ে তাকে ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কী ভাবে ধ্বংসলীলা চালানো যায়, ৯/১১-র জঙ্গি হানায় মহম্মদ আটা ও তার সঙ্গীরা তার নমুনা দেখিয়ে গিয়েছে। তবে ভিআইপি-কে লক্ষ্য করে ছোট বিমান নিয়ে যে ধরনের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা করছেন, তা একটু অন্য রকম। কী রকম?
আইবি-র আশঙ্কা, ছোট বিমানে আইই়ডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বেঁধে সেটি নিয়ে আত্মঘাতী জঙ্গিরা অনুষ্ঠান বা সভাস্থলে আছড়ে পড়বে বা ‘ক্র্যাশ ল্যান্ড’ করাবে। এতে বিস্ফোরণ অবধারিত। এই সব বিমানের উড়তে-নামতে জায়গাও লাগে কম। মাইক্রোলাইট এয়ারক্র্যাফ্ট খুব বেশি হলে সমুদ্রপৃষ্ঠের ৮৮০০ মিটার উঁচু দিয়ে উড়তে পারে। ‘‘কিন্তু কম উচ্চতায় ওড়ে বলে এগুলো রেডারে ধরা পড়ে না।’’— জানাচ্ছেন এক আইবি-কর্তা।
গোয়েন্দাদের দাবি: ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, লস্কর-ই-তইবা ও লস্কর-ই-ঝাঙ্গভি-র মতো জঙ্গি সংগঠন এমন ছোট বিমান নিয়ে ভারতে আত্মঘাতী হামলার ছক কষেছে। তাদের ‘টার্গেট’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ কয়েক জন ভিআইপি। আইবি-র এক শীর্ষ অফিসারের বক্তব্য: জঙ্গিরা এখন হামলার নিত্য-নতুন পদ্ধতি বার করছে। আকাশপথে এমন হামলা হলে কী ভাবে প্রতিরোধ করা যাবে, কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে তার মহড়া দেওয়া দরকার।
সতর্কতার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চায়, মাইক্রোলাইট এয়ারক্র্যাফ্টগুলি চালানোর ক্ষেত্রে ডিজিসিএ (ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন)-র নির্দেশাবলি মেনে চলাটা নিশ্চিত করতে হবে। যেমন, বিমানের মালিক কিংবা চালক, অর্থাৎ বৈধ এক্তিয়ারধারী ব্যক্তিই শুধু বিমান চালাতে পারবেন। কোথা দিয়ে উড়বেন, তা আগাম জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিতে হবে, এবং অনুমোদিত ‘ফ্লাইট প্ল্যান’ মেনে চলতে হবে কঠোর ভাবে। মন্ত্রকের অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা, ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সরঞ্জাম ও অস্ত্র বহন করা যাবে না। বিমান রাখা থাকবে শুধু নির্দিষ্ট বিমানঘাঁটি বা অনুমোদিত জায়গায়।
এত সবের পরেও কোনও-না-কোনও ফাঁক গলে বিমান নিয়ে জঙ্গিরা চলে আসতে পারে ভিআইপি-র সভাস্থলের কাছাকাছি। এই সম্ভাবনা মাথায় রেখেই বিশেষ সুরক্ষা-বন্দোবস্তের সুপারিশ। স্নাইপার মোতায়েন ছাড়াও যার তালিকায় রয়েছে বিপদঘন্টি লাগানো ক্যামেরা বসানোর কথা, যা কিনা সর্বক্ষণ আকাশে নজরদারি চালাবে, আর বিপদ চিহ্নিত করা মাত্র বাজবে ঘন্টি। সভাস্থলের কাছে বসবে একাধিক ওয়াচ টাওয়ার, যেখানে থাকবে পর্যাপ্ত আলো, মোতায়েন থাকবেন দূরপাল্লার আগ্নেয়াস্ত্রধারী রক্ষীরা। রাতের আঁধারেও অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে সক্ষম বাইনোকুলার দিয়ে আকাশে টানা নজরদারি চালানো জরুরি। ছোট বিমান নিয়ে ওড়া যেতে পারে, ভিআইপি-র সভাস্থলের কাছে এমন খোলা জায়গাগুলোও নজরে রাখা চাই।
বিমানবন্দর-সূত্রের খবর, কলকাতায় শুধু বেহালা ফ্লাইং ক্লাবে এক আসনের দু’টো মাইক্রোলাইট বিমান আছে। তবে একটাও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নয়। এটাই আপাতত স্বস্তির কারণ। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ির কথায়, ‘‘বেহালার ওই দু’টো বিমানই এনসিসি-র। গত মাসেও উড়েছিল।’’
তবে কলকাতার দুই পড়শি শহর পটনা ও রাঁচিতে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন এমন বেশ ক’টা বিমান আছে বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy