Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বিষ পাচারের হিড়িক, রাজ্যের রাশ সর্পোদ্যানে

তক্ষক পাচার চলছিলই। তার সঙ্গে ইদানীং জুড়ে গিয়েছে সাপের বিষের চোরাকারবারও! বন দফতরের কর্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে উদ্বেগজনক ভাবে সাপের বিষের চোরাকারবার বেড়েছে। তার ফলে রাজ্যে নতুন বেসরকারি সর্পোদ্যান খোলা নিয়ে ভীষণ আশঙ্কায় ভুগছেন বনকর্তারা। ‘‘এক বছরে সর্পোদ্যান খোলার জন্য বেশ কয়েকটি আর্জি জমা পড়েছে।

বন্ধ সর্পোদ্যান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে সাপ। —ফাইল চিত্র।

বন্ধ সর্পোদ্যান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে সাপ। —ফাইল চিত্র।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৮
Share: Save:

তক্ষক পাচার চলছিলই। তার সঙ্গে ইদানীং জুড়ে গিয়েছে সাপের বিষের চোরাকারবারও! বন দফতরের কর্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে উদ্বেগজনক ভাবে সাপের বিষের চোরাকারবার বেড়েছে। তার ফলে রাজ্যে নতুন বেসরকারি সর্পোদ্যান খোলা নিয়ে ভীষণ আশঙ্কায় ভুগছেন বনকর্তারা। ‘‘এক বছরে সর্পোদ্যান খোলার জন্য বেশ কয়েকটি আর্জি জমা পড়েছে। কিন্তু আমরা এখনই কাউকে অনুমতি দিচ্ছি না,’’ বলছেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) প্রদীপ ব্যাস।

সাপের বিষের চোরাকারবার কতটা লাভজনক এবং তার বহর কত বড়, তা বোঝাতে গিয়ে গত বছরের জুন মাসের একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন বন দফতরের এক কর্তা। তিনি জানাচ্ছেন, ২০১৫ সালের জুনে ছ’জন পাচারকারীকে পাকড়াও করা হয়েছিল শিলিগুড়ির কাছে। তাদের কাছ থেকে গোখরো আর কেউটে সাপের ন’পাউন্ড বিষ বাজেয়াপ্ত করা হয়। তার দাম কয়েক কোটি টাকা। বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে সাপের বিষ কাজে লাগে। তাই আইনি কেনাবেচা তো হচ্ছেই। সেই সঙ্গে এশিয়ার বহু দেশে দেদার চলে এর চোরাকারবারও। উত্তরবঙ্গ থেকে বাজেয়াপ্ত করা ন’পাউন্ড সাপের বিষের দাম কয়েক কোটি টাকা বলেই বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।

সর্পোদ্যান নিয়ে রাজ্যের এই সাবধানি মনোভাবের পিছনে অবশ্য অন্য একটি ঘটনাক্রমের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন বন দফতরের একাংশ। তাঁরা বলছেন, রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ এক সর্পবিশারদ (যিনি রাজ্যের বন্যপ্রাণ উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য ছিলেন) বেআইনি ভাবে সর্পোদ্যান চালাতেন। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের নির্দেশ পেয়ে শেষ পর্যন্ত সেটি বন্ধ করতে হয় রাজ্যকে। ‘‘ফের কোনও সর্পোদ্যান যে এমন কোনও বেআইনি কারবারে জড়িয়ে পড়বে না, তার গ্যারান্টি কোথায়,’’ বলছেন রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার এক কর্তা।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞেরা জানান, সাপের বিষ পাচারের পাশাপাশি চোরাকারবারিদের কবলে পড়ছে আরও অনেক সরীসৃপ। তার মধ্যে যেমন রয়েছে তক্ষক, রয়েছে কচ্ছপ, অজগরও। সম্প্রতি সরীসৃপ সংক্রান্ত একটি কর্মশালায় ভারতীয় প্রাণী সর্বেক্ষণের অধিকর্তা কৈলাস চন্দ্র বলেন, তক্ষক বা সাপের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে বিভিন্ন ওষুধ তৈরি করা যায়, এমন একটি ধারণা চালু রয়েছে। সেই জন্যই পাচারকারীরা আরও বেশি উৎসাহ পাচ্ছে। বন দফতরের কর্তারা বলছেন, বন্যপ্রাণ রক্ষায় জনমানসে সচেতনতা না-বাড়লে এবং প্রত্যঙ্গ বা বিষ পাচার রোধ অভিযানে সাধারণ মানুষকেও সামিল করতে না-পারলে সরীসৃপদের বাঁচানো যাবে না।

সরীসৃপ রক্ষায় বন দফতর কতটা তৎপর? চাইলেও ওই সব প্রাণীকে বাঁচানোর কাজে সময়মতো ঝাঁপিয়ে পড়া যে সম্ভব হয় না, বনকর্তাদের বক্তব্যে সেই ইঙ্গিত আছে। তাঁরা মানছেন, অনেক সময়েই সাপ, তক্ষক উদ্ধারের আবেদন আসে। কিন্তু কর্মীর অভাবে তড়িঘড়ি অকুস্থলে পৌঁছনো যায় না। এই অবস্থায় বিভিন্ন এলাকার ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গ়ড়ার ভাবনাচিন্তা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Snake venom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE