Advertisement
E-Paper

‘অভিযুক্তরা মুক্ত, ছেলেটার আত্মা শান্তি পাবে কি?’

প্রথম জন সরোজ চৌধুরী। দ্বিতীয় জন, তাঁর স্ত্রী মিতাদেবী। বারাসতের বামনগাছিতে বছর চারেক আগে সমাজবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হওয়া কলেজছাত্র সৌরভ চৌধুরীর বাবা-মা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৩
স্মৃতি: ছেলে সৌরভের ছবির সামনে মা মিতা চৌধুরী। শুক্রবার, বামনগাছিতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

স্মৃতি: ছেলে সৌরভের ছবির সামনে মা মিতা চৌধুরী। শুক্রবার, বামনগাছিতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

রায় ঘোষণার পরে আদালত থেকে বাড়ি ফেরা ইস্তক একটি কথাও বলেননি তিনি। আর এক জন ঘরে বসে ফোনে রায় জেনেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বাড়ি ফিরে প্রথম জন বললেন, ‘‘এই রায় কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিল। এক বার ফাঁসির নির্দেশ হওয়ার পরেও যারা বেকসুর খালাস হল, তারা কি আমাদের ছেড়ে দেবে?’’ শুনে অন্য জনের চোখে তখন জল।

প্রথম জন সরোজ চৌধুরী। দ্বিতীয় জন, তাঁর স্ত্রী মিতাদেবী। বারাসতের বামনগাছিতে বছর চারেক আগে সমাজবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হওয়া কলেজছাত্র সৌরভ চৌধুরীর বাবা-মা। ওই হত্যাকাণ্ডে আট জনকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল বারাসত আদালত। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় অভিযুক্তেরা। এ দিন অবশ্য হাইকোর্ট ৬ জনকে যাবজ্জীবনের সাজা শুনিয়েছে। বেকসুর খালাস করেছে ২ জনকে।

শুরু থেকেই অবশ্য অপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে এসেছিলেন সৌরভের পরিবার। বাসিন্দারাও সেই দাবিতে পথে নেমেছিলেন। নিম্ন আদালতের রায় তাঁদের খুশি করলেও এ দিন উচ্চ আদালতের রায় শোনার পরে পাড়ায় নেমে এসেছে বিষণ্ণতা। সন্ধ্যায় সৌরভের বাড়িতে ভিড় করেছিলেন বন্ধু ও প্রতিবেশীরা। সরোজবাবুর বন্ধু জগদীশ হালদার বলেন, ‘‘কী নির্মম ভাবে খুন করেছিল এত ভাল ছেলেটাকে। শুধু খারাপ কাজের প্রতিবাদ করেছিল বলে।’’ জগদীশবাবু বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের যদি সর্বোচ্চ সাজাই না হল, তা হলে ছেলেটার আত্মা কি শান্তি পাবে?’’

রায়ে সন্তুষ্ট নন দেবু দেবনাথের মতো সৌরভের বন্ধুরাও। তাঁদের কথাবার্তায় বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে সে দিনের প্রসঙ্গ। অপরাধীদের ধরার দাবিতে দিনের পর দিন সেই লড়াই। দেবু বলেন, ‘‘আজ এলাকায় চোলাই-সাট্টার ঠেক বন্ধ হয়েছে। কিন্তু যার প্রাণের বিনিময়ে ভাল আছি, সেই বন্ধুর খুনিরাই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে।’’

২০১৪-র ৪ জুলাই সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে থেকে সৌরভকে তুলে নিয়ে যায় শ্যামল সরকার ও তার সঙ্গীরা। কারণ, দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সৌরভ। ওই রাতেই তাঁকে খুন করে রেললাইনে ফেলে রাখা হয়। ভোরের ট্রেনের চাকায় দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ওই পড়ুয়ার। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে একে একে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে। তারাপীঠ থেকে ধরা হয় বেলেঘাটার কুখ্যাত দুষ্কৃতী শিশির মুখোপাধ্যায় ও তার সঙ্গে থাকা মূল অভিযুক্ত শ্যামলকে।

ধৃতদের মধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত উত্তম শিকারি পুলিশের কাছে সব স্বীকার করে। তাকেই রাজসাক্ষী করে নিম্ন আদালতে বিচার চলে দু’বছর। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ১৪ জনের মধ্যে আট জনকে ফাঁসির নির্দেশ দেয় বারাসত আদালত। তাদের মধ্যে শ্যামল কর্মকার ছাড়াও ছিল সুমন সরকার, সুমন দাস, অমল বারুই, রতন সমাদ্দার, তারক দাস, সোমনাথ সর্দার ও তাপস বিশ্বাস। আর এক অভিযুক্ত রাকেশ বর্মণের যাবজ্জীবন ও পলি মাইতি, শিশির মুখোপাধ্যায় ও রতন দাস নামে তিন অভিযুক্তের পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়।

নিম্ন আদালতের ওই রায়ে তাঁরা খুশি ছিলেন বলে এ দিন জানিয়েছেন সৌরভের পরিজনেরা। সৌরভের মা মিতাদেবী বলেন, ‘‘মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ এসেছে, সঙ্গে হুমকিও। এখন তো আমরা মোটে তিন জন। ছাড়া পেয়ে ওরা ফিরে এসে কী করবে কে জানে!’’ গোটা রাস্তা কথা বলেননি আর এক জন। সৌরভের দাদা সন্দীপ। মাঝেমধ্যে চোখ মুছছিলেন। মায়ের কথা শুনে শুধু বলেছেন, ‘‘আমি তো এখনও আছি।’’

দল গড়ে এলাকায় সমাজবিরোধী কাজকর্মের প্রতিবাদ করার শপথ নিয়েছিলেন বামনগাছির এই সন্দীপ-সৌরভেরাই।

Sourav Chowdhury সৌরভ চৌধুরী Murder Case Anti Socials Calcutta High Court Bamangachi বামনগাছি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy