বিধানসভার ভিতরে এবং বাইরে স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা। বিধানসভার অধিবেশনে স্পিকার নিরপেক্ষ ভূমিকা না নেওয়ার প্রতিবাদে বিরোধীরা যেমন কার্য উপদেষ্টা (বিএ) কমিটির বৈঠক বয়কট করছে, তেমনই বাইরে দলীয় অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি ঘিরে সাংবিধানিক প্রশ্ন তুলে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হওয়ার তোড়জোড় চলছে। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার বিধানসভার অধিবেশনে হইচইয়ের কেন্দ্রে ছিলেন স্পিকারই।
অনাস্থা প্রস্তাবের দিন যে ভাবে তাঁর বক্তৃতার অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ রোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। তারও আগে দলত্যাগী বিধায়কদের নিয়ে মামলাও করেছেন তিনি। বিধানসভার বিএ কমিটির বৈঠকে বিরোধীদের আপত্তি গ্রাহ্য করা হয় না বলে সেই বৈঠকে যাওয়া অর্থহীন— এই মর্মে এ দিন স্পিকারকে চিঠিও দেন মান্নান। এই সংঘাতের পরিবেশে নয়া মাত্রা যোগ করেছে বারুইপুরে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় কিছু পঞ্চায়েতের সদস্যের দলবদলের অনুষ্ঠানে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি। দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত হয়েও নিরপেক্ষতাই যে পদের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা, সেই আসনে থেকে স্পিকার কী ভাবে বিরোধী দল ছেড়ে আসা সদস্যদের হাতে শাসক দলের পতাকা তুলে দেন— এই প্রশ্নেই রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে চিঠি পাঠাচ্ছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। সাক্ষাতের সময় ম়ঞ্জুর হলে আজ, বুধবার রাজভবনে যাওয়ার কথা তাঁর।
অধিবেশনের উল্লেখ-পর্বে এ দিন সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলতে চান, দলত্যাগ-বিরোধী আইনের পরোয়া না করে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের ভাঙিয়ে চলেছে। কিন্তু স্পিকার তাঁকে অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে কক্ষত্যাগ করেন কংগ্রেস ও বাম বিধায়কেরা। পরে মান্নানের অভিযোগ, ‘‘স্পিকার গণতন্ত্রের প্রহরী। উনি সে কাজ করছেন না। যাঁরা দলত্যাগ করছেন, সেখানে চলে যাচ্ছেন! আমাদের কথা অসংসদীয় বলে বাদ দিচ্ছেন। সাংবিধানিক অধিকার তো আমাদেরও আছে!’’ সুজনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘রাজ্যপাল কিছু বললে রাজ্যের শাসক দল সাংবিধানিক এক্তিয়ারের প্রশ্ন তোলে। অথচ নিজেদের বেলায় সংবিধানের কথা খেয়াল থাকে না! পঞ্চায়েতের চার সদস্যকে সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর অনুষ্ঠানে হাজির থেকে (সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট দেখিয়েছেন তিনি) স্পিকার তাঁর পদকে কলুষিত করেছেন।’’ স্পিকার বিমানবাবু এই নিয়ে মুখ খোলেননি। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘বিরোধীরা যে ভূমিকা নিচ্ছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে তা দুর্ভাগ্যজনক। যে ভাষায় বিরোধী দলনেতা স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন, তা অত্যন্ত গর্হিত।’’ কংগ্রেস ও বামেদের অনুপস্থিতিতে বিএ কমিটিতে এ দিন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ফের আজ কমিটির বৈঠক ডেকেছেন পার্থবাবুরা। বিরোধীরা যেখানে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড়। স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক এই সংঘাতকেই আরও তীব্র করে তুলেছে।
বাম জমানায় স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক ছাড়া দলীয় অনুষ্ঠানে যেতেন না। লোকসভার স্পিকার হওয়ার পর সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি নেন। সেই দৃষ্টান্তই এখন টেনে আনছেন বিরোধীরা। মান্নান বলেন, ‘‘ইট মারলে পাটকেল খেতে হবে! আমি সরকারের গোমস্তা নই! শেষ দেখে ছাড়ব!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy