E-Paper

‘প্ররোচনা’ দেখছেন স্পিকার, বিজেপির তোপে ‘পক্ষপাত’

বিধানসভায় গোলমালের জেরে বৃহস্পতিবার পাঁচ বিজেপি বিধায়ক নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হয়েছেন। কিন্তু ওই ঘটনায় তৃণমূলের কোনও বিধায়কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়ায় স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:১৩
বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

বিতণ্ডার জেরে দলের পাঁচ বিধায়কের শাস্তির পরে নিরপেক্ষতা নিয়ে বিধানসভার স্পিকারকেই আক্রমণ করল বিজেপি। তাদের অভিযোগ, বিজেপির বিরুদ্ধে খড়্গ হাতে দাঁড়ালেও মারমুখী তৃণমূল বিধায়কদের আড়াল করেছেন তিনি। বিজেপির এই অভিযোগ উড়িয়ে বিধানসভায় অশান্তির জন্য বিজেপিকেই দায়ী করেছেন স্পিকার। তাঁর কথায়, ‘‘প্ররোচনা তৈরি করেছেন বিজেপির বিধায়কেরাই।’’

বিধানসভায় গোলমালের জেরে বৃহস্পতিবার পাঁচ বিজেপি বিধায়ক নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হয়েছেন। কিন্তু ওই ঘটনায় তৃণমূলের কোনও বিধায়কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়ায় স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, ‘‘অন্য মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা করলে মানুষ আর শুনছেন না। তাই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে গালাগাল করবেন বলে!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘স্পিকার জানতেন, এখানে বিরোধীদের কোনও ভূমিকা রাখার প্রয়োজন নেই। এই স্পিকার তো অষ্টম আশ্চর্য! এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গুন্ডা নিয়ন্ত্রণ করেন, স্পিকারকেও নিয়ন্ত্রণ করেন।’’

স্পিকার অবশ্য শুক্রবার বলেছেন, ‘‘তৃণমূল বিধায়কদের কেউ কেউ যে আচরণ করেছেন, তা-ও ঠিক নয়। কিন্তু বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও প্ররোচনা তৈরি করেছেন বিজেপি বিধায়কেরাই। ওঁদের কেউ কারও কথা শোনেন না। সিনিয়র বিধায়ককে ডেকেছিলাম, তাঁকে আসতেই দিলেন না বাকিরা। ওঁরা যা বলেছেন, তা রাস্তায় বলা যায়। বিধানসভায় নয়!’’ তাঁর দাবি, বিজেপির বিধায়কেরা বরাদ্দ সময়ে অনুপস্থিত ছিলেন। আর মুখ্যমন্ত্রী যখন বক্তৃতা করতে এসেছেন, তাঁকে বাধা দিতে বিশৃঙ্খলা করেছেন। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মণের পাল্টা দাবি, ‘‘স্পিকার প্রথম থেকেই একচোখো। সাড়ে চার বছর ধরে দেখেছি, আমরা বিধানসভার ভিতরে আক্রান্ত হয়েছি কিন্তু এক জনও তৃণমূল বিধায়ককে নিলম্বিত করার সাহস দেখাননি!’’

পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও বিজেপির দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, ‘‘বিজেপিতে এমন কেউ নেই যে, ওঁদের একটু শিক্ষা দেবেন! চার বারের দলবদলু বিরোধী দলনেতা, আর সিপিএম থেকে আসা এক জন মুখ্য সচেতক! শেখাবেন কে? আমি ওয়েলে নেমেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, উপরে চলুন। এমন শিষ্টতা কে দেখাবেন?’’ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের জবাব, “শোভনদেববাবু ভাবের ঘরে চুরি করছেন। সংসদে অমিত শাহের দিকে কাগজ ছোড়াটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিখিয়েছিলেন? আর যে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেন মোদী চোর, যিনি বিধানসভা ভাঙচুর করেন, লোকসভার স্পিকারের দিকে কাগজ ছুড়ে মেরেছেন, তাঁর কাছ থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি শিখব!” শমীক মনে করিয়ে দিয়েছেন, সভার সদস্য নন, এমন কারও নাম নিয়ে বিধানসভায় কিছু বলা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী সেই নিয়ম ভেঙে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের আক্রমণ করেও পার পেয়ে গিয়েছেন।

বিধানসভার অধিবেশনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ময়দানে সেনাবাহিনী যে তৃণমূলের ধর্না-মঞ্চ খুলতে গিয়েছিল, তা দেখে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় তৎকালীন পাক সেনার তাণ্ডবের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। দেশের সেনাবাহিনীর ‘অবমাননা’ করে ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে ব্রাত্যের বিধানসভা কেন্দ্র দমদমে জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল ও সভা করতে চান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশিই, মতুয়াদের নিয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যের প্রতিবাদেও বড় কর্মসূচি নিচ্ছে বিজেপি। কাঁথিতে এ দিন শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘মতুয়াদের যে ভাষায় অপমান করা হয়েছে এবং আমাদের আচারমালা নিয়ে যে সব কথা বলা হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে যারা নমঃশূদ্র, মতুয়াদের নিয়ে এ ধরনের কথা বলছেন, তাদের সনাতনী জনদেবতা আগামী ২০২৬ সালে সঠিক উত্তর দিয়ে দেবেন।’’ কৃষ্ণনগরে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর নমঃশূদ্র, মতুয়াদের নিয়ে সমাবেশ ডেকেছেন শুভেন্দুরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bidhansabha BJP TMC Biman Banerjee Assembly Speaker

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy