Advertisement
E-Paper

হারিয়ে যাওয়া মুখই মনে পড়ে আজ...

গঙ্গায় ডুব দিয়ে উঠে আসা বছর ষাটেকের এক ভদ্রলোককে দেখলাম, ভিজে বারমুডা পরে খালি গায়ে মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছেন ফাঁকা ফুটপাথ ধরে আকাশবাণীর দিকে। একা একা। আনমনে।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৫ ১৪:২৫
তমলুকে রূপনারায়ণের ধারে পিতৃতর্পণ। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

তমলুকে রূপনারায়ণের ধারে পিতৃতর্পণ। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

গঙ্গায় ডুব দিয়ে উঠে আসা বছর ষাটেকের এক ভদ্রলোককে দেখলাম, ভিজে বারমুডা পরে খালি গায়ে মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছেন ফাঁকা ফুটপাথ ধরে আকাশবাণীর দিকে। একা একা। আনমনে। কেউ নেই তাঁর আশপাশে। মাথার ওপর গাছে যেন পাখিও নেই!

হারিয়ে যাওয়া মুখই তো মনে পড়ে, নৈঃশব্দে। বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে ষাটোর্দ্ধের?

প্রচুর মানুয আজ সাত সকালে, বাবুঘাটে। তর্পণের ভিড়। ভিড় যেন স্মৃতি রোমন্থনেরও! বাবা, মা, পিতামহ, পিতামহী, অন্যান্য গুরুজন, পূর্বপুরুষের স্মৃতি। সুখের স্মৃতি, দুঃখেরও।

একটু অন্য রকমের ছবিও এ দিন নজরে এল বাবুঘাটে।

এক জন ভদ্রলোকের বয়স ৫৫ কি ৫৬। শরীরটা ভিজে চুপচুপে। বিশাল ভুঁড়ি। পরনে বড় একটা তোয়ালে। সেটাও ভিজে জবজব করছে। স্ত্রী তড়িঘড়ি তাঁর পরনের বড় তোয়ালেটা খুলে নিলেন। তার নিচে ভদ্রলোকের বারমুডাটাও ভিজে চুপচুপ করছে। স্ত্রীর হাতেও একটা বড় তোয়ালে। সেটা দিয়ে ভদ্রলোকের গা মুছিয়ে দিচ্ছেন তাঁর স্ত্রী।

পাশে গঙ্গার ধারে দাঁড় করানো তাঁদের দরজা-খোলা কোয়ালিস গাড়িটার স্টিরিও সিস্টেমে বেজে চলেছে প্রয়াত নির্মলেন্দু চৌধুরীর গান-‘সোহাগ চাঁদ বদনি ধোনি, নাচো তো দেখি!’ বাবার ভিজে গা মা মুছিয়ে দিচ্ছেন দেখে গাড়িতে বসা ছেলেমেয়েরা হো হো করে হেসে উঠল! বাবারও বিষন্ন হাসি ছেলেমেয়ের দিকে তাকিয়ে।

গাড়িতে এক পা রেখে, আইসক্রিম খেতে খেতে তা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে ভদ্রলোকের জিন্‌স-টপ পরা পনেরো-ষোলো বছরের ছেলে আর মেয়ে। তারা খুব সেজেগুজে এসেছে। মহালয়া যে! ওরা মায়ের সঙ্গে গাড়িতে চেপে বাবার তর্পণ করা দেখতে এসেছে। ওদের বেশ মজা লাগছে। গঙ্গায় ডুব দিয়ে পাড়ে উঠে বাবা শ্যাম্পু করলেন মাথায়। শ্যাম্পুর শিশিটা মা এগিয়ে দিয়েছিলেন বাবার হাতে। গঙ্গার জল বড় নোংরা যে!

দেখলাম, এক ভদ্রলোক তর্পণ করতে নেমেছেন গঙ্গায়। আর পাড়ে গাড়িতে বসে স্বামীর ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন স্ত্রী। জটাধারী এক সন্ন্যাসীকে দেখে জানলার কাঁচ নামিয়ে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। সেই ‘সাধুবাবা’ অনেক ক্ষণ ধরে ‘বেটি’র হাত দেখতে লাগলেন। ভদ্রমহিলারও সময় কাটানোর উপায় হল। যত ক্ষণ না স্বামী গঙ্গায় ডুব দিয়ে উঠে আসছেন, তত ক্ষণ ‘সাধুবাবা’র কাছ থেকে ভাগ্যটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ওই মহিলা।

গঙ্গার পাড়ে চায়ের স্টল, ক্যাফেটেরিয়া, আইসক্রিমের স্টলগুলোরও বেশ রমরমা। এত সকাল সকাল এত ভিড় তো বাবুঘাটে সহজে হয় না। স্টলগুলোতে বেশ ভিড়। তর্পণ সারতে সকলকেই বাড়ি থেকে বেরোতে হয়েছে প্রায় ভোর রাতেই। তাই, খিদেয় পেট জ্বলছে সকলেরই। বাবা তর্পণ সেরে কখন আসবে, তার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছে না ছেলেমেয়েরা।

যদিও বাবুঘাটের মূল স্রোতটা ছিল এ দিন অপেক্ষারই! তর্পণ সারার জন্য অপেক্ষা। গঙ্গায় ডুব দেওয়ার জন্য অপেক্ষা।

Special write up Sujay Chakrabarty Mahalaya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy