E-Paper

সর্ষের মধ্যে এখনও কি ভূত, প্রশ্নপত্র ফাঁসে প্রশ্ন

এই অভিযোগ মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুকুল ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন ব্যবস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সম্ভাবনা নেই। প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করে পরীক্ষা কক্ষে পৌঁছনোর সময়েও কিছু হওয়ার কথা নয়। তদন্ত চলছে।”

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৪৫

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

শৌচাগারে যে উত্তরপত্র মিলেছিল, তা ছিল হাতে লেখা! প্রশ্নপত্র কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট করে পরীক্ষা কক্ষে পৌঁছনোর প্রক্রিয়ায় সময় লাগে এক ঘণ্টা। তার মধ্যে কী ভাবে সঠিক উত্তর লিখে তা শৌচাগারে পৌঁছে গেল? এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে শিক্ষক-চিকিৎসকদের একটা বড় অংশকে।

তাঁদের একাংশের দাবি, ‘‘প্রযুক্তির ব্যবহার করে কয়েক মিনিটের মধ্যে ১০০ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে। কিন্তু তিন ঘণ্টার পরীক্ষার উত্তরপত্র হাতে লিখতে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন।’’ তা হলে কি কড়া পরীক্ষা ব্যবস্থাপনাতেও সর্ষের মধ্যেই ভূত? যার মাধ্যমে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র বাইরে চলে এসেছে? অনেক সিনিয়র চিকিৎসক এটাও বলছেন, পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের একাধিক অভিযোগ অতীতে সামনে এসেছে। যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদেরই কেউ কেউ এখনও এই কাজ করছেন না তো?

এই অভিযোগ মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুকুল ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন ব্যবস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সম্ভাবনা নেই। প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করে পরীক্ষা কক্ষে পৌঁছনোর সময়েও কিছু হওয়ার কথা নয়। তদন্ত চলছে। রিপোর্ট এলেই সব পরিষ্কার হবে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের দাবি, এখনও পরীক্ষা কক্ষে মোবাইল নিয়ে ধরা পড়ছেন কিছু পড়ুয়া। প্রশ্নপত্র পাওয়ার পরে সেই মোবাইলেই ছবি তুলে পাঠানো হচ্ছে বাইরে।

গত মাসের ১০ তারিখ ছিল এমবিবিএস প্রথম প্রফেশনালের ফিজ়িওলজ়ি পরীক্ষা। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা শেষে তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজের এক পর্যবেক্ষকের অভিযোগ, শৌচাগারে নকল উত্তরপত্র পাওয়া গিয়েছে। হাতে লেখা ওই উত্তরপত্রের ছবিও তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যবেক্ষকদের গ্রুপে দেন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি, প্রিন্ট করে পরীক্ষা কক্ষে পৌঁছনোর মাঝেই কোনও ভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে, চ্যাট-জিপিটির মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে উত্তরপত্র তৈরি করা হচ্ছে। তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করে। কিন্তু এই দাবি পুরোপুরি মানতে নারাজ অনেক মেডিক্যাল কলেজ। তাঁদের দাবি, প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করে প্রিন্ট করা ও পরীক্ষা কক্ষে পৌঁছনোর বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। কী সেটি?

জানা যাচ্ছে, পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র পাঠানো হয় অধ্যক্ষ বা তাঁর মনোনীত সেন্টার ইনচার্জের ই-মেলে। পরীক্ষার দিন সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করতে হয়। কিন্তু সেটি কম্পিউটারের স্ক্রিনে দেখা যায় না। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’টি পর্বে নির্দিষ্ট কোড নম্বর আসে। একটি ব্যবহার করে প্রশ্নপত্রটি দেখা যায়। অপরটি ব্যবহার করে প্রিন্ট করা যায়। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী তা প্রিন্ট করতে হয়। প্রিন্ট শেষে তা খামে ভরে মুখবন্ধ করে পরীক্ষা কক্ষে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৫-৭ মিনিট আগে তা পরীক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সিসি ক্যামেরা এবং অন্য কলেজ থেকে আসা পর্যবেক্ষকদের সামনে করতে হয়। এক অধ্যক্ষের কথায়, ‘‘এত কম সময়ের মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া খুবই চাপের।’’

আর এই সংশয়ের জায়গা থেকেই ফের সামনে আসছে সর্ষের মধ্য ভূত-এর তত্ত্ব।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

MBBS Question Paper Leaked Investigation Students

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy