E-Paper

পার্থের কালির সঙ্কেতে নিয়োগ রহস্য নিয়ে চর্চা

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, পার্থর কাছ থেকে আসা সুপারিশপত্রে সাধারণত দু’ধরনের কালিতে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নাম লেখা থাকত। সবুজ কালিতে নাম মানে এসএসসির সংশ্লিষ্ট কর্তারা বুঝে নিতেন, ওই প্রার্থীরা মন্ত্রীমশাইয়ের বিশেষ পছন্দের।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:৩০
পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

বাঁকা পথে স্কুল শিক্ষক নিয়োগের বন্দোবস্তে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সুপারিশে এক ধরনের সঙ্কেত লুকিয়ে থাকত বলে আদালতে জানিয়েছে সিবিআই। হাতে লেখা নামের তালিকা এসএসসি দফতরে পৌঁছলেও চাকরি কে পাবে আর কে পাবে না কিংবা কাকে আগে চাকরি দিতে হবে সবই কলমের কালিতে বোঝানো হত বলে তদন্তে সিবিআই জানতে পেরেছে।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, পার্থর কাছ থেকে আসা সুপারিশপত্রে সাধারণত দু’ধরনের কালিতে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নাম লেখা থাকত। সবুজ কালিতে নাম মানে এসএসসির সংশ্লিষ্ট কর্তারা বুঝে নিতেন, ওই প্রার্থীরা মন্ত্রীমশাইয়ের বিশেষ পছন্দের। আরও দাবি, আবার কালো কালিতে কোনও নাম থাকলে তিনি মন্ত্রীর পছন্দের নয় বলেই বার্তা নিহিত থাকত। বাঁকা পথে নিয়োগ পরিকল্পনায় পার্থর ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত প্রসন্ন রায় থেকে এসএসসির চেয়ার‍ম‍্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য বা অশোক সাহা কিংবা এসএসসির উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ সকলেই মন্ত্রীর খাসমহল থেকে আসা সঙ্কেতের মানে বুঝতেন বলে তদন্তেউঠে এসেছে।

নাকতলায় পার্থর বাড়ির অফিসেই বাঁকা পথে চাকরির বেশির ভাগ আবেদনপত্র জমা পড়ত বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। কখনও নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কেরা নিজেরা সশরীরে হাজির হয়ে সুপারিশের নাম নিয়ে দরবার করতেন বলেও দাবি। তবে সবার কাছ থেকে সুপারিশ জমা নিলেও মন্ত্রীমশাই নিজের পছন্দ, অপছন্দের দিকটিই অগ্রাধিকার দিতেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এর ফলে দলের অন্দরেই প্রভাবশালী আর একটি মহলের সঙ্গে মন্ত্রীর সংঘাত সৃষ্টি হয় বলেও তদন্তে প্রকাশ।

তদন্তকারীদের দাবি, চাকরির নিয়োগে নাম সুপারিশে পার্থ কখনও কোনও ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর আবদার মেনেও নিতেন। আবার কোনও প্রভাবশালী যোগে তাঁর কাছে পৌঁছনো কিছু নাম বিশেষ কারণবশত বাদ দেওয়া হত বলেও জানা গিয়েছে। মুখে অবশ‍্য কাউকেই না বলতেন না মন্ত্রীমশাই বা তাঁর ঘনিষ্ঠেরা। কিন্তু নাম বাদ দেওয়া হত কৌশলে। কালির রঙেই পার্থর সঙ্কেত প্রকাশ করা হত বলে তদন্তে নেমে একাধিক বয়ান সিবিআইয়ের হাতে এসেছে। তদন্তকারীদের দাবি, দলের এক প্রভাবশালী যুব নেতার সঙ্গেও পার্থর বনিবনার অভাব ছিল। তাঁর নিজের অনুগতদের মাধ্যমে পার্থর কাছে অযোগ্য প্রার্থীদের নামের সুপারিশ ওই যুবনেতা পাঠাতেন বলে দাবি। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, যুবনেতার সুপারিশধন‍্যদের থেকে সাধারণত খুব বেশি টাকা লাভ হত না বলেও মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলয়ের মধ‍্যে ক্ষোভ ছিল। অযোগ্যদের কাছ থেকে চাকরির ব্যবস্থার জন্য ৮-১৫ লক্ষ টাকা ওই যুবনেতা নিজেই নিতেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ওই নেতার সুপারিশধন‍্যদের জন‍্য চাকরির শিকে ছিঁড়ত না বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।

তদন্তকারীদের দাবি, দরকারমাফিক শূন‍্য পদ সৃষ্টি করা যায়নি জানিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পার্থ ওই যুব নেতার অনুরোধ রাখতে নিজের অপারগতা প্রকাশ করতেন। তদন্তে দেখা গিয়েছে, ওই নেতার সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ‍্যে বড়জোর ১০ শতাংশের চাকরির ব‍্যবস্থা করেছিলেন পার্থ। এই নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভের চোরাস্রোত তৈরি হয় বলে দাবি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Partha Chatterjee West Bengal Recruitment Case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy