E-Paper

বাংলাভাষী হেনস্থার প্রতিবাদই তৃণমূলের পাখির চোখ

রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, এ আসলে একই মুদ্রার দু’টি দিক। ভোটার তালিকা পরিমার্জনের বিষয়টি এনে বাংলা থেকে তাদের ভোটব্যাঙ্ক ছাঁটতে চাইছে কেন্দ্র, এমন আশঙ্কা তৃণমূলের। সেই ভোটব্যাঙ্ক অবশ্যই সংখ্যালঘু বাংলা-ভাষাভাষী মানুষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৫ ১০:০৪

—প্রতীকী চিত্র।

ভোটার তালিকা পরিমার্জনের বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধীদের সংসদীয় বিক্ষোভে ‘আলগোছে’ থাকছে তৃণমূল। কিন্তু প্রতিপদে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সংসদের বাদল অধিবেশনে তাদের অগ্রাধিকার দেশ জুড়ে বাংলা ভাষাভাষীদের হেনস্থার প্রতিবাদ— এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দেখা যাচ্ছে, সংসদের দু’টি কক্ষেই কংগ্রেস এবং তৃণমূল একই সঙ্গে ওয়েলে নেমে অধিবেশন মুলতুবি করছে। কিন্তু কংগ্রেসের দাবি, ভোটার তালিকা পরিমার্জন বন্ধ করা হোক। আর তৃণমূলের সাংসদরা সরব হচ্ছেন, ‘বাংলা ও বাঙালিদের উপর অত্যাচার’ নিয়ে।

রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, এ আসলে একই মুদ্রার দু’টি দিক। ভোটার তালিকা পরিমার্জনের বিষয়টি এনে বাংলা থেকে তাদের ভোটব্যাঙ্ক ছাঁটতে চাইছে কেন্দ্র, এমন আশঙ্কা তৃণমূলের। সেই ভোটব্যাঙ্ক অবশ্যই সংখ্যালঘু বাংলা-ভাষাভাষী মানুষ। তবে বাংলা ভাষার উপরে মোদী সরকার আঘাত হানছে— এই প্রচার রাজনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের। অন্য দিকে, বিহারে ঘাড়ের কাছেই ভোট। ফলে কংগ্রেস এবং আরজেডি-র কাছে সরাসরি ভোটার তালিকা পরিমার্জন নিয়ে আসর গরম করা সুবিধাজনক।

তবে বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে বোঝাপড়ার সমস্যা নেই— এমন দাবি তৃণমূলের। দলীয় এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “কেরলে নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস এবং বামদলগুলির মধ্যে সংঘাত বাড়ছে। দিল্লিতে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আর সে ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া-কে শক্তিশালী রাখতে তৃণমূলের গুরুত্ব বাড়ছে কংগ্রেসের কাছে। সে কারণেই গত শনিবার ইন্ডিয়া-র বৈঠকে তৃণমূল উপস্থিত থাকতে পারবে না জানার পরে কংগ্রেস নেতৃত্ব ভিডিয়ো-মাধ্যমে বৈঠকের আয়োজন করেন। পাল্টা সৌজন্যে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকেন।” তৃণমূল নেতৃত্ব এ কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, একুশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি বাক্যও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বলেননি।

আজ সকালে যখন সংসদের মকর দ্বারের সামনে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলের বিরাট ধর্না হয় ভোটার তালিকা পরিমার্জনের বিষয়টি নিয়ে, সেখানে কিছু ক্ষণের জন্য তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাগরিকা ঘোষকে যোগ দিতে দেখা যায়। এই বিষয়টিতে যে তৃণমূলের সমর্থন রয়েছে, সে কথা বুঝিয়ে দিয়েও বাংলা ভাষাভাষীদের লাঞ্ছনার বিষয়টিকে সামনে আনতে বিভিন্ন সংসদীয় কৌশল নিচ্ছে দল। যেমন, স্থির হয়েছে এই অধিবেশনে দলের যে সাংসদরা বক্তব্য পেশ করবেন বা বক্তৃতা দেবেন, তাঁরা তা দেবেন বাংলায়। সেই সঙ্গে ভাবনাচিন্তা চলছে বাংলা অক্ষরে লেখা জামা পরে সংসদে আসার। আজ তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ জুন মালিয়া দিল্লির জয়হিন্দ কলোনির আমানবিক পরিস্থিতি নিয়ে নোটিস জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ওই কলোনিতে বসবাসকারী বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের জলবিদ্যুৎ সংযোগ কেটে জীবন অসহনীয় করে দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে সেগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি।

অন্য দিকে, আজ রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গটি তুলে বলেন, “তৃণমূল চাইছে বাংলদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গাদের নাম ভোটার তালিকায় থাকুক। কিন্তু রাজ্যের যাঁরা আদি মুসলিম বাসিন্দা, তাঁরা বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ হবেন। কারণ বাংলাদেশিরা এসে তাঁদের রুটিরুজিতে ভাগ বসাচ্ছেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC Migrant Workers harassment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy