গত রাজ্য বাজেটে (লোকসভা ভোটের আগে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য) মহিলা, যুব, দরিদ্র এবং কৃষকদের অগ্রাধিকার দিয়েছিল রাজ্য সরকার। বাড়ানো হয়েছিল লক্ষ্মীর ভান্ডারের মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দ। আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে আবাস প্রকল্পকেই যে অগ্রাধিকারে রাখা হয়েছে, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে ভোট বছরের আগে আজ, বুধবার শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে (২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের জন্য) এরই একটা জোরদার প্রতিফলন থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের অনুমান। তবে টানাটানির সংসারে বিপুল খরচের ভার সামলাতে পরিকাঠামো তথা স্থায়ী সম্পদ তৈরির কাজ বাধাপ্রাপ্ত হবে না তো!—সংশয় অভিজ্ঞ আধিকারিকদের একাংশের।
গত ডিসেম্বর থেকে আবাসের ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির বরাদ্দ দেওয়া শুরু করেছিল নবান্ন। মাথাপিছু ৬০ হাজার টাকার হিসেবে ওই দফায় প্রায় ৭২০০ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দ (খরচের ৬০%) না আসায় রাজ্যের ভাগের ৪০% বরাদ্দ পঞ্চায়েত দফতরের বাজেটে (২০২৪-২৫ বছরের) ধরাই ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় কিস্তির আরও প্রায় ৭২০০ কোটি টাকা দিতে হবে রাজ্যকে। আবার পূর্ব ঘোষণা মতো নতুন ১৬ লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরির টাকা (মাথাপিছু ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে) বাবদ অন্তত ১৯,২০০ কোটি টাকা প্রস্তুত রাখতে হবে রাজ্যকে। আগামী বছর বিধানসভা ভোট ঘোষণার আগে তা দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে নবান্নের। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় কিস্তি এবং নতুন উপভোক্তাদের বরাদ্দ—সবটাই আগামী অর্থবর্ষের (২০২৫-২৬) বাজেটে থাকতে পারে বলে চর্চা রয়েছে আধিকারিক মহলে। সে ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত খাতে বিপুল অর্থের ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যকে।
অন্য দিকে সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, প্রায় ২.২৬ কোটি লক্ষ্মীর ভান্ডার-উপভোক্তাদের ভাতা দিতে (১০০০ এবং ১২০০ টাকার হিসেবে, যা বেড়েছিল গত লোকসভার আগেই) প্রতি মাসে কমবেশি ২৩০০ কোটি টাকা খরচ করে রাজ্য। বছরে তা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো। মাথাপিছু এই বরাদ্দ আর না বাড়লে এই অর্থের সংস্থানও রাখতে হবে সরকারকে। বিগত বাজেটের পরেই মূলধনী খাতে (পরিকাঠামো বা স্থায়ী সম্পদ) বরাদ্দ কমানোর অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। এ বার অতিরিক্ত আবাসের বরাদ্দ ধরলে খরচের বহর আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সেই অর্থের সংস্থানে পরিকাঠামো খাতের বরাদ্দ কাটছাঁট হবে কি না, সংশয় রয়েছে তা নিয়েও।
তবে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ দাবি করছে, অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদনের (জিএসডিপি) নিরিখে রাজকোষ ঘাটতি ক্রমশ কমিয়ে আনা হয়েছে। ২০২১-২২ সালে যে ঘাটতি ছিল ৩.৮০%, তা-ই ২০২৩-২৪ বছরের সংশোধিত হিসেবে কমে হয়েছে ৩.৪৯% (অবশ্য ২০২৪-২৫ সালের বাজেটে তা ৩.৬৩% ধরা হয়েছে)। ২০২০-২১ বছরে অতিরিক্ত ১২.২% খরচের বহর ধাপে ধাপে ২০২৩-২৪ বছরে কমিয়ে আনা হয়েছে ৪.৫%-এ। আবার ২০২৩-২৪ বছরে এফআরবিএম-এর (ধারের সীমা সংক্রান্ত আইন) সংশোধনী পাশ করিয়েছিল রাজ্য। তাতে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের নীতি অনুযায়ী, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত সংস্কার মানলে অতিরিক্ত ০.৫% ঋণ (মোট জিএসডিপি-র ৩.৫%) করা সম্ভব। সে বছর জিএসডিপি ছিল ১৭ লক্ষ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরে (২০২৪-২৫) তা প্রায় ১৯ লক্ষ কোটিতে পৌঁছবে বলে আশা সরকারের। এক কর্তার কথায়, “সব দিক বিবেচনা করেই পদক্ষেপ হচ্ছে। সম্ভব হচ্ছে আর্থিক শৃঙ্খলা রয়েছে বলেই।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)