বৈধ পরিচয়পত্র দেখালেও কাউকে গাড়িতে তুলে, কাউকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে বেধড়ক মারধরে অভিযুক্ত ভিন্ রাজ্যের পুলিশ। ভিন্ দেশি সন্দেহে তেমন অত্যাচারের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলায় ফেরা শ্রমিকদের একাংশ পুরনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে চাইছেন না। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে শ্রমিকেরা ফিরে আসছেন, চিন্তা করবেন না। বাইরে কাজ করার দরকার নেই।’’ তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের এ রাজ্যে কাজ দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী।
উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে কোচবিহারের শীতলখুচির এক পরিয়ায়ী শ্রমিককে সেখানকার পুলিশ ভিন্ দেশি সন্দেহে মারধর করে বলে অভিযোগ। মোমিন মিঁয়া নামে ওই শ্রমিককে বৃহস্পতিবার সকালে কোচবিহারের এমজেএন মেডিক্যালে ভর্তি করান বাড়ির লোকেরা। একই কারণে হরিয়ানা পুলিশের হাতে ‘মার খেয়ে’ উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের বাড়িতে বুধবার ফিরেছেন সাধন দাস। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলা বললেই কেন অত্যাচার করবে, সন্ত্রাস করবে? এ অত্যাচার সহ্য করবেন না। লক্ষ্মীর ভান্ডারের মা-বোনেরা রুখে দাঁড়াবেন।’’
মোমিন মিয়াঁ নয়ডার ২ নম্বর সেক্টর এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। অভিযোগ, গাজিয়াবাদে কয়েক জন পুলিশ তাঁকে গাড়িতে তুলে মারধর করেন। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেখালেও রেয়াত করা হয়নি। ওই যুবকের কাছে থাকা নগদ ১০ হাজার টাকাও কেড়ে নেওয়া হয়। মোমিন এক আত্মীয়ের সঙ্গে বুধবার রাতে কোচবিহারে ফেরেন। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে কোচবিহার মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। মোমিনের অভিযোগ, ‘‘সব পরিচয়পত্র দেখালেও উত্তরপ্রদেশের পুলিশ বাংলাদেশি তকমা দিয়ে মারধর করেছে। ওখানে আর ফেরত যেতে চাই না।”
গোপালনগরের কনকপুর এলাকার বাসিন্দা সাধন দাসেরও দাবি, হরিয়ানার গুরুগ্রামে পরিচয়পত্র দেখিয়েও পুলিশের মার খেতে হয় তাঁকে। তিনি একটি সংস্থায় হাউজ়কিপিংয়ের কাজ করতেন। বাঙালি ঝুপড়িতে ভাড়া থাকতেন স্ত্রী, ছেলে-পুত্রবধূকে নিয়ে। সাধন জানান, ২৭ জুলাই সকালে তিনি এবং আরও কয়েক জন সাইকেলে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। পুলিশ জানতে চায়, বাড়ি কোথায়? সাধনের অভিযোগ, ‘‘বাংলা-হিন্দি মিশিয়ে বলি, পশ্চিমবঙ্গে। ওরা বাংলাদেশি সন্দেহে আমাকে স্টিলের লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। আধার কার্ড দেখিয়েছিলাম। ওরা কথা শুনতেই চায়নি। যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলাম। আড়াই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখেছিল রাস্তায়।’’ বুধবার বাড়িতে ফিরেছেন সাধন। শরীরে কালশিটে, পায়ে রক্ত জমে রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ডাবল ইঞ্জিন বলে, ‘বাংলায় কাজ পাচ্ছে না, তাই বাইরে কাজ করছে’। আমি বলছি, ওঁদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, দক্ষতা আছে বলে।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘আজ বাংলার মানুষের উপরে অত্যাচার হচ্ছে। গুরুগ্রামে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেওয়া হয়েছে। অসমে, রাজস্থানে রেখে দেওয়া হয়েছে। প্রায় দু’হাজার জনকে ফিরিয়েছি।’’ ঘাটালে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “উনি (মুখ্যমন্ত্রী) পরিযায়ীরা ফিরলে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ এবং স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করে দেওয়ার কথা বলেছেন। কাদের বলছেন ফিরতে? অনেক বাঙালি ভিন্ রাজ্যে এক লক্ষ টাকা রোজগার করেন। আপনি বলছেন, ‘চলে আসুন। মাসে হাজার টাকা দেব’! আপনার কথায় বাঙালি আসবেন না।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)