Advertisement
২১ মে ২০২৪
SSC recruitment scam

SSC recruitment scam: পার্থ-ঘনিষ্ঠ! চাকরি করে দিতে আত্মীয়দের টাকা, গয়না হাতিয়ে কাঠগড়ায় ‘নদিয়ার রঞ্জন’

স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে সুমনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন তাঁরই এক সহকর্মী।

সুমন চট্টোপাধ্যায়

সুমন চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২২ ২০:২৫
Share: Save:

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই শোরগোল। বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে উঠে আসছে একাধিক জনের নাম। সেই আবহেই উঠে এসেছেন আর এক ‘রঞ্জন’। আসল নাম সুমন চট্টোপাধ্যায়। বাড়ি নদিয়ায়। অভিযোগ, চাকরি করে দিতে তিনি নিকট আত্মীয়দের টাকা, গয়নাও হাতিয়ে নিয়েছেন। আদালতের নজরে এ বার এই ‘নদিয়ার রঞ্জন’। এলাকাবাসীর দাবি, তিনিও পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন।

কৃষ্ণনগর বাগাডাঙার বাসিন্দা সুমন। সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ, তাঁর ব্যক্তিগত সচিব সুকান্ত আচার্য ও আপ্তসহায়ক দিব্যেন্দু বিশ্বাসের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ বাড়ার পর থেকেই এলাকায় সুমনের প্রভাব বাড়তে থাকে। শিক্ষকতার শুরুতে অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত সুমনের বাড়ির গ্যারেজে শোভা পেতে থাকে বিলাসবহুল গাড়ি। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটলে দেখা যায় গোয়া, তাইল্যান্ডের অভিজাত হোটেলে নিশিযাপনের ছবি। সুমনের হঠাৎ এমন বৈভব পড়শিদের নজর কে়ড়েছিল।

এলাকাবাসীর দাবি, বিয়েও করেছিলেন সুমন। কিন্তু পারিবারিক অশান্তির কারণে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তার পর আর বিয়ে করেননি সুমন। জানা গিয়েছে, বাম আমলে সুমনের বাবা শীতল চট্টোপাধ্যায় ছিলেন প্রথম সারির বাম নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। কোঅর্ডিনেশন কমিটির সদস্যও ছিলেন প্রয়াত শীতল। পড়শিদেরই দাবি, শিক্ষা সেলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই সুমনের ‘ঔদ্ধত্য’ বাড়তে থাকে। কিন্তু এই সুমন ছোটবেলায় একেবারেই অন্য রকম ছিলেন। শান্ত, নম্র-ভদ্র পড়ুয়া। সেই ছেলে হঠাৎ এমন ‘অচেনা’ হয়ে উঠবে, কল্পনা করতে পারেননি তাঁর প্রতিবেশী অশীতিপর শিবাজিপ্রতিম মজুমদার। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘সুমন আগে মিশুকে ছিল। পাড়ার যে কোনও অনুষ্ঠানে ওকে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে দেখা যেত। পরের দিকে ওর হাবভাব বদলে গিয়েছিল। দেখে চিনতেই পারত না!’’ এখন এই প্রতিবেশীরাই সুমনকে ‘নদিয়ার রঞ্জন’ বলে ডাকাডাকি করছেন।

স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে সুমনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন নদিয়ার বাসিন্দা এক চাকরিপ্রার্থীর মা সুপর্ণা দাস রায়। পেশায় শিক্ষিকা সুপর্ণা আদালতে জানান, সুমন তাঁর সহকর্মী। সেই সূত্রেই প্রাথমিক শিক্ষক পদে ছেলের চাকরির জন্য সুমনকে প্রথম কিস্তিতে চার লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। পরের কিস্তিতে আরও পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই শিক্ষিকা বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। সুপর্ণার অভিযোগ, টাকা ফেরত চাইতে গেলে নানা টালবাহানা করে এড়িয়ে যেতে থাকেন সুমন। তাঁর আরও দাবি, শুধু তিনিই নন, আরও অনেকেই, এমনকি নিকটাত্মীয়েরাও সুমনকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। যাঁরা নগদ অর্থ দিতে পারেননি, তাঁদের থেকে সোনাগয়নাও নেওয়া হয়েছে। সেই সব অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই গা ঢাকা দেন সুমন।

এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, চাকরি দেওয়ার নাম করে সুমন যে টাকা তুলতেন, তা পৌঁছে যেত পার্থ শিক্ষমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব সুকান্ত ও আপ্তসহায়ক দিব্যেন্দুর কাছে। আদালতে এমন অভিযোগ করেছেন সুপর্ণাও। এ বিষয়ে সুকান্তের সঙ্গে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। দিব্যেন্দুর সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি স্কুলে নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ সংক্রান্ত তদন্তে ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন সুকান্তও। প্রসঙ্গত, পার্থের অনুমতি নিয়ে এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে শান্তিপ্রসাদ সিন্হার নেতৃত্বে তৈরি হওয়া যে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির বিরুদ্ধে ভুয়ো সুপারিশপত্র তৈরির অভিযোগ উঠেছে, সুকান্ত তারও সদস্য ছিলেন।

এর আগে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছিলেন। ওই ভিডিয়োয় বাগদার এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে স্কুলে চাকরি দেওয়ার নাম করে বহু লোকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইন অবশ্য তার সত্যতা যাচাই করেনি। ভিডিয়োয় ওই ব্যক্তির আসল নাম প্রকাশ্যে না এনে উপেন তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘রঞ্জন’। তবে উপেন দাবি করেছিলেন, টাকা নিয়ে কারও সঙ্গে প্রতারণা করেননি রঞ্জন। তাই প্রাক্তন সিবিআই কর্তা তাঁর ভিডিয়োর নাম দিয়েছিলেন ‘সৎ রঞ্জন’। উপেনের সেই ভিডিয়ো নিয়ে সরগরম হয়েছে রাজ্য-রাজনীতি। হাই কোর্টে রঞ্জন-প্রসঙ্গ উঠতেই জানা যায়, বাগদার ওই জনৈকের নাম চন্দন মণ্ডল। আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি সেই চন্দনের বাড়িতে হানা দেন ইডির তদন্তকারীরা। শুধু বাগদার চন্দনই নন, বনগাঁতেও এমন এক ‘রঞ্জন’-এর হদিস মিলেছে। যাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে বেশ কয়েকটি অভিযোগও দায়ের হয়েছে। সেই তালিকায় নয়া সংযোজন সুমনের নাম।

সুমনের বিরুদ্ধে অবশ্য আরও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের গত ৩ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে। আনন্দবাজার অনলাইনে সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ওই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর ছেলে সুমন সেনগুপ্তের অভিযোগের ভিত্তিতে সুমনকে গ্রেফতারও করা হয়। জেল হেফাজতও হয়েছিল তাঁর। পরে অবশ্য জামিন পান তিনি। এই সমস্ত ঘটনার কথা তুলে ধরে বিরোধীদের দাবি, শাসকদলের সঙ্গে ‘যোগাযোগ’-এর প্রভাব খাটাতেন সুমন।

এ বিষয়ে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি কল্লোল খাঁ বলেন, ‘‘যিনি টাকা দিয়েছেন এবং যিনি নিয়েছেন, এটা একান্তই তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। এ ব্যাপারে আমার কোনও বক্তব্য নেই। সুমন চট্টোপাধ্যায়কে আমি চিনি না। তবে দেখলে নিশ্চয়ই চিনতে পারব।’’

সুমনকে নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তাঁর স্কুলের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই অভিযোগের কথা নানা জায়গা থেকে জেনেছি। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSC recruitment scam partha chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE