E-Paper

পরিযায়ী-ভাতায় নানা প্রশ্ন, গেরো উপায়েরও

‘ভাষা-সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে তাঁদের যুদ্ধের অঙ্গ হিসেবে রাজ্যে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য মাসিক ভাতা ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৫ ০৪:৫৬

—প্রতীকী চিত্র।

বাইরে বেশি রোজগারের টান ছেড়ে কত পরিযায়ী শ্রমিক বাংলায় ফিরবেন, ঠিক নেই। তার উপরে পাকছে পোর্টালের গেরো! ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নতুন প্রকল্প ঘিরে আপাতত নানা সংশয় তৈরি হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরেই।

‘ভাষা-সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে তাঁদের যুদ্ধের অঙ্গ হিসেবে রাজ্যে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য মাসিক ভাতা ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলায় ফিরে এলে পরিযায়ী শ্রমিকেরা নতুন ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় মাসে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান পাবেন। বেশ কিছু দিন ধরেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছিল ‘কর্মসাথী’ প্রকল্পে। তার জন্য চালু আছে পোর্টাল। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, এ বার ফিরে আসা পরিযায়ীদের জন্য খুলতে হবে ‘শ্রমশ্রী’ পোর্টাল। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, এই দুই পোর্টালের সেতুবন্ধন করে তথ্য মেলানো হবে। তবে সেই কাজও জটিল। কত জন ফিরে আসতে পারেন এবং মাসিক অনুদানের অঙ্ক ধরে কত অর্থের সংস্থান রেখে এগোতে হবে, সে সব প্রশ্নে ধোঁয়াশাও এখনও কাটেনি।

রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অন্য রাজ্যে বেশি মজুরি মেলে বলে বহু মানুষ এ রাজ্য থেকে বাইরে কাজ করতে যান। বিশেষত, দক্ষিণ ভারতে। ভাতার আশ্বাসে তাঁদের মধ্যে কত অংশ ফিরে আসবেন, আগাম আন্দাজ করা কঠিন। আবার ‘কর্মসাথী’র সঙ্গে ‘শ্রমশ্রী’কে মিলিয়েও চলতে হবে।’’ এরই পাশাপাশি প্রশাসনিক আধিকারিকদের মাথায় রাখতে হচ্ছে, ‘শ্রমশ্রী’তে নাম অন্তর্ভুক্ত করে কেউ যদি ফের ভিন্ রাজ্যে বাড়তি রোজগারের আশায় চলে যান, তা ধরা যাবে কী ভাবে? সে ক্ষেত্রে সরকারি অর্থ অপচয়ের আশঙ্কাও রয়েছে। সব দিক মাথায় রেখেই কার্যপ্রণালী (এসওপি) তৈরির চেষ্টা চলছে বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত।

রাজ্যের ‘কর্মসাথী’ প্রকল্প অনুযায়ী, নথিভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ২২ লক্ষ ৪০ হাজার। যদিও বিভিন্ন মহলের মতে, নাম লেখানো নেই, এমন অংশ ধরলে বাইরে কর্মরতদের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। এই পরিস্থিতিতে নতুন ‘শ্রমশ্রী’ কার্যকর করা সংক্রান্ত প্রশ্ন নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তবে শাসক দলের সাংসদ তথা শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘নানা রাজ্যে সমস্যা হচ্ছে বলে আমাদের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এই ঘোষণা করেছেন। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও একটা সমাধান বার করার চেষ্টা হচ্ছে। বিষয়টাকে এ ভাবেই দেখা উচিত।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘রাজ্যে ‘কর্মসংবাদ’ বলে যে পোর্টাল ছিল, এই পরিস্থিতিতে সেটা সহায়ক হতে পারত। বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের করা মামলার জেরে সেই পোর্টাল বন্ধ আছে। এখন তৃণমূলে এসে যাওয়া তাপসী ওই মামলা পুনর্বিবেচনা করবেন, আশা করি।’’

সরকারের নতুন উদ্যোগ ঘিরে প্রশ্ন অবশ্য অব্যাহত। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী পাঁচ হাজার টাকা এক বছরের জন্য দেবেন বলেছেন। আসলে, ভাষা আন্দোলন থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের টাকা দেওয়া, সবটাই ভোট পর্যন্ত!” কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীও বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী ভোট পর্যন্ত বাঙালি, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে হাওয়াটা রাখতে চাইছেন। রাজ্যের ঋণ ৭ লক্ষ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। টাকা কোথা থেকে আসবে?” প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আলি ইমরান রাম্জের (ভিক্টর) প্রশ্ন, পরিযায়ীরা কেউ সারা বছর, কেউ মরসুমি হিসেবে বাইরে যান। শ্রম দফতরের তরফে সরেজমিন সমীক্ষা ছাড়াই এমন প্রকল্প চালু করলে ফলপ্রসূ হবে কি?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Migrant Workers harassment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy