E-Paper

চা-বলয়ে অস্বস্তি রাজ্যের, পথ খুঁজছে ক্ষুব্ধ শাসক দলও

চা-বলয়ে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৩টি শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। চা-বাগানের মালিক, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং রাজ্য সরকারের আলোচনার মাধ্যমে প্রতি বার চা-শ্রমিকদের জন্য বোনাস নির্ধারিত হয়।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:২০
২০% বোনাস দেওয়ার ঘোষণা হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে।

২০% বোনাস দেওয়ার ঘোষণা হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

নজিরবিহীন ভাবে কোনও আলোচনা ছাড়াই চা-বাগানে এ বার ২০% বোনাস দেওয়ার ঘোষণা হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে। সেই ঘোষণা কার্যকর করা নিয়ে চা-বলয়ে প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। সেই প্রশ্নেই সিলমোহর পড়ল আদালতের রায়ে। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি বিড়ম্বনা বাড়ল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরও! সূত্রের খবর, তৃণমূলের চা-বলয়ের নেতারা এই পরিস্থিতিতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন।

চা-বলয়ে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৩টি শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। চা-বাগানের মালিক, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং রাজ্য সরকারের আলোচনার মাধ্যমে প্রতি বার চা-শ্রমিকদের জন্য বোনাস নির্ধারিত হয়। কিন্তু এই বছর এমন কোনও আলোচনা ছাড়াই রাজ্যের শ্রম দফতরের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০% বোনাসের কথা বলা হয়েছিল। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতারাই বলছেন, ১৮০ বছরের ইতিহাসে এমন কখনও হয়নি! চা-বাগানে পর্যাপ্ত লাভ না থাকায় এই পরিমাণে বোনাস দেওয়ার সঙ্গতি নেই বলে জানাতে শুরু করেছিলেন একাধিক চা-বাগান কর্তৃপক্ষ। ডুয়ার্স ও কালিম্পঙে বাগান আছে, এমন দু’টি চা-সংস্থা এই নিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি শম্পা দত্ত (পাল) তাঁর নির্দেশে বলেছেন, চা-সংস্থাগুলির আর্থিক অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা আপাতত ৯% বোনাস দেবে। বাকি বোনাসের বিষয়ে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে। প্রসঙ্গত, চা-বাগানে ৮.৩৩% বোনাস বাধ্যতামূলক।

চা-বাগানের যা পরিস্থিতি, তাতে একলপ্তে ২০% বোনাস দেওয়া যে কঠিন, তা জানেন শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব। তাঁদের আশঙ্কা, বাড়তি বোনাসের চাপ সামলাতে না-পারার কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ বাগান বন্ধ করে দিলে শ্রমিকদের ক্ষতি হবে। বিরোধী দলগুলির সংগঠন এই নিয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ, ঘেরাও আন্দোলন শুরু করেছে। কিন্তু শাসক সংগঠনের পক্ষে সরাসরি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মাঠে নামা সম্ভব নয়, আবার শ্রমিকদের পাশ থেকে সরে দাঁড়ানোও কঠিন! এমন উভয় সঙ্কটে পড়ে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের চা-বলয়ের তৃণমূল নেতাদের একাংশ অভিষেকের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তাঁদের আর্জি, শ্রম দফতরের সঙ্গে অম্তত রুগ্ণ চা-বাগানের মালিকদের বৈঠকের ব্যবস্থা হোক। যাতে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে একটা মীমাংসা সূত্র পাওয়া যায়।

সূত্রের খবর, চা-বাগানে ২০% বোনাস দিতে বলা হয়েছিল ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। অধিকাংশ চা-বাগানই ভেঙে ভেঙে বোনাসের (১০-৫-৫ বা ১৫-৫) পথ বেছে নিয়েছে। সরকারি ঘোষণার পরে কাজ বন্ধ হয়েছে প্রায় ৮টি বাগানে। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের বক্তব্য, শুধু শিলিগুড়ি মহকুমায় ৪৫টি চা-বাগান আছে। বিপুল নগরায়ণের ফলে সেখানে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু রাসায়নিক নিষিদ্ধ করায় কীটনাশক প্রক্রিয়ায় ধাক্কা লেগেছে। তার প্রভাব পড়ছে চায়ের ফলনে। এর উপরে একতরফা বোনাস চাপিয়ে দিলে চা-বাগান মালিকেরা সমস্যায় পড়বেন, আখেরে সঙ্কট হবে শ্রমিকদের।

তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র এক অভিজ্ঞ নেতা বলছেন, ‘‘চা-বলয়ে আমরা জমি শক্ত করেছিলাম। মাদারিহাট বিধানসভা উপনির্বাচনে জয় এসেছিল সেই পথ ধরে। এর পরে আমরা কী অবস্থায় থাকছি, সেটা ২০২৬-এ বোঝা যাবে!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tea workers tea gardens

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy