Advertisement
E-Paper

ঠেলা সামলাতে দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজছে রাজ্য

কলকাতা থেকে দূরবর্তী জেলাগুলির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। মরিয়া হয়ে স্বাস্থ্যভবনের কাছে বাড়তি ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে পাঠিয়েছে একাধিক জেলা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২১ ০৪:৫৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় রাজ্য জুড়়ে কোভিড রোগী পরিবহণকারী অ্যাম্বুল্যান্সের যে ব্যাপক আকাল দেখা দিয়েছিল ঠিক সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে দ্বিতীয় ঢেউয়েও।

স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালায় একটি সংস্থা। ‘১০২’ নম্বরে ফোন করলে যে পরিষেবা মেলে। বর্তমানে রাজ্যে কোভিড রোগী পরিবহণকারী ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে মাত্র ৪৮৩টি। এর প্রায় অর্ধেক আবার সীমাবদ্ধ কলকাতা ও আশপাশের জেলায়। কিন্তু এক-একটি জেলায় এখন প্রায় প্রতিদিন ৫০০-৭০০ জন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁদের অনেককেই হাসপাতালে ও সেফ হোমে নিয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে ৪৮৩ সংখ্যাটা নিতান্ত নগণ্য। বিশেষ করে কলকাতা থেকে দূরবর্তী জেলাগুলির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। মরিয়া হয়ে স্বাস্থ্যভবনের কাছে বাড়তি ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে পাঠিয়েছে একাধিক জেলা।

এই অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে শনিবার অ্যাম্বুল্যান্স সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যকর্তারা। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে কোভিড পরিষেবার জন্য আরও ৫০০ অ্যাম্বুল্যান্স আগামী সপ্তাহের মধ্যে চালু করতে হবে।

স্বাস্থ্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়়িত অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বোধোদয় এত দেরিতে কেন? করোনার প্রথম ঢেউয়ে যখন কোভিড রোগী পরিবহণকারী অ্যাম্বুল্যান্সের অভাব দেখা গিয়েছিল তখন সেই ধাক্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে গাড়ি কেন বাড়়ানো হয়নি? দ্বিতীয় ঢেউয়ের ইঙ্গিত প্রথম থেকেই ছিল। তা হলে কেন অ্যাম্বুল্যান্স পরিকাঠামো ঠিক করা হল না?

প্রসঙ্গত, গত বার অ্যাম্বুল্যান্সের আকাল সামলাতে শেষ পর্যন্ত বহু নিশ্চয়যান কোভিড রোগী ও রোগীর গলার রসের নমুনা পরিবহনে স্বাস্থ্য দফতর ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিল। নিশ্চয়যান মূলত প্রসূতি ও সদ্যোজাতদের জন্য ব্যবহার হয়। সেটি কোভিডে ব্যবহারে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অত্যন্ত ধাক্কা খেয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। গত বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যে প্রসূতি ও শিশুমৃত্যু কয়েক গুণ বেড়়ে যাওয়ার পিছনে এটা একটা কারণ হিসাবে ধরা হয়। তার পরেও শিক্ষা হয়নি স্বাস্থ্য দফতরের। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সমস্যা তো আছেই। অতিমারী পরিস্থিতিতে সব ক্ষেত্রেই এই রকম হয়। আমরা দ্রুত গাড়়ি বাড়়ানোর চেষ্টা করছি। অনেক ক্ষেত্রে গাড়়ি ভাড়়া নেওয়া হচ্ছে।’’

সময়মতো অ্যাম্বুল্যান্স না-পেয়ে শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে চোখে অন্ধকার দেখছেন অনেকেই। বিশেষ করে যাঁদের অর্থ বা লোকবল নেই অথবা বয়স হয়েছে ও বাড়িতে একা থাকেন। ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স না-পেয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়়া করবেন সেই পরিস্থিতিও অনেকের নেই। কারণ, অধিকাংশ বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স কোভিড রোগী নিতে চাইছে না। কেউ-কেউ নিলেও কোভিড রোগীর জন্য জন্য বিপুল টাকা ভাড়়া চাইছে। অনেক বেসরকারি গাড়়িতে অক্সিজেন থাকছে না। ফলে লোকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেই অ্যাম্বুল্যান্সে রোগী নিয়ে যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের কিছু আচরণ, কাজ বা ধ্যানধারণার জন্যও অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সুচারুভাবে পরিচালনায় বাধা পাচ্ছে। যেমন, অনেকেই স্বাস্থ্যভবনের নির্দিষ্ট নম্বরে কোভিড রোগীর জন্য গাড়়ি চাওয়ার সময় পুরো তথ্য জানাচ্ছেন না। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, রোগীকে তিন বা চার তলা থেকে স্ট্রেচারে ধরে নামানোর লোক পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, কোভিড রোগীকে আত্মীয়-প্রতিবেশীরা ছুঁতে চাইছেন না। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যদফতরে আগে থেকে পরিস্থিতি জানালে একাধিক অ্যাটেনডেন্ট অ্যাম্বুল্যান্সের সঙ্গে পাঠানো যেত। সেটা না-হওয়ায় অহেতুক এক জন রোগীর জন্য অনেক সময় চলে যাচ্ছে। অন্য রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।

১০২ অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা যে বেসরকারি সংস্থা পরিচালনা করে তাদের অপারেশন হেড আবার জানিয়েছেন, বহু লোক হেল্পলাইন নম্বর জোগাড়় করে সরাসরি সেখানে ফোন করে ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স চাইছেন। কিন্তু তাঁদের গাড়়ি দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ নিয়ম হল, একমাত্র স্বাস্থ্য দফতরের কোভিড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সেল-এ যাঁরা রোগীর নাম নথিভুক্ত করবেন তাঁদের কাছেই গাড়়ি যাবে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কোভিড রোগীর ভর্তির প্রক্রিয়াতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে বলেও পরবর্তী রোগীকে আনতে যেতে দেরি হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

Corona
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy