Advertisement
E-Paper

ভাগ্যিস সাহস দেখিয়েছি

বাবার চাকরির বেতনে চলত সংসারের চাকা, আমাদের লেখাপড়া। ভাই বোনদের মধ্যে আমি সবথেকে ছোটো।

চিত্রলেখা চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০০:৪৮
লেফটেন্যান্ট কর্নেল চিত্রলেখা চৌধুরী।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল চিত্রলেখা চৌধুরী।

বাড়িতে পাঁচ ভাই বোন, বাবা ও মা। এই বিরাট সংসারে উপার্জন করতেন শুধু বাবা। বাবার চাকরির বেতনে চলত সংসারের চাকা, আমাদের লেখাপড়া। ভাই বোনদের মধ্যে আমি সবথেকে ছোটো। শিকারপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৮৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করি। ১৯৮৬ সাল নাগাদ বাবা চাকরি থেকে অবসর নিলেন। তার পরেই শুরু হল লড়াই। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বাড়িতে তখন প্রতিদিন খাওয়া জুটত না। বাবার পাশে দাঁড়াতে নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরির পরীক্ষায় বসতে শুরু করি। সঙ্গে গৃহশিক্ষকতার কাজও নিই। সেই সময় বেশ কয়েকটি চাকরির পরীক্ষায় বসেছিলাম।

সেই পরীক্ষার ফল বেরনোর পর দেখলাম, একই সঙ্গে রেল, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পরীক্ষায় পাশ করি। রেল ও পুলিশের চাকরি ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিই। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ ছিল না। বাড়ির লোকজন তো বটেই, গ্রামের অনেকেও সে দিন বলেছিলেন, ‘‘বাপ রে, এ মেয়ের সাহস তো কম নয়।’’

প্রথম চার বছর পুণেতে প্রশিক্ষণ নিই। তার পরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। ১৯৯৮ সালে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে সংসার ও চাকরি সামলেছি। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কাশ্মীরে ছিলাম। এখন উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে কর্মরত রয়েছি। জীবন আমাকে শিখিয়েছে চ্যালেঞ্জ নিতে। ভয়কে জয় করতে না পারলে জীবনের কোনও কিছুতেই সফল হওয়া যায় না। এখন গ্রামের বহু মেয়ে সেনা ও বিএসএফে যোগ দিচ্ছে। এতে আমার যে কী আনন্দ হয়, তা বলে বোঝাতে পারব না। সে দিন আমাকে অনেকে বলেছিলেন, ‘মেয়েরা শিক্ষকতা করবে। সেটা যখন হয়নি, পুলিশ কিংবা রেলে যোগ দিলেও তো পারে। তাই বলে সেনাবিভাগে? সে তো বড্ড ঝুঁকির চাকরি। পদে পদে বিপদ।’ আমি সে দিন স্রেফ নিজের কথা শুনেছিলাম। আমার মনের কথা শুনেছিলাম। আজ মনে হয়, ভাগ্যিস সে দিন সাহসটা দেখিয়েছিলাম। নইলে জীবনটা বড় পানসে মনে হতো।

Women's Day Special
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy