Advertisement
E-Paper

পাশ করানোর দাবি, বিক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রীরা এর জন্য ২০১৬ সালের পরিবর্তিত নিয়মকেই দায়ী করছেন। সেই নিয়মের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরেই ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫১
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল চিত্র।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল চিত্র।

রেকর্ড ফেলের জন্য পরীক্ষার্থীদেরই দায়ী করেছেন স্বয়ং আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

তার পরেও পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবি তুলে সোমবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখালেন পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের দাবি, পার্ট-১ পরীক্ষায় অকৃতকার্য পড়ুয়াদের পার্ট-২ পরীক্ষায় বসার যোগ্য বলে ঘোষণা করতে হবে। নতুন নিয়ম বাতিল করে পুরনো নিয়ম মেনে পাশ করিয়ে দিতে হবে অকৃতকার্য সব পরীক্ষার্থীকে।

বিক্ষোভের জেরে বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরম বিশৃঙ্খলা চলে গোটা ক্যাম্পাসে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, প্রায় এক বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে আবার সাদা পোশাকের লাঠিধারী পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। বহিরাগতদের মদতে বিক্ষোভ হয়েছে বলে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বার্তা দেন, ‘‘আমি বিষয়টির উপরে নজর রাখছি।’’ কিন্তু জট কাটাতে বিকাশ ভবনে মন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে-বৈঠক হল, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি শিক্ষা শিবির। যে-নতুন নিয়মের জেরে পরীক্ষায় বিপর্যয় বলে অভিযোগ, তা বদলানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলে রবিবার জানানো হয়েছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ এ দিন জানান, সিন্ডিকেটে আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার স্নাতক পার্ট-১ পরীক্ষার ফল বেরোনোর পরে দেখা যায়, কলা বিভাগে ফেল করেছেন ৫৭.৫০ শতাংশ পড়ুয়া। বিজ্ঞানেও পাশের হার কমেছে ১৪ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রীরা এর জন্য ২০১৬ সালের পরিবর্তিত নিয়মকেই দায়ী করছেন। সেই নিয়মের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরেই ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে।

এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ক্যাম্পাসে প্রথমে বিক্ষোভ দেখায় ডিএসও। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় মিটিং-মিছিল করা নিষিদ্ধ। তবু সেখানেই কিছু ক্ষণ অবরোধ চালানো হয়। এবিভিপি-র খবর, সংগঠনের পতাকা ছাড়াই সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাদের সমর্থকেরা। ছিলেন যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশও। তার পরে ডিএসও এবং সাধারণ পড়ুয়ারা ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। যোগ দেন বঙ্গবাসী, শ্যামাপ্রসাদ, সুরেন্দ্রনাথ-সহ বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। কিছু ক্ষণের জন্য ভিতর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। আটকে দেওয়া হয় কর্মী-অফিসারদের। ঢাকঢোল পিটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ যে-ভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন, তা কার্যত ভেঙে পড়ে। ডিএসও-র কলকাতা জেলা সভাপতি অনুপম পানি বলেন, ‘‘আমরা ফটক বন্ধ করিনি। কারা বন্ধ করল, আমরা তার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছি।’’

জোড়াসাঁকো থানার পুলিশ চলে আসে। বিক্ষোভকারীরা ডেপুটেশন দিয়ে দাবি জানান, ২০১৬ সালের নতুন নিয়ম বাতিল করতে হবে। যাঁরা ফেল করেছেন, পুরনো নিয়ম (২০০৯) অনুযায়ী তাঁদের সকলেই উত্তীর্ণ বলে ঘোষণা করতে হবে।

দিনভর বিক্ষোভ-বিশৃঙ্খলায় বিরক্ত শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘যে যা পারে করুক। ফেল করবে, গন্ডগোল করবে!’’ তিনি জানান, যে-কোনও ব্যাপারেই দেখা যাচ্ছে, বাইরে থেকে লোকজন এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। এটা ঠিক না। এতে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। ‘‘যারা সহজ উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন
করতে পারত, বাইরের কিছু হুজুগে পাবলিক এসে তাদের ভূমিকাকে ছোট করে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় বুঝবে, কী করার আছে। আমি সব কিছু শুনেছি, কিছু বলিনি। তবে বহিরাগতদের বিক্ষোভ ঠেকাতে পুরো বিষয়টির উপরে নজর রাখছি,’’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

এ দিনই বিকাশ ভবনে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) দীপক কর, রেজিস্ট্রার এবং পরীক্ষা নিয়ামক। বৈঠক থেকে বেরিয়ে অবশ্য তেমন কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি দীপকবাবু। তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী রিপোর্ট চেয়েছিলেন। সেটা আমরা দিয়েছি। তিনি রিপোর্ট খতিয়ে দেখবেন। যদি পরামর্শ থাকে, দেবেন।’’ মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের মনে করিয়ে দেন, শিক্ষার মানের সঙ্গে যাতে কোনও রকম আপস করা না-হয়, সেটা দেখা সংশ্লিষ্ট সকলেরই দায়িত্ব।

পড়ুয়াদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধায় জায়গাটায় কোনও স্কোপ (কিছু করার আছে কি না) রয়েছে কি না, সেটা দেখতে হবে। সিন্ডিকেটে পর্যালোচনা করা হবে। তার পরে সিদ্ধান্ত।’’

পার্থবাবুর সক্রিয়তা ও হুঁশিয়ারির মধ্যে স্বাধিকার-বিরোধিতা দেখছে শিক্ষক সংগঠন কুটা। তাদের অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী যে-ভাবে তথ্য ও রিপোর্ট তলব করছেন, সেটা স্বাধিকারে হস্তক্ষেপের নামান্তর।

Calcutta University Partha Chatterjee Keshari nath Tripathi College Street Campus Agitaion কেশরীনাথ ত্রিপাঠী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy