Advertisement
E-Paper

ধর্মঘটের সাতসকালেই রাস্তায় ওঁরা সবাই, পরীক্ষা আছে যে

বাখরাহাটের বাসিন্দা রিয়া সামন্ত বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সকাল আটটায়। বেলা দুটোয় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। যে সে পরীক্ষা নয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ফাইনাল পরীক্ষা। রিয়ার সিট পড়েছিল আশুতোষ কলেজে। রাজ্য সরকারের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সাধারণ ধর্মঘটের দিনও পরীক্ষা স্থগিত করতে পারেনি রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। তার জেরে যথেষ্ট দুর্ভোগ পেরিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। কী ভাবে বাখরাহাটের বাড়ি থেকে হাজরায় এসে পৌঁছলেন রিয়া? প্রথমে বাড়ি থেকে ভ্যানে বড় রাস্তায় পৌঁছে অটোর জন্য প্রতীক্ষা। অটোয় ঠাকুরপুকুর। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে মিলল একটি হাজরা যাওয়ার বাস। কিন্তু সেই বেসরকারি বাস পৌঁছল না হাজরায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৩:২৭

বাখরাহাটের বাসিন্দা রিয়া সামন্ত বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সকাল আটটায়। বেলা দুটোয় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য।

যে সে পরীক্ষা নয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ফাইনাল পরীক্ষা। রিয়ার সিট পড়েছিল আশুতোষ কলেজে।

রাজ্য সরকারের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সাধারণ ধর্মঘটের দিনও পরীক্ষা স্থগিত করতে পারেনি রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। তার জেরে যথেষ্ট দুর্ভোগ পেরিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। কী ভাবে বাখরাহাটের বাড়ি থেকে হাজরায় এসে পৌঁছলেন রিয়া? প্রথমে বাড়ি থেকে ভ্যানে বড় রাস্তায় পৌঁছে অটোর জন্য প্রতীক্ষা। অটোয় ঠাকুরপুকুর। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে মিলল একটি হাজরা যাওয়ার বাস। কিন্তু সেই বেসরকারি বাস পৌঁছল না হাজরায়। রিয়া বলেন, ‘‘মাঝেরহাটে এসেই বাসটি আমাদের নামিয়ে দিল। তখন রীতিমতো নার্ভাস হতে শুরু করেছিলাম। ভাবছিলাম বাকি পথটা কী ভাবে যাব।’’ শেষ পর্যন্ত হাজরাগামী আর একটি বাসে উঠে তিনি আশুতোষ কলেজে পৌঁছন।

মধ্যমগ্রামের রুমা সাহারও পরীক্ষার আসন পড়েছিল আশুতোষ কলেজে। তাঁকেও সকাল ন’টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্রেনে-মেট্রোয় চড়ে তিনি ঘণ্টাচারেক আগে পৌঁছে গিয়েছেন পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে। সোনারপুরের মধুরাকা সেন মুরলীধর কলেজের ছাত্রী। তাঁর সিট পড়েছিল গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস কলেজে। হাতে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে বেলা সাড়ে দশটায় বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকটা আগে বেরিয়ে ঠিক কাজই করেছিলাম। রাস্তায় অটো প্রায় ছিল না বললেই চলে। তবে পরীক্ষা দিতে যাব শুনে অন্য যাত্রীরা আমাকে আগে অটোয় ওঠার সুযোগ দেন।’’

রিয়া, রুমা, মধুরাকার মতো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮০ হাজার পড়ুয়ার পরিবেশবিদ্যার পরীক্ষা ছিল এ দিন। সাড়ে আটশো ছাত্রছাত্রীর আবার সংস্কৃত অনার্সের অষ্টম পত্রের একটি অর্ধের পরীক্ষাও ছিল। অনেকেরই পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে অতিরিক্ত অর্থব্যয় হয়েছে। যেমন ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা শ্রাবণী ও ঈশানী সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, বাড়ির সামনে সারিবদ্ধ ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থাকলেও বন্‌ধের দিন তার একটিও ভাড়া নিতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত দু’শো টাকা দিয়ে অটো ভাড়া করে পরীক্ষাকেন্দ্র লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে পৌঁছন তাঁরা। ওই দুই যমজ বোনের কথায়, ‘‘আজ পরীক্ষা রাখা একেবারেই ঠিক হয়নি। সময়মতো পরীক্ষা দিতে আসব কী করে, তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম।’’

পরীক্ষার্থীদের এই দুর্ভোগের বিষয়টি অবশ্য গুরুত্ব দিতে চাননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূল ভবনে বসে তিনি বলেন, ‘‘আগেভাগে বাড়ি থেকে বেরোনোটা কোনও ইস্যু নয়। সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া ও নির্ভুল ফল প্রকাশ করা আমাদের কর্তব্য। সেই কর্তব্যে অনড় থেকে প্রশাসন দেখিয়ে দিল, পরীক্ষা নেওয়াই যায়।’’ বিরোধীরা যদিও এটা সরকারের গা জোয়ারি মনোভাবের প্রকাশ বলেই মনে করছেন। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘অতীতে কংগ্রেস, বাম কোনও সরকারই এই রকম জোর করে ধর্মঘটের দিন পরীক্ষা নেয়নি।’’ আর বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের অভিযোগ, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের উপরে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সরকার ছাত্রছাত্রীদের চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। মানবিকতা নেই এদের।’’

কিন্তু শুধু পরীক্ষার্থীরাই তো নন। ধর্মঘটের দিন পরীক্ষা রাখায় ভুগতে হয়েছে যে সব কলেজে পরীক্ষার সিট পড়েছিল সেই সব কলেজ-কর্তৃপক্ষকেও। কী ভাবে? সাধারণত যে দিন পরীক্ষা থাকে সে দিন সকালেই পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে প্রশ্ন পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ধর্মঘটের জন্য বৃহস্পতিবারের প্রশ্ন বুধবার বিকেলেই পাঠানো হয়। এতে বিপাকে পড়েন অনেক কলেজ-কর্তৃপক্ষ। প্রশ্নপত্র আগেভাগে পৌঁছে যাওয়ায় সারা রাত কী ভাবে তা নিরাপদে রাখা হবে, তা ঠিক করতেই কালঘাম ছুটে যায় তাঁদের। গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস কলেজের অধ্যক্ষা অতসী কার্ফা যেমন বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় যখন পডুয়াদের বন্‌ধের দিন পরীক্ষা দিতে আসতে বাধ্য করল, কর্তৃপক্ষ যদি অতই আত্মবিশ্বাসী হলেন, তা হলে প্রশ্নপত্র আগের দিন পাঠানো হল কেন?’’ অতসীদেবীর অভিযোগ, এ বিষয় আগাম বার্তাও দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়।

যদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য সুরঞ্জন দাসের দাবি, বুধবার সকালেই বিভিন্ন কলেজে প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে বলে বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নির্বিঘ্ন পরীক্ষার স্বার্থেই যে আগের দিন প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে, কলেজগুলির তা বোঝা উচিত। আমাদের কাছে এ নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি।’’ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ও দুপুর দু’টো— দুই অর্ধে পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে যাতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়া যায়, সে জন্যই এই ব্যবস্থা বলে জানান উপাচার্য। পরীক্ষার্থীদের বড় অংশই পরীক্ষা দিতে পেরেছেন বলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান। তবে পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে না পেরে থাকলে তাঁর স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেই ব্যবস্থা করা হবে। এমনকী, দু’-একজনের সমস্যা হলে তা-ও বিবেচনা করে দেখা হবে বলে উপাচার্যের আশ্বাস।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় আকারের না হলেও এ দিন রবীন্দ্রভারতী, কল্যাণী, যাদবপুরেও পরীক্ষা ছিল। সর্বত্রই নির্বিঘ্নে পরীক্ষা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য স্নাতক স্তরে গণিত বিভাগের এক জনও পরীক্ষা দিতে আসেননি। বিভাগীয় প্রধান প্রকাশচন্দ্র মালি বলেন, ‘‘৫০-৬০ জন ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা ছিল। কেউই আসেনি।’’ এই পরীক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে ব্যবস্থা করা হবে, নাকি পরের সেমেস্টারের সঙ্গে এঁরা সাপ্লিমেন্টারি দেবেন, সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা। রবীন্দ্রভারতী, যাদবপুর, কল্যাণী অবশ্য ধর্মঘটের দিন পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশিকাই জারি করেছিল। কিন্তু নবান্ন থেকে নির্দেশ মেলার পরে অবস্থান বদলে যায়।

student strike examination mamata bandopadhyay trinamool tmc Congress CPM BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy