Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে আহত ছাত্রছাত্রীরা

আতঙ্ক কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পরে ফের একই দিনে দু-দফার ‘কাঁপুনি’তে শিলিগুড়ি সহ গোটা উত্তরবঙ্গের নানা স্কুলে আশঙ্কার মেঘ দানা বাঁধছে। কারণ, অনেক স্কুলের ভবন পুরানো। আবার অনেক স্কুলের ভবন শক্তপোক্ত হলেও ভূমিকম্পের সময়ে কী করতে হবে, তা নিয়ে প্রশিক্ষণ না থাকায় হুড়োহুড়িতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য মঙ্গলবার ভূকম্পের পরে সব স্কুলেই ভূমিকম্পের সময়ে কী ভাবে, কী করা উচিত তা নিয়ে নিবিড় প্রশিক্ষণের দাবি তুলেছেন অবিভাবকেরা।

ভূমিকম্পের আতঙ্কে রায়গঞ্জে স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে ছাত্রীরা।

ভূমিকম্পের আতঙ্কে রায়গঞ্জে স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে ছাত্রীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০৪:১৪
Share: Save:

আতঙ্ক কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পরে ফের একই দিনে দু-দফার ‘কাঁপুনি’তে শিলিগুড়ি সহ গোটা উত্তরবঙ্গের নানা স্কুলে আশঙ্কার মেঘ দানা বাঁধছে। কারণ, অনেক স্কুলের ভবন পুরানো। আবার অনেক স্কুলের ভবন শক্তপোক্ত হলেও ভূমিকম্পের সময়ে কী করতে হবে, তা নিয়ে প্রশিক্ষণ না থাকায় হুড়োহুড়িতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য মঙ্গলবার ভূকম্পের পরে সব স্কুলেই ভূমিকম্পের সময়ে কী ভাবে, কী করা উচিত তা নিয়ে নিবিড় প্রশিক্ষণের দাবি তুলেছেন অবিভাবকেরা। কারণ, এদিনের ভূমিকম্পে উত্তরবঙ্গে ৫৯ জন ছাত্রছাত্রীর জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে অসুস্থ হয়েছে। আবার পা ভাঙা, বুকে চোট, রেলিং ভেঙে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে হাসপাতালেও ভর্তি আছে ২১ জন।

মালদহের সামসির বৈদ্যনাথপুর হাই স্কুলে মঙ্গলবার ভূমিকম্পের সময় হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি করে নামতে গিয়ে ২০ জন কমবেশি জখম হয়েছে। ওই পড়ুয়াদের সামসি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ১২ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি আট জনের মধ্যে তিন ছাত্রীকে পরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া সানোয়ারা খাতুনের ডান পা ভেঙে গিয়েছে। নবম শ্রেণির দুই ছাত্রী রেশমি খাতুন ও শিবানী মণ্ডল কোমরে আঘাত লেগেছে। এ ছাড়া সামসি হাসপাতালে ভর্তি পড়ুয়াদের মধ্যে রয়েছে দুই ছাত্রী ও তিন ছাত্র। হরিশ্চন্দ্রপুরের একটি স্কুলে তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন সোহনলাল দাস নামে এক শিক্ষক। বেশ কিছু স্কুলে পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়।

কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানের মধ্যে কেঁপে ওঠে গঙ্গারামপুর ব্লকের নন্দপুর অঞ্চলের শয়রাপুর হাইস্কুল। দোতালার সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে রেলিং ভেঙে জখম হয় পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির বেশ কয়েকজন পড়ুয়া। তাদের গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে ১০ জনকে ভর্তি করানো হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী জানান, আহত ছাত্রছাত্রীরা বিপন্মুক্ত। তাদের হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিমাই সরকার জানান, পড়ুয়াদের চাপে সিঁড়ির ইটের গাঁথনির রেলিং ভেঙে পড়ে। শিক্ষক এবং অভিভাবকেরা ছুটে গিয়ে আহত ছাত্রছাত্রীদের উদ্ধার করে।

ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়িতে কিছু স্কুলে ইউনিট টেস্ট বাতিল করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির প্রসন্নদেব মহিলা কলেজের তৃতীয় তলের ভবনে ফাটল ধরেছে। তবে পরীক্ষা হয়েছে আনন্দচন্দ্র কলেজ, ধূপগুড়ি কলেজ এবং ময়নাগুড়ি কলেজে।

আবার স্কুলের দোতলার সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে ১২ জন পড়ুয়া জখম হয়। ইটাহার থানার কচুয়া এলাকার এনটিবিকে হাইমাদ্রাসার ওই জখমরা সকলেই পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির পড়ুয়া। তাদের মধ্যে ৪ জন ছাত্রী রয়েছে। জখমদের মধ্যে সালেমা খাতুন নামে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ ও ইটাহার ব্লকের সমস্ত হাইস্কুল, প্রাথমিক স্কুল ও কলেজের পড়ুয়া, শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়ারা ক্লাসরুম ও বিভিন্ন ঘর থেকে বার হয়ে খোলা আকাশের নীচে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। বাইরে বেরোতে গিয়ে কেউ পা পিছলে পড়ে যায়। কেউ টেবিলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে জখম হয়। কেউ আবার আতঙ্কে মাঠে শুয়ে পড়ে। ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২ স্কুল ছাত্র। হাসপাতাল সূত্রের খবর, দুই জনের নাম মোবারক হোসেন এবং রিয়া সাহা। মাথাভাঙা গার্লস হাইস্কুলের ষষ্ট শ্রেণির ছাত্রী সেঁজুতি রায় জখম হয়েছে। অন্য দিকে, জেনকিন্স হাইস্কুলের দোতলার তিনটি ঘরের কিছু অংশ ধসে গিয়েছে। আপাতত ওই ঘরগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কোচবিহার জেনকিন্স হাইস্কুলে দোতলার দুটি ঘরের ছাদের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। একটি ঘরের সামনের খুটির কিছু অংশ ধসে পড়ে। ঘর তিনটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুনীতি অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষিকা মণিদীপা নন্দীবিশ্বাস জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সবাই ধীরে ধীরে বাইরে বার হয়। পরে আবার স্কুল হয়েছে। ভুমিকম্পে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে মালদহ জেলার স্কুল কলেজগুলিতে। ইংরেজবাজারের বহু স্কুলে ছুটি দেওয়া হয়েছে। হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচন্ডী গিরিজা সুন্দরী বিদ্যামন্দিরে ২৫ এপ্রিলের ভুমিকম্পে দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছিল। এদিন তা আরও বড় হয়েছে। স্কুলে নবম, দশম শ্রেণির পরীক্ষা চলছিল। আতঙ্কে পড়ুয়ারা ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।

গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলিতে প্রথম বর্ষের প্রথম পত্রের পরীক্ষা চলছিল। আতঙ্কে পড়ুয়ারা ঘর থেকে বার হওয়ায় কিছুক্ষণ পরীক্ষা বিঘ্নিত হয়। আলিপুরদুয়ার, ইসলামপুর, মালবাজারে একই ছবি দেখা গিয়েছে। মাঠ, স্কুল সামনের রাস্তায় ছাত্রছাত্রীরা। পরে স্কুলগুলি ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। ওদলাবাড়ির একটি ইংরেজি মাধ্যমের বেসরকারি স্কুলের ভবনে ফাটলও দেখা যায়। গজলডোবা উচ্চ বিদ্যালয়, ক্রান্তি দেবীঝোরা বিদ্যালয়েও একাধিক জায়গায় ফাটল তৈরি হয়েছে।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE