E-Paper

কৃতীদের মুখে চাকরিহারারা

সাফল্যের পিছনে স্কুলের অবদানের কথা বলছে ওরা। বলছে, রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীদের কথাও।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৫ ০৭:৩১
এসএসসি ভবনের সামনে চাকরিহারাদের অবস্থান বিক্ষোভ।

এসএসসি ভবনের সামনে চাকরিহারাদের অবস্থান বিক্ষোভ। —ফাইল চিত্র।

সাফল্যের পিছনে স্কুলের অবদানের কথা বলছে ওরা। বলছে, রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীদের কথাও। মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধাতালিকায় প্রথম তিনটি স্থানে থাকা আদৃত, অনুভব, সৌম্য এবং ঈশানী।

মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় রাজ্যে প্রথম উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের ছাত্র আদৃত সরকার। রায়গঞ্জ শহরের বীরনগরের এই বাসিন্দা পেয়েছে ৬৯৬। বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, পদার্থবিজ্ঞান ও ইতিহাসে ১০০ করে এবং জীবনবিজ্ঞান ও ভূগোলে সে পেয়েছে ৯৮। আদৃতের বাবা অমিতকুমার সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের ইপিএফ দফতরে কর্মরত। মা সীমা ঘর সামলান। আদৃতের দিদি অর্পিতা অঙ্কে স্নাতকোত্তরের ছাত্রী। আদৃতের কথায়, “ভাল ফল করব, আশা করেছিলাম। কিন্তু একেবারে রাজ্যে প্রথম হব, অপ্রত্যাশিত ছিল।” অঙ্ক পছন্দের বিষয় হলেও ভবিষ্যতে সে চিকিৎসক হতে চায়। অবসরে গল্পের বই পড়তে, কুইজ় ও অঙ্কের চর্চা করতে ভালবাসে।

সাফল্যের জন্য পরিবার এবং ব্যক্তিগত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি, শুক্রবার স্কুলের অবদানের কথা শোনা গেল এই কৃতীর মুখে। সে বলেছে, “স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখানো পথ ধরেই পড়ুয়ারা পড়াশোনা করে। সেই শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি কিংবা অযোগ্য হওয়ার কারণে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরিচ্যুত হওয়ার ঘটনা কাম্য নয়। স্কুলে যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী না থাকলে পড়াশোনারই ক্ষতি।” রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কালীচরণ সাহার দাবি, “১১৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম আদৃতের কৃতিত্বে আমাদের স্কুল মাধ্যমিকে প্রথম হল। আমরা গর্বিত।”

আদৃতের মতোই চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে অনুভবেরও। ৬৯৪ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় যুগ্ম দ্বিতীয় মালদহ রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের ছাত্র অনুভব বিশ্বাস। ইংরেজবাজার শহরের মহেশমাটির বাসিন্দা ওই ছাত্রের বাবা দিল্লিতে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থায় কর্মরত। মা গৃহবধূ। টিভিতে ক্রিকেট দেখতে এবং গোয়েন্দা গল্পের বই পড়তে পছন্দ করা অনুভব বলেছে, “স্কুলের কাছ থেকে খুব সহযোগিতা পেয়েছি। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি যাওয়া ভীষণ খারাপ ঘটনা।”

৬৯৪ পেয়ে আর এক দ্বিতীয় স্থানাধিকারী বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর হাই স্কুলের সৌম্য পাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে বিজ্ঞানী হতে চায়। সৌম্যর বাবা বেসরকারি সংস্থার কর্মী, মা ঘর সামলান। আদালতের রায়ে শিক্ষকদের চাকরি হারানো নাড়া দিয়েছে এই কৃতী ছাত্রকে। সৌম্যর কথায়, “স্কুলের শিক্ষকদের জন্যই এই সাফল্য পেয়েছি। তাই সেই সব শিক্ষকদের চাকরি নিয়ে টানাপড়েন ভাবায় বইকি!” সৌম্যর স্কুলের আট জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। তার মধ্যে গণিতের দু’জন, রসায়নের এক জন শিক্ষক রয়েছেন। তবে সৌম্য জানিয়েছে, নিজের স্কুলেই সে উচ্চ মাধ্যমিক পড়বে।

৬৯৩ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাঁকুড়ার কোতুলপুরের সরোজবাসিনী বালিকা বিদ্যালয়ের ঈশানী চক্রবর্তী। সে রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে সেরা। আগামীতে পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে বিজ্ঞানী হতে চায় ঈশানী। শিক্ষক দম্পতির কন্যা ঈশানী চাকরিহারা শিক্ষকদের ঘটনায় মর্মাহত। সে বলেছে, “যে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য আমরা সংবর্ধনা পাচ্ছি, তাঁদের অনেকের এই পরিণতি মানা যাচ্ছে না!”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Madhyamik 2025 Bengal SSC Recruitment Case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy