Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ওই ফিরলেন তিনি, চেনা গেল দাড়ি-টাক দেখে

পাখি ফিরে এল নীড়ে! কানাঘুষো ছিল, দাড়ি কামিয়ে নাকি নেপাল পাড়ি দিয়েছেন বিশিষ্ট কাক আঁকিয়ে। আবার একজন নাকি তাঁকে দেখেছিলেন দিল্লি বিমানবন্দরে। শুক্রবার মুহূর্তের দেখায় এটুকু বোঝা গেল, সেই সাদা দাড়ি এখনও আছে। আছে চকচকে টাকও। তাই দেখেই না চেনা গেল শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যকে! আচমকা অজ্ঞাতবাস, সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে ইডি-র বারবার তলব ও তাঁর হাজির না হওয়া, শেষে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের হুমকি গত ক’দিনে কেষ্টপুর খাল দিয়ে বহু জল বয়ে যাবার পর শেষমেশ সল্টলেকের বাসাতেই ‘লাইভ’ দেখা গেল শুভাবাবুর প্রত্যাবর্তন।

গাড়ি থেকে নেমে প্রায় লাফিয়ে বাড়ি ঢোকার সময়।—নিজস্ব চিত্র।

গাড়ি থেকে নেমে প্রায় লাফিয়ে বাড়ি ঢোকার সময়।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৮
Share: Save:

পাখি ফিরে এল নীড়ে!

কানাঘুষো ছিল, দাড়ি কামিয়ে নাকি নেপাল পাড়ি দিয়েছেন বিশিষ্ট কাক আঁকিয়ে। আবার একজন নাকি তাঁকে দেখেছিলেন দিল্লি বিমানবন্দরে। শুক্রবার মুহূর্তের দেখায় এটুকু বোঝা গেল, সেই সাদা দাড়ি এখনও আছে। আছে চকচকে টাকও।

তাই দেখেই না চেনা গেল শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যকে!

আচমকা অজ্ঞাতবাস, সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে ইডি-র বারবার তলব ও তাঁর হাজির না হওয়া, শেষে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের হুমকি গত ক’দিনে কেষ্টপুর খাল দিয়ে বহু জল বয়ে যাবার পর শেষমেশ সল্টলেকের বাসাতেই ‘লাইভ’ দেখা গেল শুভাবাবুর প্রত্যাবর্তন।

আর সেই মাহেন্দ্রক্ষণে বাড়িতে-গাড়িতে কী অদ্ভুত সমন্বয়!

শুক্রবার বিকেল সওয়া ৫টা নাগাদ সল্টলেকের বিএইচ ব্লকের ১৬৭ নম্বর বাড়ির সামনে থামল ছাইরঙা একটি ‘সেডান’ গাড়ি। গাড়ির দরজা এবং বাড়ির দরজা খুলল একই সঙ্গে। গাড়ি থেকে নেমে প্রায় লাফিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেলেন হলদে-সবুজ পাঞ্জাবি পরা ছোটখাটো চেহারার এক বৃ্দ্ধ। তিনি ঢুকতেই দমাস করে বন্ধ হয়ে গেল বাড়ির দরজা। ওই তখনই টাক আর দাড়ি দেখে চিনে নেওয়া গেল তাঁকে।

কয়েক সেকেন্ড মাত্র চোখের দেখা। তার মধ্যেই সাংবাদিকেরা প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, “কোথায় গিয়েছিলেন? ইডি কি আপনাকে ডেকেছে? বিশিষ্টদের মিছিলে গেলেন না কেন?” উত্তর তো দূর অস্ৎ, সংবাদমাধ্যমের দিকে ঘাড়ও ঘোরাননি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ কাক-শিল্পী।

কোথায় গিয়েছিলেন শুভাবাবু?

বিএইচ ব্লকের কোনও কোনও বাসিন্দা বলছেন, এ ক’দিন বাড়িতে শুভাপ্রসন্নর দেখা মেলেনি মানেই তিনি উধাও হয়েছিলেন, এমন নয়। হয়তো বাড়িতেই ছিলেন, কিংবা শহরেই কোনও পরিচিতের বাড়িতে। এমনকী গোয়েন্দাদের একাংশও বলছেন, মঙ্গলবার ভোরেই নাকি বাড়ি ছেড়ে শুভাপ্রসন্ন চলে গিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতায় এক পরিচিত নেতার বাড়িতে। নিজের বাড়ি ফেরেন বুধবার গভীর রাতে। বৃহস্পতিবারেও ছিল একই রুটিন।

তবে অন্য একটি গোয়েন্দা-সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার সত্যি সত্যিই দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন শুভা। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ওই দিন ভোর ৬টা ২০ মিনিটে ইন্ডিগোর দিল্লিগামী বিমান ধরেন তিনি। বসেছিলেন ডান দিকের প্রথম সারির মাঝের আসনে। ওই উড়ানে শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের নামে কাটা টিকিটে একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার সেই নম্বরে ফোন করা হলে এক ব্যক্তি তা তোলেন। শুভাপ্রসন্নর সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ায় উত্তর মেলে, “উনি বাইরে গিয়েছেন। কোনও বার্তা থাকলে দিতে পারেন।” এর পরেই লাইন কেটে যায়।

বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সল্টলেকের বাড়ির সামনে দিনভর হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেও আর দেখা মেলেনি কাক-শিল্পীর। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বাড়ির কলিং বেল টিপলে একতলার দরজা ফাঁক করে দেখা দিয়েছিল একটি মুখ (ইডি ও সিবিআই অফিসে এই ভদ্রলোকই শুভাপ্রসন্নর হয়ে তথ্য জমা দিতে যেতেন)। একই সঙ্গে দোতলার দরজা খুলে উঁকি মেরেছিলেন এক মহিলা। কিন্তু শুভাপ্রসন্নর সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দু’টো দরজা সশব্দে বন্ধ হয়ে যায়।

খানিকক্ষণ নিস্তব্ধ। তার পর বাড়ির ভিতর থেকে কুকুরের ডাক ছাড়া আর কোনও উত্তর শোনা যায়নি।

শুভাপ্রসন্নর বাড়ি ফেরার কথা জেনেছেন ইডি অফিসারেরাও। তাঁরা কি ফের তলবের নোটিস পাঠাবেন? ইডি সূত্রের খবর, শুভাপ্রসন্নর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দিল্লিতে কথা বলা হচ্ছে। প্রয়োজনে কোর্টে যাবে ইডি। শিল্পীর জমা দেওয়া নথিও খতিয়ে দেখা চলছে।

তবু একটা কথা পরিষ্কার হলেই ভাল হতো। সুকুমার রায়ের ‘গেছোদাদা’র কথা নতুন করে মনে পড়িয়ে সোমবার থেকে শিল্পী ছিলেন কোথায়? কে দেবে উত্তর! এ দিন বারবার ফোন করা হয়েছে শুভাপ্রসন্নর মোবাইল ও সল্টলেকের বাড়ির ল্যান্ডলাইনে। কেউ ধরেননি। এসএমএস পাঠিয়েও জবাব মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE